November 25, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

তীর্থস্থানের সঙ্গে রোগের কি সম্পর্ক জানেন ?

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর!” এই কথাটাকে সম্বল করে নিজ এবং পরিবারের মঙ্গল কমনায় যুগের পর যুগ ধরে ভগবান মানুষেরা তীর্থস্থানে মাথা ঠুকে চলেছেন। তাদের বিশ্বাস এমনটা করলে ভগবান তাদের জীবনে সুখের বৃষ্টি নিয়ে আসবেন। দূর হবে দারিদ্রতা। আসবে সমৃদ্ধি। তীর্থস্থানে পুজো দেওয়া মানে তো বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। প্রথা মেনে প্রথমে গঙ্গা বা যে নদীর তীরে দেবালয় গড়ে উঠছে, সেখানে স্নান সেরে পরিষ্কার জামা-কাপড় পরে তবে দেব বা দেবীর দর্শন। সব শেষে পুজো সরে বাড়িমুখ হওয়া। এমন নিষ্টা সহকারে পুজো দিলে কি আর ফল মেলে না? নিশ্চয় মেলে! তবে সেই সঙ্গে একাধিক রোগও দূরে পালায়। মানে! ঠিক বুঝলাম না। পুজো এবং রোগের মধ্যে সম্পর্ক কোথায়? আসলে এইভাবে নদী, পুকুর বা ঝিলে স্নান সেরে পুজো দেওয়ার যে রীতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, তার একাধিক শারীরিক উপকারিতা আছে। যেমন…

উপকারিতা ১: সকাল সকাল ঠান্ডা জলে ডুবকি লাগানোর সময় আমরা শ্বাস বন্ধ করে জলের তলায় যাই। যে মুহূর্তে শ্বাস ফরিয়ে যায়, অমনি হাপুস হুপুস করে অক্সিজেন টেনে নেওয়ার প্রচেষ্টায় লেগে পরি। এমনটা করার সময় আমাদের ফসুফুসের কর্মক্ষমতা মারাত্মক বেড়ে যায়। তাহলে একবার ভাবুন, যারা প্রতিদিন গঙ্গা স্নান করছেন অথবা যাদের পুকুরে স্নান করার অভ্যাস রয়েছে, তাদের ফুসফুস কতটা কর্মক্ষম!

উপকারিতা ২: পুকুর বা নদীতে ডুব দেওয়ার সময় আমরা প্রথমে শ্বাস আটকে নি। যতক্ষণ জলের তলায় থাকি, ততক্ষণ শ্বাস আটকে রাখার পর যখন আর সম্ভব হয় না, তখন জলের উপরে উঠে আসি। এমনটা বারে বারে করার ফলে ফুসফুসের দারুন ব্যায়াম হয়ে যায়। ফলে ধীরে ধীরে লাং-এর কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে।

উপকারিতা ৩: ঠান্ডা জলে স্নান করার সময় আমাদের শরীর থেকে এন্ডোরফিন এবং নোরাড্রেনালিন নামে দুটি কেমিকেলের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই দুটি কেমিকেল শরীর থেকে যত বেরিয়ে যেতে থাকে, তত আমাদের ক্লান্তি দূর হয়। সেই সঙ্গে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

উপকারিতা ৪: সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা পত্র অনুসারে ভোর ভোর পুকুরে বা নদীতে স্নান করলে আমাদের শরীরে বেশ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যা মানসিক অবসাদ এবং স্ট্রেসকে নিমেষে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চলে আসে। তাই তো এবার থেকে যখনই মন ভাল থাকবে না, পুকুরে বা নদীতে একটু ডুবকি মেরে নেবেন, তাহলেই দেখবেন মন এবং শরীর, উভয়ই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।

পকারিতা ৫: প্রতিদিন পুকুরে স্নান করলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে নানাবিধ সংক্রমণের প্রকোপ একেবারে কমে যায়। এবার নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, তীর্থস্থানে গিয়ে পুণ্য হোক বা না হোক, শরীর কিন্তু একেবারে সুস্থ হয়ে ওঠে।

উপকারিতা ৬: শরীর, ঠান্ডা জলের সংস্পর্শে আসা মাত্র লিম্প ভেসেলগুলি সংকুচিত হতে শুরু করে। ফলে সারা শরীরে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায়। এমনটা যখনই হয়, তখনই প্রতিটি অঙ্গে পর্চুর পরিমাণে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পৌঁছে যাওয়ার কারণে সার্বিকভাবে দেহের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

উপকারিতা ৭: সকাল সকাল পুকুর বা নদীর ঠান্ডা জলে স্নান করলে ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। আসলে ত্বক এবং চুলের অন্দরে থাকা প্রকৃতিক তেল যাতে বেশি মাত্রায় ক্ষরণ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে ঠান্ডা জল। ফলে ত্বক বা চুল আদ্র হয়ে গিয়ে সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে। প্রসঙ্গত, নিয়মিত পুকুরের ঠান্ডা জলে স্নান করলে চুলের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে নানাবিধ স্কাল্পের সমস্যাও দূর হয়।

উপকারিতা ৮: আমাদের শরীরে দু ধরনের ফ্যাট থাকে। একটা হল ব্রাউন ফ্যাট, যা শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে। আর আরেকটি হল ওয়াইট ফ্যাট, যা শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়। এই দ্বিতীয় ধরনের চর্বি গলানোর কথাই চিকিৎসকেরা সব সময় বলে থাকেন। প্রসঙ্গত, পুকুর বা নদীর ঠান্ডা জলে স্নান করার সময় ব্রাউন ফ্যাট খুব অ্যাকটিভ হয়ে যায়। ফলে একদিকে যেমন শরীরের এনার্জির ঘাটতি দূর হয়, তেমনি অন্যদিকে ক্যালোরি বার্ন হতে শুরু হয়। ফলে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত সাদা চর্বি ঝড়ে গিয়ে দেহ মেদমুক্ত হয়ে ওঠে।

উপকারিতা ৯: ঠান্ডা জলে সকাল সকাল ডুবকি লাগালে শরীর থেকে বেশ কিছু ক্ষতিকর অ্যাসিড বেরিয়ে যায়। ফলে পেশিতে কোনও চোট থাকলে তা দ্রুত সেরে উঠতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, এই কারণেই তো খেলোয়াড়রা ইনটেন্স ট্রেনিং-এর পর ঠান্ডা জলে স্নান করে থাকেন। আসলে ঠান্ডা জল পেশির গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

Related Posts

Leave a Reply