May 9, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular সফর

প্রাচীন বাংলার সৌন্দর্য্য দেখতে ঘুরে আসুন উইকএন্ডে

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস : 
খনও বৌদ্ধ, কখনও হিন্দু তো কখনও মুসলিম এবং সবশেষে প্রবল ইংরেজ বিকীর্ণ করেছে তার তেজ। তাদের ফেলে যাওয়া নিজ নিজ সভ্যতা ও সংস্কৃতির নিদর্শনে রঙিন মালদহ যেন এক আস্ত ভারত। বড় বড় গম্বুজ, মিনার, মসজিদ থেকে শুরু করে চার্চ, মন্দির, আমের বাগান –
উইকেন্ডে এক্সক্লুসিভ সনাতন বাংলার স্বাদ পেতে পৌঁছতেই হবে গৌড়, পাণ্ডুয়া, ইংরেজ বাজারের মালদহে।
ছোট করে ইতিহাস বিশিষ্ট দার্শনিক পাণিনির লেখনি ও পৌরানিক পুস্তিকা অনুযায়ী মৌর্য্য সাম্রাজ্যের হাত ধরে শুরু হওয়া সভ্যতা গুপ্ত বংশের ধার ঘেঁষে পূর্ণতা পেয়েছিল মহান রাজা শশাঙ্কের রাজত্বে।
তৎকলীন গৌড় (এখন মালদহ) বিকশিত হয়েছিল নিজ গুনে। অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে একাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ পর্যন্ত এখানে রাজত্ব করেন বৌদ্ধ মতাদর্শে বিশ্বাসী পাল বংশ। এরপর গৌড়ের সর্বাধিপতি হন হিন্দু ধর্মের পৃষ্ঠপোষক সেন রাজারা। যাযাবর জীবনযাপনে বিশ্বাসী সেন রাজাদের আমলেই এখানে ধীরে ধীরে বৌদ্ধ ধর্মের অবলুপ্তি ঘটে। এই বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেনের সময় গৌড়ের নাম হয় লক্ষ্মণাবতী।
১২০৪ সালে গৌড় আক্রমণ করেন খিলজি বংশের তৎকালীন অধিপতি বখতিয়ার খিলজি। এরপর মালদহে রাজ করেন ইলিয়াস শাহ, ফারুখ শাহ, সিকন্দর শাহ, আলউদ্দিন হুসেন শাহ, নাসিরুদ্দিন নসরত শাহের মতো মুসলিম রাজারা। শের শাহ সুরির আফগান, ফিরোজ শাহ তুঘলক, গিয়াসউদ্দিন তুঘলক এবং মোঘল সাম্রাজ্যের পদাঙ্কের নিশানও রয়েছে এই মালদহতেই। ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজদৌলাকে যুদ্ধে হারিয়ে ইংল্যান্ডের ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশির দখল নিলে, তার প্রভাব মালদহতেও পড়ে। ১৭৭১ সালে মালদহে ইংরেজদের আধিপত্য কায়েম হয়। নাম দেওয়া হয় ইংরেজ বাজার। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতাকালীন দেশভাগের প্রভাব এই জেলায় ভীষণভাবে পড়ে।
র‌্যাডক্লিফের তৈরি ম্যাপে মালদহের একটা অংশ থেকে যায় পশ্চিমবঙ্গে। অন্য অংশ চলে যায় পূর্ববঙ্গে। একদা সাঁওতাল বিদ্রোহেরও পীঠস্থান হয়ে ওঠা মালদহ দুই বাংলারই গর্ব।
কলকাতা থেকে দূরত্ব কলকাতা থেকে প্রায় ৩৩০ কিলোমিটার দূরের জেলা মালদহে পৌঁছনোর রাস্তা সোজা বর্ধমান হয়ে বোলপুর নয়তো বিহারের আজিমগঞ্জ হয়ে। প্রথম ক্ষেত্রে সাত ঘণ্টার বেশি সময় লাগা উচিত নয়। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অর্থাৎ বিহারের আজিমগঞ্জ হয়ে মালদহে পৌঁছতে সময় লাগে আট ঘণ্টা বা সাড়ে আট ঘণ্টা।
