May 23, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular রোজনামচা

মানুষকে কুপোকাত করতে ৪০ বছর ধরে নিজেকে একটু-একটু পাল্টেছে করোনা  

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস : 

সারা বিশ্বে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন এই মারণ ভাইরাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে। এই ভাইরাসের কোনো ওষুধ এখনো উদ্ভাবন হয়নি। এর উত্‍স নিয়ে বিজ্ঞানীমহলে মতভেদ রয়েছে। অনেক বিজ্ঞানীরাই এখনো এর উৎস নিয়ে একমত হতে পারেননি।

উহানের ‘ওয়েট মার্কেট’ থেকে যখন এই ভাইরাস ছড়ানোর কথা প্রথম সামনে আসে, বিজ্ঞানীরা দাবি করেছিলেন বন্যপ্রাণীর শরীর থেকেই এই ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। বাদুড় ও প্যাঙ্গোলিন দুই প্রাণীর শরীরেই এমন ভাইরাল জিন মিলেছে যার সঙ্গে সার্স-কভ-২ এর সাদৃশ্য রয়েছে। তাহলে প্রশ্ন আসে যে বাদুড় বা প্যাঙ্গোলিনই কি এই মারণ ভাইরাসের বাহক? সেটাও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। কারণ বাদুড়ের শরীরে যে ভাইরাসের খোঁজ মিলেছে অর্থাত্‍ ব্যাট-কভ, তার থেকে সার্স-কভ-২ অনেকটাই আলাদা ও আরো বেশি সংক্রামক। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এক মানুষের থেকে অন্য মানুষে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা খুব একটা সহজ নয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে অন্তত ৪০ বছর সময় লেগেছে এই ভাইরাসের।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ধরা যাক বাদুড় হলো কোনো একটি ভাইরাসের উত্‍স। এখন সেই বাদুড়কে আগে মানুষের সংস্পর্শে আসতে হবে। সাধারণত দেখা যায় ভাইরাস তার অরিজিন বা বাহককে সংক্রমিত করে না। বাদুড়ের থেকে ভাইরাস যখন মানুষের শরীরের সংস্পর্শে আসবে সে তখন চেষ্টা করবে নতুন বাহক কোষ খুঁজে বার করার। মানুষের দেহকোষের প্রোটিন যদি ভাইরাসের পছন্দ হয়, তাহলে ভাইরাল প্রোটিন তার সঙ্গে জোট বেঁধে কোষের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এটা হলো এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে ভাইরাসের ট্রান্সমিশনের প্রথম ধাপ।

হিউম্যান ট্রান্সমিশন কিভাবে হয়? তারও কয়েকটা পর্যায় আছে। প্রথমত, মানুষের শরীরে একবার ঢুকে পড়তে পারলে ভাইরাস চেষ্টা করে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে নিজের কব্জায় আনতে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের শরীরের সব অঙ্গকে কিন্তু ভাইরাস কব্জা করতে পারে না। কারণ সব দেহকোষে সে তার পছন্দের বাহক প্রোটিন খুঁজে পায় না। তাই দেখা যায় কোনো ভাইরাস হয়তো ফুসফুসকে আক্রান্ত করে, আবার কোনো ভাইরাস কিডনি বা হার্টকে সংক্রমিত করে।

দ্বিতীয়ত, যে অঙ্গকে ভাইরাস তার টার্গেট বানায় সেখানে সে তার প্রতিলিপি তৈরি করতে থাকে। অর্থাত্‍ সংখ্যায় বাড়তে থাকে। এবার তার কাজ হয় নতুন বাহক কোষ খুঁজে বের করা। তার জন্য এক মানুষের শরীর থেকে অন্য মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করে। সেই সুযোগ যদি আসে তাহলে ভাইরাস সংক্রমিত হতে শুরু করে। তবে তারও একটা নির্দিষ্ট সময় ও পদ্ধতি আছে। ভাইরাস যদি নিজেকে বদলাতে না পারে তাহলে একটা সময়ের পরে এই ট্রান্সমিশন থেমে যায়। ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরির ক্ষমতাও হারিয়ে যায়, ফলে দেখা যায় একটা পর্যায়ে গিয়ে সংক্রমণ থেমে গেছে। যেমন বার্ড ফ্লু-র ক্ষেত্রে হয়েছিল। পাখির শরীর থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়েছিল ভাইরাস, তবে বেশিদূর যেতে পারেনি। একটা সময়ের পরে সংক্রমণ নিজ থেকেই থেমে গিয়েছিল।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা হলো সাধারণ ভাইরাসের চরিত্র। এবার যে ভাইরাস মহমারি আকার ধারণ করেছে সেই ভাইরাস সাধারণ নয়। নিজেকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে নিয়েছে। করোনাভাইরাস নতুন নয়। আগেও ছিল। অন্তত ৪০ থেকে ৭০ বছর আগে ব্যাট করোনাভাইরাস ছিল। কিন্তু যে ভাইরাস মহামারি সে কিন্তু ব্যাট করোনা নয়, সে সার্স-কভ-২। কাজেই এদের অরিজিনটা পুরনো, শুধু চরিত্রের বদল হয়েছে। সেটা কিভাবে?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিগত কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে ভাইরাস খুব দ্রুত তার চরিত্রের বদল ঘটাচ্ছে। অর্থাত্‍ নতুন নতুন বাহক খুঁজে বের করার জন্য সেই মতো জিনের গঠন বদলে ফেলছে খুব তাড়াতাড়ি। এটা শুরু হয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় থেকেই। এই ভাইরাসের ৮টা জিনোম খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, এই জিনোমগুলো নিজেদের মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি করে ফেলছে। দুটি জিন মিলেমিশে গিয়ে নতুন ভাইরাল জিন তৈরি করছে। নতুন তৈরি হওয়া এই ভাইরাল জিন অনেক বেশি শক্তিশালী ও সংক্রামক।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমন হতেই পারে ব্যাট-করোনাই বারে বারে জিনের গঠন বদলে এই চেহারা নিয়েছে। আবার নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে কোনো মধ্যবর্তী বাহক আছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই মধ্যবর্তী বাহক প্যাঙ্গোলিন হতে পারে। বাদুড়ের শরীর থেকে ভাইরাস প্যাঙ্গোলিনে ছড়িয়েছে, সেখানেই এর বদল হয়েছে। পরিবর্তিত সেই ভাইরাস মানুষে ছড়িয়েছে। তবে এই সবই বিজ্ঞানীদের অনুমান ও গবেষণার পর্যায়তেই রয়েছে।

সার্স-কভ-২ ভাইরাসের বদল কিভাবে হয়েছে, এই ভাইরাসের আসল উত্‍স কী, কেন এতো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তার সঠিক উত্তর এখনো অজানা। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন, বন্যপ্রাণীদের আরো কাছাকাছি চলে আসা, জঙ্গল ধ্বংস করে নগরসভ্যতার বিকাশ, খাদ্যাভাসে বদল, এমনই নানা কারণ রয়েছে সংক্রামক ভাইরাসদের মানুষের আরো কাছাকাছি চলে আসার। সচেতনতার অভাব ও অসংযমী জীবনযাত্রাই এই মহামারির অন্যতম বড় কারণ।

Related Posts

Leave a Reply