May 22, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular ব্যবসা ও প্রযুক্তি

২০ টাকা প্রতিদিন থেকে ৩.৫ কোটির মালিক 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে সঙ্গে ছিল এক জোড়া হাওয়াই চটি ও এক জোড়া জামাকাপড়। জমানো টাকা গুনে দেখলেন সাকুল্যে তিনশো! এইটুকুই সম্বল করে মাত্র পনেরো বছর বয়সে দারিদ্রের কারণে বাড়ি ছাড়েন তিনি।

দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই যে কঠিন হবে, তা জানতেন। কিন্তু বেঁচে থাকার যুদ্ধ যে এত দুর্বিসহ হবে, তা বোধ হয় ভাবতে পারেননি আজকের বিজনেস টাইকুন চিনু কালা। শুধু ব্যবসা নয়, চিনুর খ্যাতি রয়েছে ম়ডেলিংয়েও। ভারতের বাহিরেও অলঙ্কারের দুনিয়ায় চিনুর ব্র্যান্ডের নাম ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও।

এক দিন মাত্র ৩০০ টাকা পকেটে ছিল যাঁর, আজ প্রায় ৭.৫ কোটির বাৎসরিক লাভের মুখ দেখে তারই সংস্থা। নিজের রুটিরুজি তো বটেই, সঙ্গে আরও অনেক মানুষের অন্নসংস্থানের ভরসা হয়ে উঠেছেন ‘রুবানস অ্যাকসেসারিজ’-এর কর্ণধার বেঙ্গালুরুর চিনু। এই লম্বা পথ পাড়ি দেওয়ার মাঝের দিনগুলো কেমন ছিল তার?

বাড়ি থেকে বেরনোর সময় তেমন কোনও প্রথাগত শিক্ষা বা স্কুল যাওয়ার অভ্যাস ছিল না তার। তবু মনে ছিল অদম্য জোর। নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে— এই লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল। তাই মাত্র পনেরোতেই একটি সংস্থার হয়ে ঘরে ঘরে ঘুরে ছুরি-কাঁচি, কাপ-ডিশ ও ঘরের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করতে শুরু করেন চিনু।

রাতে থাকার জন্য যে ডরমেটরি জুটিয়েছিলেন, তাতে প্রতি রাতে ঘুমনোর জন্য ভাড়া গুনতে হত কুড়ি টাকা করে। সেই সময়ে চিনুর কাছে সেই কুড়ি টাকা জোটানোও অসাধ্য হয়ে পড়ত এক দিন কাজে না গেলে। সারা দিন খাটনির পর হাতে থাকতে কোনও দিন কুড়ি, কোনও দিন ষাট টাকা। ডরমেটরির ভাড়া না দিতে পারলে রাস্তাতেই কাটাতেন।

কাজের জায়গায় কঠোর শ্রম ও নিয়মানুবর্তিতা দেখিয়ে এক বছরের মধ্যেই ‘সুপারভাইজার’ পদে উন্নীত হন তিনি। বেতনও বাড়ে কিছুটা। তখন থেকেই একটু একটু করে নিজের ব্যবসা তৈরির স্বপ্ন বুনতে থাকেন চিনু। কয়েক বছর ওই সংস্থায় কাজ করে কিছু টাকা জমিয়ে সাহস করে এক দিন ইন্টারভিউ দেন এক রেস্তোরাঁয়।

চিনুর জেদ ও কিছু করে দেখানোর মানসিকতা পছন্দ হয় রেস্তোরাঁ মালিকের। জুটে যায় রেস্তরাঁকর্মীর কাজ। তবে এই কাজ সন্ধ্যা ছ’টা থেকে রাত ১১টা অবধি। তাই সেলসের চাকরিটাও ছাড়েন না চিনু। সকালে ঘরে ঘরে ঘুরে বিক্রি সেরে সন্ধে ছ’টার আগে পৌঁছে যেতেন রেস্তোরাঁ। তারপর কাজ শেষে স্রেফ ঘুমোতে ফিরতেন ডরমেটরিতে।