সড়ক পথে অর্থাৎ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কলকাতা থেকে মালদহ পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় ৯ ঘণ্টা। রাস্তা খারাপ থাকলে কখনও কখনও তার বেশিও লাগতে পারে। এভাবে মালদহ শহরে পৌঁছলেও সেখান থেকে দর্শনীয় স্থান গুলির দূরত্ব কিন্তু কম নয়।
দেখে নেওয়া যাক মালদহের সেরকমই কিছু দর্শনীয় স্থান। সন্ধের পরে কলকাতায় বাড়বে জলস্তর, বাংলা জুড়ে দুর্যোগ-দুর্ভোগের আশঙ্কায় সতর্কবার্তা আবহাওয়া দফতরের গৌড় মহানন্দা ও কালিন্দি নদী দিয়ে ঘেরা মালদহ শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা গৌড়-ই একসময় ছিল বাংলার রাজধানী তথা শিল্প ও সংস্কৃতির পীঠস্থান।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ১৪ ও ১৫ শতকের ইতিহাস আঁকড়ে বসে থাকা গৌড়ে পৌঁছতে গাড়ি বুক করতেই হবে। ইতিহাস বহনকারী বড় সোনা মসজিদ, কদম রসুল মসজিদের স্থাপত্য শৈলী কিছুটা মলিন হলেও একেবারে ফিঁকে হয়ে যায়নি। ১৪২৫ সালে তৈরি ২১ মিটার লম্বা ও ৩৪.৫ মিটার চওড়া দাখিল দরওয়াজা মুসলিম সাম্রাজ্যের সময়কে ধরে রেখেছে।
Pandua: The Lost Capital of the Bengal Sultanate
আদিনা মসজিদ ১৩৬৯ সালে সুলতান সিকান্দার শাহ নির্মিত আদিনা মসজিদকে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম ধরা হয়ে থাকে। অষ্টম শতকে দামাস্কাসে তৈরি হওয়া এক মসজিদের আদলে এটি তৈরি করা হয় বলেই শোনা যায়। গুমতি দরওয়াজা চিকা মসজিদের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত গুমতি দরওয়াজা ১৫১২ সালে তৈরি করেন আলাউদ্দিন হুসেন শাহ। ইঁটের উপর টেরাকোটা ও বিভিন্ন রংয়ের কারুকার্য এই স্থাপত্যকে স্বতন্ত্র বানিয়েছে। কথিত আছে, নিখাদ সোনা দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল গুমতি দরওয়াজা। ইংরেজদের রাজত্বে সেসবের অবলুপ্তি ঘটে বলেও কথিত আছে। ফিরোজ মিনার দাখিল দরওয়াজা থেকে ১ কিলোমিটার দূরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা পাঁচ তলার এই মিনার, ১৪৮৫ থেকে ৮৯ সালের মধ্যে তৈরি করেছিলেন সুলতান সৈফুদ্দিন ফিরোজ শাহ। ২৬ মিটার উচ্চতা ও ১৯ মিটার প্রস্থের ফিরোজ মিনার তুঘলকি কারুকার্য দ্বারা নির্মিত।
On Indo-Bangla border, BSF guard Sona Mosque
এছাড়াও রামকেলি অষ্টকুণ্ড, মা জহুরা মন্দির, কদম রসুল মসজিদ, চামকাটি মসজিদ, আদিনা হরিণ অরণ্য, একলাখি সমাধিস্থল, জগজীবনপুর বৌদ্ধ বিহার, চাঁচল রাজবাড়ি, নিমাই সরাই স্তম্ভও মালদহের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম। সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় মালদহের আমের স্বাদ নিতে শহর ছেড়ে একটু গ্রামের দিকে যেতেই হবে।

Related Posts

Leave a Reply