May 18, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular রোজনামচা

আজও নিখোঁজ এই ৩ সৌদি রাজপুত্র! 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমসঃ

সৌদি রাজতন্ত্রের সমালোচনা করায় ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইউরোপে বসবাসরত তিন রাজপুত্র রহস্যজনক ভাবে আজও নিখোঁজ। তাদের প্রত্যেককেই অপহরণ করে সেদেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রমাণও রয়েছে। কিন্তু তারপরও তাদের সম্পর্কে আর কিছুই জানা যায়নি। এরা হলেন……

১. সুলতান বিন তুর্কি বিন আব্দুল আজিজ
২০০৩ সালের ১২ জুন সকালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের বাইরে একটি প্রাসাদে ঢুকতে দেখা যায় সৌদি রাজপুত্র সুলতান বিন তুর্কি বিন আব্দুলআজিজকে। প্রাসাদটি ছিল তার আত্মীয় প্রয়াত সৌদি বাদশাহ ফাহাদের। ফাহাদের ছেলে রাজপুত্র আবদুল আজিজ বিন ফাহাদের সঙ্গে সকালের নাস্তা খেতে প্রাসাদে যান সুলতান। একসময়ে সমালোচক সুলতানকে সৌদি আরবে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন আব্দুল আজিজ। সুলতান ফিরে যেতে অস্বীকার করলে তখন আব্দুল আজিজ একটি ফোন করতে যান।

তখন ওই কক্ষে হাজির থাকা দ্বিতীয় ব্যক্তি, সৌদি আরবের ইসলাম ধর্ম বিষয়কমন্ত্রী শেখ সালেহ আল-শেখ কক্ষ ছেড়ে চলে যান। কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখোশ পরা কয়েকজন ঘরে ঢোকে এবং সুলতানকে অজ্ঞান করে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়। অজ্ঞান অবস্থায় সুলতানকে জেনেভা বিমানবন্দরে নেওয়া হয় এবং সেখানে অপেক্ষারত একটি বিমানে ওঠানো হয় তাকে। অনেক বছর পর সুইজারল্যান্ডের একটি আদালতে ঠিক এভাবেই সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন সুলতান। পরে জেনেভার হোটেলে থাকা সুলতানের সঙ্গীদের জানানো হয় যে, সুলতানকে রিয়াদ নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাই তাদের আর কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু সুলতান কী এমন করেছিলেন যে তাকে এভাবে অপহরণ করতে হলো?

সৌদি আরবে ফেরার পর সুলতানের ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা জানা না গেলেও ধারণা করা হয় তাকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়। দীর্ঘসময় কারাগারে আটক থাকার পর সুলতানের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে চিকিৎসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে সম্মত হয় রাজপরিবার। ২০১০ সালে আমেরিকা গিয়ে সুইস আদালতে আব্দুল আজিজ বিন ফাহাদ এবং শেখ সালেহ আল-শেখের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করেন সুলতান। প্রথমবার কোনও সৌদি রাজপরিবারের সদস্যের আরেক রাজপরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য ইউরোপ যান সুলতান। ইউরোপে পৌঁছানোর পর থেকেই সৌদি সরকারের সমালোচনা করে বিভিন্ন ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে শুরু করেন সুলতান। এই সব সাক্ষাৎকারে রাজপরিবারের সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে বলতে থাকেন তিনি। এরপর ২০১৬ সালে সুলতান এবং তার ১৮ জন সফরসঙ্গীকে প্যারিস থেকে কায়রো নিয়ে যাওয়া হবে বলে একটি বিমানে উঠিয়ে রিয়াদে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর থেকে আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি সুলতানের।

২. তুর্কি বিন বান্দার
রাজপুত্র তুর্কি বিন বান্দার একসময় সৌদি পুলিশের একজন মেজর ছিলেন। তিনি রাজপরিবারের সদস্যদের পুলিশি নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু উত্তরাধিকার দ্বন্দ্বে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়লে একসময় কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।

জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ২০১২ সালে প্যারিসে চলে যান তিনি। সেখানে গিয়েই সৌদি আরবের সংস্কার চেয়ে ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট করা শুরু করেন তিনি। রাজপুত্র সুলতানের মতো তুর্কিকেও প্রথমে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে তুর্কির মন গলাতে ব্যর্থ হয় সৌদির সরকারি কর্তারা। ২০১৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট করে যান তুর্কি। সেই বছরের শেষের দিকে হঠাৎ উধাও হয়ে যান তিনি। তারপর এখন পর্যন্ত রাজপুত্র তুর্কি বিন বান্দারের আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।

৩. সউদ বিন সাইফ আল-নাসের
রাজপুত্র তুর্কি নিখোঁজ হওয়ার প্রায় কাছাকাছি সময় একই ধরনের পরিণতি হয় আরেক রাজপুত্র সউদ বিন সাইফ আল-নাসেরের। ইউরোপে বিলাসবহুল জীবনযাপনে উৎসাহী ছিলেন এই রাজপুত্র। ২০১৪ সাল থেকে টুইটারে সৌদি রাজতন্ত্রকে কটাক্ষ করে পোস্ট করতে শুরু করেন তিনি। পরের বছর বাদশাহ সালমানকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে লেখা অজ্ঞাতনামা এক সৌদি রাজপুত্রের দুটি চিঠি ফাঁস হয়। তার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন সউদ। এক টুইটে চিঠি দুটির বিষয়বস্তুকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে সৌদি জনগণকে আহ্বান জানান তিনি। এর কিছুদিন পর থেকে তার টুইটার অ্যাকাউন্টটি নিরব হয়ে যায়।

জার্মানিতে পালিয়ে যাওয়া আরেক সৌদি রাজপুত্র খালেদ বিন ফারহানের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক বৈঠকের কথা বলে কৌশলে সউদকে রিয়াদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, সৌদি রাজতন্ত্রের সমালোচনা করা আমরা চারজনই ছিলাম ইউরোপে, যাদের মধ্যে তিনজনকেই অপহরণ করা হয়েছে। রাজপুত্র খালেদ আশঙ্কা করছেন অল্প সময়ের মধ্যেই হয়তো তাকেও অপহরণ করা হতে পারে।

 

Related Posts

Leave a Reply