কয়েক বছর এমন অমানুষিক পরিশ্রম করার মধ্যেই জীবনের আর এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেন চিনু। ২০০৪ সালে বিয়ে করলেন দীর্ঘ দিনের বন্ধু ও প্রেমিক অমিত কালাকে। ছাড়েন ছোটবেলার শহর বেঙ্গালুরু। এর পর অমিতের জোরাজুরিতেই নাম দেন একটি বেসরকারি চ্যানেলের রিয়েলিটি শোয়ে।

ঘরে-বাইরে সামাল দেওয়া গৃহিণীদের শ্রম ও নিষ্ঠাকে কুর্ণিশ জানানো ও নারীশক্তির চমকপ্রদ ঘটনাগুলোকে সকলের সামনে তুলে আনাই ছিল সেই রিয়েলিটি শোয়ের লক্ষ্য। চিনু এই শোয়ের চূড়ান্ত পর্ব পর্যন্ত পৌঁছন। তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি নিজেও। যদিও পুঁথিগত শিক্ষা না থাকার ভয় তখনও তাড়া করে বেড়াত চিনুকে।

এই রিয়েলিটি শো-ই একপ্রকার ‘আশীর্বাদ’ হয়ে আসে চিনুর জীবনে। একের পর এক মডেলিংয়ের অফার আসতে থাকে তার কাছে। নানা বিষয়ের মডেলিং করলেও ফ্যাশন জুয়েলারির প্রতি তার একটা আগ্রহ ছিলই। এত দিনের চাকরি ও মডেলিংয়ের টাকাপয়সা জমিয়ে ২০১৪-য় ‘রুবানস’ খোলেন চিনু।

তবে এই ধরনের ব্যবসা খুব বড় আকারে শুরু করার মতো অর্থবল তখনও ছিল না তার। বেঙ্গালুরুতে মাত্র ৬ ফুট x ৬ ফুট একটি ঘরেই শুরু হয় রুবানসের অফিস। পুরনো যুগের ও পাশ্চাত্যের নকশাদার গয়না তৈরি করতে শুরু করে তারা। ২২৯ থেকে ১০ হাজার— নানা দামেরই গয়নার সম্ভার রাখেন চিনু।

রুবানসের নিজস্বতা ও আকর্ষণীয় নকশার আগ্রহী হয়ে পড়েন আমজনতা থেকে সেলেব প্রায় সকলেই। মাত্র ৬ মাসেই বিপুল লাভের মুখ দেখে রুবানস। অফিস বড় হয়, ব্যবসা নিয়েও আরও নতুন করে ভাবেন চিনু। বাড়িয়ে তোলেন রুবানসকে। কোচি ও হায়দরাবাদে শুরু হয় নতুন শো রুম।

বড় বড় মলেও খোলে রুবানস। ২০১৬-’১৭-তে ৫৬ লক্ষ টাকা লাভের মুখ দেখে রুবানস। পরের বছর সে লাভ লাফিয়ে বাড়ে ৩.৫ কোটিতে। ২০১৮-১০১৯-এ এই লভ্যাঙ্ক ছুঁয়েছে ৭.৫ কোটিতে! বিপুল টাকার মালিক হলেও পুরনো দিনের কথা ভাবতে বসলে আজও চোখের কোণ ভিজে যায় চিনুর।

বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানান, এক সময় সাফল্য বলতে বুঝতেন নিজের রোজের খাওয়া ও ডরমেটরির খরচটুকু তোলা। আজ সাফল্যর মানে বদলেছে। ব্যবসায়িক লাভের পাশাপাশি অন্যের জন্য কিছু করার কথাও ভাবেন তিনি। পরিশ্রম করতে ইচ্ছুক মানুষদের চাকরিতে নিয়োগ করে তাদের পাশে দাঁড়ানোই নতুন জীবন দেওয়াই এখন আনন্দ দেয় চিনুকে।

Related Posts

Leave a Reply