May 24, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

একটুতেই প্যারাসিটামল, অ্যান্টাসিড, পেইনকিলার,  মাথা ঘুরিয়ে দেবে মারাত্মক ক্ষতি 

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :

সামান্য ব্যাথা হলেই পেইনকিলার, গ্যাসের সমস্যা হলেই অ্যান্টাসিড আর সামান্য গা গরম হলেই প্যারাসিটামল- এই সাধারণ ডাক্তারি প্রায় সব মানুষই নিজে নিজে করে থাকেন। এমনকী শিশু-কিশোররাও এসব ওষুধের নাম গড়গড় করে বলে দিতে পারেন। কিন্তু কেউ জানেন না এই নিজে নিজে ডাক্তারির প্রভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেকোনো ওষুধ খাওয়ার আগে তার কম্পোজিশন সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরি। ওষুধ খাওয়ার আগে কিছু টেস্ট করা উচিত কি না কিংবা ওষুধ কতদিন খাবেন- বিবেচনা করা উচিত এই বিষয়গুলোও। আর এই কাজগুলো একমাত্র ডাক্তাররাই করতে পারেন।

কোন ওষুধে কী ক্ষতি :

** গা-হাত-পা, মাথা ব্যথার ক্ষেত্রে আইবুপ্রোফেন কিংবা ডাইক্লোফিনাক দীর্ঘদিন ধরে খেলে কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়। যা থেকে অ্যানালজেসিক নেফ্রোপ্যাথি, গ্যাস্ট্রোইনটেসটাইনাল ব্লিডিং হতে পারে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া যখন তখন ব্যথার ওষুধ খেলে হজমশক্তি কমে যায়, আলসার হয়, অনেকে নিজের অজান্তেই ওষুধের জন্য নেশাগ্রস্তও হয়ে যান। স্টেরয়েড শ্রেণির ওষুধ ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের জন্য ব্যবহার করলে শরীরের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির কার্যক্ষমতা কমে যায়। ফলে অ্যাড্রিনাল হরমোনের অভাব হয়। স্টেরয়েড ড্রাগের মতোই ক্ষতি হয় ননস্টেরয়েডিয়াল অ্যান্টি ইমফ্লেমেটারি ড্রাগে (ক্যান্ডিফার্ম, স্যারিডন)।

** ঘন ঘন সর্দি-কাশি কমাতে নিজের ইচ্ছামতো ওষুধ খেলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে। রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা বৃ‌দ্ধি পায়। তা ছাড়া যখন তখন ‘কাফ সিরাপ’ খেলে নেশা হতে পারে।

** গ্যাস-অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে একটু তেল-ঝাল, মুখরোচক খাওয়া হলেই ওমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধ কিংবা অ্যান্টাসিড খাওয়া অনেকেরই অভ্যাস। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু হঠাৎ গ্যাসের সমস্যার পেছনে লুকিয়ে থাকে আলসার। কাজেই সে ক্ষেত্রে এইসব ওষুধ খেলে বিপদ হতে পারে। হরমোনের সমস্যাও হতে পারে।

** গ্যাস, অ্যাসিডিটি, পেটের ব্যথায় প্যান্টোপ্রাজল, প্যান্টোসিড ট্যাবলেট খান? বিশেষজ্ঞের কথায় এই ধরনের ওষুধ খেলে অ্যাসিড, গ্যাসের সমস্যা হয়তো কমে যায়। কিন্তু দীর্ঘ দিন খেলে শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা কমে যায়। তখন শরীরে বাসা বেঁধে থাকা যে সব ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া অ্যাসিডের প্রভাবে নষ্ট হতো, তা আর হয় না। সেই সব ব্যাকটেরিয়া তখন ক্ষুদ্রান্ত্রের অন্য অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পেটে ইনফেকশনের মাত্রা বেড়ে যায়, ব্যাকটেরিয়াল ডায়ারিয়া হয়। প্রয়োজনীয় অ্যাসিডের অভাবে পর্যাপ্ত ক্যালশিয়াম দ্রবীভূত হতে পারে না, তার থেকে হাড়ের ক্ষয় বাড়ে।

