May 16, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

নিঃশব্দে আপনার শরীরে জাঁকিয়ে বসে প্রাণঘাতী এই রোগ 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস : 

কিছু কিছু অসুখ আছে যেগুলো আগেভাগে তাদের উপস্থিতি জানান দেয়। আবার এমন কিছু অসুখও আছে যেগুলো নিঃশব্দে আপনার শরীরে জাঁকিয়ে বসে, অথচ আপনি মোটেও টের পান না। ‘পোর্টাল হাইপারটেনশন’ অসুখটাও খুব একটা পরিচিত নয়। নামটাও বেশ খটমটে। তবে পেটের ভিতরের এই অসুখের সময়মতো চিকিত্‌সা করানো জরুরি।

পেটের ভিতরে রক্তক্ষরণ হলে আমার-আপনার পক্ষে বোঝা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে তা বলে কী উপায় একেবারেই নেই! স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা যেমন জরুরি, তেমনই প্রয়োজন নিয়মিত ডাক্তারি চেক-আপের। আর দরকার কিছু সতর্কতারও। কি বলছেন গ্যাসট্রোএনট্রোলজি অ্যান্ড হেপাটোলজিরা।  

রোগের বিস্তারিত, লক্ষণ ও সমাধান

পোর্টাল ভেন লিভারের মধ্যে দিয়ে যায়। দু’টি আলাদা আলাদা শিরা জুড়ে পোর্টাল ভেন তৈরি হয়। এ দু’টি হল: স্প্লিনিক ভেন আর মেসেন্ট্রিক ভেন। এই দু’য়ের সমন্বয়ে তৈরি পোর্টাল ভেন লিভারের মধ্যে দিয়ে ইনটেস্টিনাল ব্লাড বহন করে। লিভারের কোনও জটিল অবস্থায় পোর্টাল ভেনের রক্তসঞ্চালন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে তৈরি হয় হাইপারটেনশন। এই অবস্থারই ডাক্তারি পরিভাষায় নাম পোর্টাল হাইপারটেনশন।

এর কারণ মূলত দু’টি: সিরোসিস অফ লিভার হলে এরকম হতে পারে। এছাড়া একস্ট্রা হেপাটিক পোর্টাল অবস্ট্রাকশন বা লিভারের বাইরে কোনও পোর্টাল অবস্ট্রাকশন হলেও এই রক্তসঞ্চালন বাধা পেতে পারে। পোর্টাল হাইপারটেনশনের ফলে স্প্লিন বড় হয়ে যেতে পারে। পেটের ভিতরে জলও জমতে পারে। তবে গুরুতর অবস্থায় পেটের ভিতরে রক্তক্ষরণ হতে পারে। সময়মতো চিকিত্‌সা না করালে এটি কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই প্রাণঘাতী।

পোর্টাল হাইপারটেনশন কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগে থেকে বোঝা যায় না। ক্রমাগত রক্তপাতের ফলে হিমোগ্লোবিন কমে গিয়ে অ্যানিমিয়া হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগী অ্যানিমিয়ার লক্ষণ নিয়ে ডাক্তারের কাছে এলে, তখন বোঝা যায় যে তিনি এই অসুখের শিকার! পেটে পানি জমে পেট ফুলে যেতে পারে। পেটের ভিতরে ভারীবোধ হতে পারে। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তবমি ও কালো স্টুল হতে পারে। জন্ডিসও হতে পারে।

এরকম উপসর্গ নিয়ে ডাক্তারের কাছে এলে রোগীকে পেটের আলট্রাসাউন্ড করতে বলা হতে পারে। কখনও কখনও পেটের সি.টি স্ক্যান ও এন্ডোস্কোপিও করতে হতে পারে। প্রাথমিকভাবে এই পরীক্ষাগুলোই করতে বলা হয়। এরপরে ব্লাড টেস্ট ও লিভার ফাংশন টেস্টের প্রয়োজন হতে পারে। আসলে, যখন লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে তখন আর প্রাথমিক অবস্থা থাকে না। তখন অসুখ অনেকটাই রোগীর শরীরে জাঁকিয়ে বসেছে।

পোর্টাল হাইপারটেনশন প্রতিরোধ করার আলাদা করে সেরকম কোনও উপায় নেই। তবে সিরোসিস অফ লিভার প্রতিরোধ করার জন্য অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। যদি কেউ অত্যধিক মদ্যপান করেন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে লিভার ফাংশন টেস্ট করিয়ে রাখতে পারেন। মোটের উপর স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এক্ষেত্রে জরুরি। তবে একস্ট্রা হেপাটিক অবস্ট্রাকশনের সেরকম কোনও প্রতিরোধকারী উপায় এখনও খুঁজে বের করা যায় নি। সাধারণত মাঝবয়সিদের এই সমস্যা হয়। ছোট বাচ্চাদের এধরনের সমস্যা অত্যন্ত দুর্লভ। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিত্‌সা করা হয়।

পেটে পানি জমলে একধরনের চিকিত্‌সা হয়। আবার ব্লিডিং হলে এন্ডোস্কোপি করে দেখে নিয়ে ব্লিডিং বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়। তবে অনেকসময় ব্লিডিং বন্ধ করা গেলেও ভবিষ্যতে আবার রক্তপাতের সম্ভাবনা থেকেই যায়। এক্ষেত্রে বিটা ব্লকার দেওয়া হয়, যাতে সম্ভাব্য রক্তপাত প্রতিরোধ করা যায়। এগুলোর কোনওটাতেই কাজ না হলে শান্ট সার্জারির প্রয়োজন হয়। আর সিরোসিস অফ লিভারে অনেকসময় অসুখের গুরুত্ব বুঝে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনের প্রয়োজন হতে পারে। আর চিকিত্‌সা চলাকালীন মোটের উপর হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলা জরুরি। অ্যালকোহল পুরো বন্ধ রাখবেন। ব্যালেন্সড ডায়েট খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

মনে রাখবেন, অত্যধিক মদ্যপান করলে আগে থেকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। অ্যালকোহল লিভারের ক্ষতি করে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শে জরুরি টেস্ট করিয়ে নিন। মোটের উপর স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন জরুরি। তাহলে লিভারের অনেক সমস্যাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। পোর্টাল হাইপারটেনশন একদিনে তৈরি হয়না। ছোট বাচ্চাদের এ সমস্যা প্রায় হয় না বললেই চলে। সাধারণত মাঝবয়সিরাই এই অসুখের শিকার হন।

Related Posts

Leave a Reply