November 22, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

গোল মরিচেই ঢিসুম-ঢাসুম …!

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

শিরোনাম পদে ভাবছেন ঢিসুম-ঢাসুম তো ফিল্মি হিরোরা করে, তাও ভিলেনদের সঙ্গে। গোলমরিচের আবার ঢিসুম-ঢাসুম কি ? আসলে শরীরে প্রবেশকারী নানান রোগ-জীবাণুও তো ভিলেনই। গোলমরিচও কিন্তু তাদের হেরোর মত মেরে তাদের।  গোলমরিচও তো দেহের অন্দরে থাকা রোগ নামক গুন্ডাদের মারতে সমান ভূমিকা নেয়। তাহলে এবার বলুন হিরো আর গোলমরিচের মধ্যে কোনও পার্থক্য আছে কি? এখনও ঠিক বিষয়টা মেনে নিতে পারছেন না, তাই তো? আচ্ছা ঠিক আছে একটু ২০০০ বছর পিছনে ফেরা দেখুন। তাহলেই দেখবেন মনে আর কোনও সন্দেহ থাকবে না যে গোলমরিচ আর ক্রাইম ব্রাঞ্চের কাজের ধরনে কোনও পার্থক্য নেই।

ইতিহাস বলছে সারা দুনিয়ার মধ্য়ে ভারতে প্রথম এই মশলাটির ব্যবহার শুরু হয়। তারপর এদেশ থেকে তা ছড়িয়ে পরে বাকি দুনিয়ায়। খুব অল্প দিনেই ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে এই মশলাটি। এমনটা হওয়ার পিছেন মূল কারণ ছিল এর স্বাদ এবং উপকারিতা। সেই সময় থেকেই মানুষ বুঝতে পেরেছিল এই কালো মশলাটি শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু করে, যাতে দেহে বল ফিরে আসে। সেই সঙ্গে নানা কষ্টও কমে।

প্রসঙ্গত, রোমান ইতিহাসেও গোলমরিচের উল্লেখ পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকদের মতে ভারতের আগে নাকি রোম থেকেই এই মশলাটি সারা দুনিয়ায় রপ্তানি হত। যদিও এই নিয়ে বিতর্কের অবকাশ থেকে গেছে। তবে যাই হোক, সেই ৪০ এডি থেকে গোলমরিচের এত জনপ্রিয়তার পিছনে এর স্বাদ যতটা না দায়ি ছিল, তার থেকে বেশ ছিল শারীরিক উপকারিতা। সে না হয় বুঝলাম!

কিন্তু এখনও পর্যন্ত বললেন না যে এই মশলাটি কী কী রোগকে পুলিশের মতো গুলি করে ওড়ায়? আধুনিক গবেষণা বলছে গত কয়েক দশকে যে যে রোগের কারণে সারা বিশ্বে সবথেকে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, তার প্রায় সবকটিকে দূরে রাখতেই গোলমরিচ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই দীর্ঘদিন যদি সুস্থভাবে বাঁচার ইচ্ছা থাকে, তাহলে কিন্তু শতাব্দী প্রাচীন এই মশলাটির ব্যবহার বাড়াতেই হবে! সাধারণত যে যে রোগের প্রতিরোধে গোলমরিচ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলি হল…

১. ক্যান্সারের মহৌষধি: গোলমরিচে রয়েছে পিপেরিন নামে একটি উপাদান, যা ক্যান্সার সেলকে এনকাউন্টারে মারতে দারুনভাবে সক্ষম। এখানেই শেষ নয়, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই মশলাটির শরীরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিন এবং আরও অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে ক্যান্সার রোগকে যেমন দূরে রাখে, তেমনি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। ফলে সংক্রমণ ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

২. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়: পিপেরাইন যে শুধু ক্যান্সার সেলকেই ধ্বংস করে না, সেই সঙ্গে হজম সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। আর একবার এইসব অ্যাসিডগুলি যদি ঠিক মতো কাজ করা শুরু করে দেয়, তাহলে হজমের সমস্যা তো হয়ই না, সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বলের মতো অস্বস্তিও কমতে শুরু করে।

৩.জ্বরের প্রকোপ কমায়: কারণে-অকারণে সারা বছর ধরেই কি জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগে থাকেন? তাহলে তো আজ থেকেই যখন সুযোগ পাবেন, খাবারে গোলমরিচ মিশিয়ে খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। আসলে এই মশলাটির শরীরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা জ্বরের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে এক চামচ মধুর সঙ্গে অল্প পরিমাণে গোলমরিচ মিশিয়ে খাওয়া শুরু করতে হবে। এমনটা করলে একদিকে যেমন জ্বর কমবে, তেমনি বুকে কফ জমে থাকলে, তাও কমতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে ভাইরাল ইনফেকশনও আর ধারে কাছে ঘেঁষার সুযোগ পাবে না।

৪. ওজন হ্রাসে সাহায্য করে: শুনতে একটু অজাব লাগলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণা একথা প্রমাণ করেছে যে ওজন কমাতে বাস্তবিকই গোলমিরচ দারুনবাবে সাহায্য করে। আসলে গোলমরিচের মধ্যে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, যা ফ্যাট সেলকে গলিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মেটাবলিজম রেটের বৃদ্ধি ঘটায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমার সুযোগ না পাওয়ার কারণে ওজন কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে যে কোনও খবারে এক চিমটে গোলমরিচ মিশিয়ে খেলেই ফল মিলবে, বেশি মাত্রায় খাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।

৫. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়: অল্প পরিমাণ গোলমরিচের সঙ্গে পরিমাণ মতো মধু, দই মিশিয়ে যদি প্রতিদিন খেতে পারেন তাহলে ত্বকের উপর বয়সের ছাপ পরে না। সেই সঙ্গে বলিরেখাও অদৃশ্য হতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, এই তিনটি উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে বানানো পেস্ট মুখে লাগালেও দারুন উপকার পাওযা যায়। একাধিক কেস স্টাডি অনুসারে এই পেস্টটি ত্বকের উপরিঅংশে জমে থাকা মৃত কোষের আবরণ সরিয়ে দেয়। ফলে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়।

৬. ডিপ্রেশন কমায়: বিজ্ঞানিরা এমনটা মনে করে থাকেন যে গোলমরিচে উপস্থিতে পিপেরাইন মস্তিষ্কের অন্দরে “ফিল গুড” হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে নিমেষে মন খারাপ ছুমান্তর হয়ে যায়। সেই সঙ্গে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। শরীরের উপকারে কিভাবে ব্যবহার করবেন গোলমরিচকে? স্যালাড থেকে ডাল, দুধ থেকে ডিমের অমলেট, যে কোনও খাবারেই এই মশলাটি দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। সব থেকে মজার বিষয় হল, শরীরকে চাঙ্গা রাখতে এক চিমটে গোলমরিচই যথেষ্ট। বেশি মাত্রায় খাওয়ার কোনও প্রয়োজনই নেই। তবে এক্ষেত্রে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, তা হল ঠিক মতো স্টোর না করলে কিন্তু এই মশলাটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই এয়ারটাইট কন্টেনার ছাড়া আর কোনও পাত্রে এই মশলাটি রাখবেন না যেন!

Related Posts

Leave a Reply