সাবধান : ব্যায়াম থেকে হওয়া অ্যালার্জিতে মৃত্যুও হতে পারে !
কলকাতা টাইমস :
সবসময় সুস্থ থাকেন এমন মানুষও সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন অ্যালার্জির কারণে। আপনার পরিচিত অনেকেরই হয়ত আছে মাংস, চিংড়ি, ইলিশ মাছে অ্যালার্জি, কারো কারো আছে ডাস্ট অ্যালার্জি বা কোল্ড অ্যালার্জি। পাশ্চাত্যে অনেকের মাঝেই আছে চিনাবাদামে অ্যালার্জি, আর সেটা এতই ভয়াবহ যে অ্যালার্জির কারণে শ্বাস রোধ হয়ে মরতে বসেন অনেকে। এগুলো তো আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন, এমন অ্যালার্জির কারণ হতে পারে ব্যায়াম, আর এর প্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুর কাছাকাছিও পৌঁছে যেতে পারেন অনেকে?
চলুন, একটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে আসি। জো ও’লিয়ারি ২০১৫ সালের মার্চ মাসে একদিন তার বাবা-মায়ের সাথে রাত্রের খাবার খেতে বসেন। টমেটো এবং লঙ্কা দেওয়া একটা পিজ্জা খান তখন। এরপর ব্যায়াম করতে চলে যান। কিন্তু আধা ঘন্টা ব্যায়ামের পরেই দেখেন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। ‘আমার চোখ থেকে জল পড়ছিল, নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। আয়নায় দেখি আমার চোখ ফোলা- পুরো মুখ ফুলে গেছে,’ বলেন তিনি।
তাকে দ্রুত হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রুমে নেওয়া হয় এবং প্রচুর পরিমাণে স্টেরয়েড এবং অ্যান্টিহিস্টামিন দেওয়া হয়। তার অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হয়েছিল, কিন্তু খাবারের জন্য নয়। খাবার এবং তার পর পর ব্যায়াম করার কারণে তার এই অবস্থা হয়েছিল। ডাক্তাররা দেখেন, তার সমস্যাটির নাম এক্সারসাইজ-ইনডিউসড অ্যানাফাইলেক্সিস। দেখা যায়, টমেটো, লঙ্কা, সয়া এবং বাদাম খাবার পর যদি ব্যায়াম করেন, তাহলেই এই সমস্যা হবে তার।
এক্সারসাইজ-ইনডিউসড অ্যানাফাইলেক্সিয়ার ব্যাপারে প্রথম ব্যাখ্যা করা হয় ১৯৭৯ এর দিকে, আর এ সমস্যাটা থাকে প্রতি ১০ হাজারে ৫০ জনের। এর ব্যাপারে এখন সচেতনতা আগের চাইতে বেশি হলেও ডাক্তার এবং গবেষকেরা ঠিক জানেন না এর পেছনের কারণ কী, জানান মারিয়া ক্যাস্টেলস, ব্রিগহ্যাম ওম্যান’স হসপিটালের একজন অ্যালার্জিস্ট।
৩০-৫০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা হয় যখন বিশেষ কোনো খাবার খাওয়া হয় এবং এক্সারসাইজ করা হয়। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিনের মত ওষুধ খাওয়ার পর এক্সারসাইজ করলে এই সমস্যা দেখা যায়। নারীর ঋতুচক্রের যে সময়টায় শরীরে ইস্ট্রোজেন বেশি থাকে তখন ব্যায়াম করলে এই সমস্যা হতে পারে কারো কারো। আর কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে শুধু ব্যায়াম করলেও এই অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন দেখা যায়।
কতখানি ব্যায়াম করলে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে আক্রান্ত মানুষদের? এটা একেক জনের জন্য একেক রকম হয়। সাধারণত ফিট মানুষের এই রিঅ্যাকশন সহজে দেখা যায় না। দৌড়ানো, নাচ, সাইক্লিং- সব ক্ষেত্রেই এমন অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। তবে সাঁতার কাটতে গিয়ে তা দেখা যায়নি এখন পর্যন্ত।
ঠিক কী কারণে এই অ্যালার্জি দেখা যায় তার সঠিক কারণ বের করা যায়নি, এই সমস্যাটা নিয়ে যে ইঁদুর বা মানুষের ওপর গবেষণা করা যাবে, এমন আশাও করা যায় না, তবে এই সমস্যাটি শনাক্ত করা এবং তা নিয়ন্ত্রণ করাটা তুলনামূলকভাবে সহজ। যেসব খাবার বা ওষুধ খাওয়ার পর ব্যায়াম করলে এই সমস্যা হয়, সেগুলো খাওয়া এড়িয়ে চলা বা এসব খাওয়ার পর ব্যায়াম না করাটা সহজ সমাধান। এছাড়া এপিপেন (অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন প্রশমনের বিশেষ ইনজেকশন) সাথে রাখাটা দরকারি।