এই উপকার জানলে এবার থেকে কাত হয়েই ঘুমাবেন
কলকাতা টাইমস :
একেক মানুষ একেকভাবে শুয়ে থাকতে বা ঘুমাতে পছন্দ করেন। বিছানায় বুক দিয়ে বা পিঠ দিয়ে শোয়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে অধিকাংশ মানুষের। তবে এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যেকোনো এক দিকে কাত হয়ে শোয়া স্বাস্থ্যের জন্যে অনেক বেশি উপাকারী। মস্তিষ্কের বর্জ্য দূর হয় এতে। শুধু তাই নয়, এতে আলঝেইমার, পারকিনসন এবং অন্যান্য নিউরোলজিক্যাল রোগের ঝুঁকি কমে আসে।
মস্তিষ্কের একটি অংশ দ্রবীভূত ক্ষতিকর পানি ও রাসায়নিক পদার্থ পরিষ্কার করে। জটিল এই অংশকে বলা হয় গ্লিমফ্যাটিক পাথওয়ে। বিশেষজ্ঞরা এমআরআই প্রক্রিয়ায় এই অংশের কার্যক্রম পরীক্ষা করেন।
দেখা গেছে, এক কাত হয়ে শোয়ার সময় মস্তিষ্কের গ্লিমফ্যাটিক পাথওয়ে সবচেয়ে বেশি ময়লা পরিষ্কার করে থাকে। মস্তিষ্কের এসব বর্জ্য আলঝেইমারসহ অন্যান্য নিউরোলজিক্যাল রোগ সৃষ্টির ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
ইঁদুরের মস্তিষ্কের গ্লিমফ্যাটিক পাথওয়ের কার্যক্রম পরীক্ষা করতে কয়েক বছর ধরে এমআরআই করে যাচ্ছেন। দেখা গেছে, সেরেব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড (সিএসএফ) মস্তিষ্কে ফিল্টার হয় এবং ইন্টারস্টিশিয়াল ফ্লুইডের (আইএসএফ) সঙ্গে সমন্বয় করে মস্তিষ্কের বর্জ্য পরিষ্কার করে।
কাত হয়ে শোয়ার ফলে গ্লিমফ্যাটিক পাথওয়ে সর্বাধিক সক্রিয় থাকে। বর্জ্য পদার্থে রয়েছে অ্যামইলয়িড বেটা এবং টাও প্রোটিন। এগুলো এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যা মস্তিষ্কের বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
জার্নাল অব নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত নতুন এই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ইঁদুরকে উপুর করে বা বুকের ওপর, চিত করে বা পিঠের ওপর এবং এক কাত করে শুইয়ে মস্তিষ্কের এমআরআই করা হয়। তিন অবস্থার মধ্যে কাত হয়ে শোয়ার সময় গ্লিমফ্যাটিক পাথওয়ে কাজ করতে থাকে সবচেয়ে বেশি। এ তথ্য দেন স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের অ্যানেস্থেসিয়োলজি অ্যান্ড রেডিওলজি বিভাগের প্রফেসর হেলেন বেনভেনিস্তে।
হেলেন এবং তার সহকর্মী অ্যানেস্থেসিয়োলজি অ্যান্ড রেডিওলজি বিভাগের সহকারী প্রফেসর হেডক লি শোয়ার সবচেয়ে নিরাপদ ভঙ্গির বিষয়টি পরীক্ষা করেন। এ ছাড়া ইউনিভার্সিটি অব রোচেস্টারের বিশেষজ্ঞ লুলু জি, রাশিদ ডিয়ানে এবং মাইকেন নেডারগার্ড এমআরআই ডেটা সংগ্রহ করেন ফ্লুয়োরেন্সেস মাইক্রোস্কপি এবং রেডিওঅ্যাক্টিভ ট্রেসারের মাধ্যমে। মজার বিষয় হলো, প্রকৃতিতে প্রাণীরা মস্তিষ্কের যত্নে কাত হয়ে শোয়াতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। বহু প্রাণী কাত হয়ে শুয়ে থাকে। আবার মানুষের মধ্যেও কাত হয়ে শোয়ার প্রবণতা বেশি।
এ পরীক্ষায় পরিষ্কার হয় যে, শোয়াল ভঙ্গি দেহের জৈবিক প্রক্রিয়ায় প্রভাববিস্তার করে। গভীর ও স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্যে তাই শোয়ার সঠিক অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এ কারণেই ঘুমের ব্যাঘাতের কারণে স্মৃতিশক্তি নষ্ট হওয়া বা আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
স্টোনি ব্রুক, ইউনিভার্সিটি অব রোচেস্টার এংব নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা এ গবেষণাকর্মে অংশ নেন।