May 20, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular ব্যবসা ও প্রযুক্তি

এমন কিছু যা এই সন্ন্যাসীকে পাল্টে দিল ধনকুবেরে !

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :

রপর কয়েকটি দুঃখজনক ঘটনা অ্যান্ডি পাডিকোম্বের জীবন সম্পূর্ণভাবে বদলে দেয়। তাঁর বয়স যখন ২২, একদিন লন্ডনের একটি পানশালার বাইরে বন্ধুদের নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এ সময় এক মদ্যপ গাড়িচালক তাঁর বন্ধুদের ওপর গাড়ি তুলে দিলে দুজন মারা যান। ঘটনার কয়েক মাস পরই তাঁর সেবান মারা যান সাইকেল দুর্ঘটনায়, আর তার কিছুদিন পর অপারেশনের সময় মারা যান তাঁর প্রাক্তন বান্ধবী। সে সময় তিনি অ্যান্ডি স্পোর্টস সায়েন্সের ওপর পড়াশোনা করছিলেন। টানা কয়েকটি ঘটনার শোক সইতে না পেরে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। জীবন পুরোপুরি পরিবর্তন করার জন্য তিনি হিমালয়ে গিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষু হওয়ার দীক্ষা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন।

পরের ১০ বছর ভিক্ষু হিসেবে জীবন যাপন করেন অ্যান্ডি। ভ্রমণ করেন এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে, কখনো কখনো দিনে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্তও ধ্যান করতেন। তিনি বলেন, সব কিছু আবার সহজভাবে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে ধ্যান তাঁকে সহায়তা করেছে। ধ্যান আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এনেছে, নিজের বিষয়ে কম চিন্তা করে অন্যদের সুখের জন্য চিন্তা করতে শিখিয়েছে এটি।

তবে তাঁর বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যরা শুরুর দিকে তাঁকে নিয়ে কিছুটা চিন্তিত ও ভীত ছিল। অ্যান্ডি বলেন, তাদের একজনও জানত না যে কিভাবে এ বিষয়টি সামাল দেবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রত্যেকে সমর্থন ও সাহস দিয়ে গেছে।

২০০৫ সালে ব্রিটেনে ফিরে এসে ধ্যান বা মেডিটেশনে সহায়তা করার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেন অ্যান্ডি। কিন্তু ব্রিটেনে সে সময় মেডিটেশনের তেমন একটা চল ছিল না। লন্ডনে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মেডিটেশনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন অ্যান্ডি, যেখানে অতিরিক্ত কাজের চাপে থাকা পেশাজীবীদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সাহায্য করার চেষ্টা করতেন তিনি। বর্তমানে তিনি ও সহপ্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড পিয়েরসন জনপ্রিয় চিকিৎসাবিষয়ক অ্যাপ হেডস্পেস পরিচালনা করেন, যেটি বিশ্বজুড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি বার ডাউনলোড করা হয়েছে; যাদের বার্ষিক আয় ১০ কোটি ডলারেরও বেশি বলে ধারণা করা হয়।

৩৮ বছর বয়সী রিচার্ড ২০০৫ সালে ছিলেন একজন পেশাজীবী, যিনি জীবন ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সহায়তা নিতে অ্যান্ডির কাছে গিয়েছিলেন। রিচার্ড বলেন, ‘অ্যান্ডির সঙ্গে যখন আমার পরিচয় হয়, তখন আমি বেশ মরিয়া ছিলাম। আমি সামাজিকভাবে টানা দুশ্চিন্তায় ভুগতাম, যেটি ভীষণ সমস্যা তৈরি করত। আমার বন্ধুবান্ধব ছিল না, যাদের সঙ্গে ওই সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব হতো। প্রথম সেশনের পরই আমি বুঝতে পারি, আমার মাথায় আসলে কতগুলো চিন্তা আছে এবং আমার জীবন কতটা ছন্নছাড়া। আমার যে ওই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার রাস্তা রয়েছে, তা বুঝতে পেরেও আমি বেশ উত্তেজিত ছিলাম।’

রিচার্ড যখন বুঝতে পারেন যে ধ্যান করে কী পরিমাণ লাভ হয়েছে তাঁর, তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে অ্যান্ডির সঙ্গে এ ব্যবসায় যোগ দিতে। ২০১০ সালের মধ্যে ব্রিটেনের বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করা শুরু করেন তাঁরা। ধ্যানের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করার পাশাপাশি দলগতভাবে মেডিটেশনের সেশনও পরিচালনা করেন তাঁরা। আয়ের টাকা এবং বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া সাহায্য নিয়ে সে বছর হেডস্পেস অ্যাপের প্রথম ভার্সন বাজারে ছাড়েন তাঁরা; যেটিতে ১০ মিনিট দীর্ঘ ধ্যানের নির্দেশাবলি সংযুক্ত বেশ কিছু ফাইল ছিল। ব্যবসার শুরুতেই ভাগ্য সহায় হয় তাঁদের। ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকা এক শনিবারে তাঁদের প্রতিটি কপির সঙ্গে হেডস্পেসের একটি করে পুস্তিকা সংযোজন করে। ভার্জিন আটলান্টিক এয়ারলাইনসও হেডস্পেসের মেডিটেশনের কিছু বুপকরণ তাদের প্লেনের বিনোদন বিভাগে যুক্ত করে। যার ফলে অ্যাপ দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় এবং ডাউনলোডের হার বেড়ে যায়। বর্তমানে এই অ্যাপ ব্যবহার করতে মাসে প্রায় ১০ পাউন্ড অর্থ ব্যয় করতে হয়। অ্যাপে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হয়েছে অ্যান্ডির কণ্ঠ ব্যবহার করে।

শুরুতে নিজেদের অর্থায়নে পরিচালিত হলেও ২০১৪ সাল থেকে ব্যবসা ও অ্যাপের কার্যক্রম বড় করার উদ্দেশ্যে বাইরের বিনিয়োগ গ্রহণ করা শুরু করে হেডস্পেস। বর্তমানে সাড়ে সাত কোটি ডলার লগ্নি করা রয়েছে হেডস্পেসে, যদিও বেশির ভাগ মালিকানা অ্যান্ডি ও রিচার্ডের হাতেই। শুরুতে অ্যান্ডি ও রিচার্ড দুজনই ব্যবসার সব অংশের দেখভালই করতেন, কিন্তু ব্যবসা বড় হওয়ার পর থেকে তাঁরা কাজ ভাগ করে নেন। প্রধান নির্বাহী হয়ে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও ৩০০ কর্মীর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেন রিচার্ড। অ্যান্ডির মূল কাজ এখনো অ্যাপের সম্প্রসারণের বিষয় চিন্তা করা এবং নেপথ্য কণ্ঠ দেওয়া।

হেডস্পেস বর্তমানে শুধু একটি অ্যাপ নয়। তাদের ৩০০-র বেশি ব্যাবসায়িক ক্লায়েন্ট রয়েছে যাদের মধ্যে রয়েছে গুগল, লিঙ্কড ইন, জেনারেল ইলেকট্রিক ও ইউনিলিভার। এসব প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও কর্মীদের ধ্যান করতে সাহায্য করে তারা। হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ডসহ আমেরিকার বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রিটনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন গবেষণায় সহায়তা করে তারা।

Related Posts

Leave a Reply