** ফ্লু, ভাইরাল ফিভার- ইত্যাদি ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক আদৌ দরকার কি না, তা না বুঝেই অনেকে ব্যবহার করেন। বারবার না বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে তা পরে আর শরীরে কাজই করে না। এ ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে নিজের মতো অ্যান্টিবায়োটিক খেলে অ্যালার্জি দেখা দেয়, পেট খারাপ হয়, বমির সমস্যা হয়। ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।

** দীর্ঘদিন ঘুমের ওষুধ খেলে ক্রমশ নেশা হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ঘুমের ওষুধ না খেয়ে রোগী কখনোই ঘুমাতে পারে না। রাত্রে ঘুম হয় না, দিনে বেশি ঘুম পায়। এ ছাড়া ডিমেনসিয়া, অ্যালজাইমারস-এর আশঙ্কাও থাকে।

** অ্যালার্জি কমাতে অ্যাভিল, সেট্রোজিন নিজে নিজে খেলে নানা সাইড এফেক্ট হতে পারে।

কী ভাবে বুঝবেন ক্ষতি হচ্ছে :

** ব্যথার ওষুধ দীর্ঘদিন খাচ্ছেন। যদি দেখেন পেট জ্বালা করছে, প্রস্রাবের সমস্যা হচ্ছে, শরীর ফুলতে শুরু করেছে- সতর্ক হোন! এ ছাড়া এই ক্ষেত্রে কিডনির সমস্যাও দেখা যায়।

** স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ব্যবহারের ফলে ওজন বাড়ে, মুখ ফুলে যায়, বসে থাকলে উঠতে সমস্যা হয়, পড়ে গিয়ে হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে, ইনফেকশনের মাত্রা বেড়ে যায়।

** কথায় কথায় গ্যাস-অ্যাসিডিটি, জ্বর, ঘুম, অ্যালার্জির সমস্যায় ওষুধ খাওয়ার বাতিকও এক ধরনের সমস্যা। নিজের অজান্তেই তখন সবাই অ্যাডিকটেড হয়ে যান।

বাড়িতে জমানো ওষুধ খেতে হলে :

** অবশ্যই সেটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে নিন।

** জ্বর, বমি, ব্যথা কিংবা গ্যাস-অ্যাসিডিটির সমস্যায় প্রথমে একটি বা দুটি ওষুধ নিজে থেকে খেতে পারেন, তারপর অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

** জ্বর হলে প্রাপ্তবয়স্করা ‘প্যারাসিটামল ৫০০-৬৫০’ দিনে ৩-৪ ঘণ্টা অন্তর তিন-চারবার খেতে পারেন।

** ১২-১৩ বছর বয়সের পর থেকে ওটিসি ড্রাগ নেওয়া যেতে পারে। এর থেকে কমবয়সীদের কখনোই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ দেওয়া চলবে না।

** যেকোনো ওষুধ খেতে শুরু করলে অবশ্যই তার কোর্স সম্পূর্ণ করা উচিত।

** ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কখনোই নয়।

** নিজে নিজে ডাক্তারি করে বাড়ির বাচ্চা ও বয়স্কদের কখওই ওষুধ দেবেন না।

** ওষুধ এক্সপায়ারি ডেট দেখে ব্যবহার করা উচিত।

পুরনো প্রেসক্রিপশন দেখে ডাক্তারি নয় :

পুরনো প্রেসক্রিপশন দেখে নিজের কিংবা অন্যের ডাক্তারি নয়। কেউ হয়ত ব্যথা হলে এমন কিছু ওষুধ ব্যবহার করলেন যাতে কষ্ট লাঘব হয়ে গেল। এর মানে এই নয় যে অন্যরাও সেই ওষুধটি ব্যথা হলেই ব্যবহার করবেন এবং সুফল পাবেন। ব্যক্তি বিভাগে রোগের লক্ষণ এক হলেও তার কারণ আলাদা হতে পারে। তাই একই রোগে সবার জন্য একই ওষুধ কাজ করে না। ফলে রোগের সঠিক কারণ ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ওষুধ খাওয়া জরুরি। অনেক ক্ষেত্রে প্রথম অবস্থায় যে ওষুধ কাজ করে, পরবর্তীকালে সেই রোগীরই ওই ওষুধে সাইড এফেক্ট দেখা যায়। তাই সব সময় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খান।

Related Posts

Leave a Reply