ভুল সময়ের দেশ, যেখানে রাত ১০টায় সূর্য ডোবে
কলকাতা টাইমস :
স্বৈরশাসক জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো স্পেনের ক্ষমতা দখলের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪০ সালে স্পেনের সময় অঞ্চলটিকে পাল্টে দিয়েছিলেন। নাজি জার্মানির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে এক ঘণ্টা এগিয়ে আনেন তিনি। আগে স্পেন সঠিকভাবেই ব্রিটেন, পর্তুগাল ও মরক্কোর সঙ্গে একই রেখাংশের পাশে গ্রিনউইচ মান সময় এলাকায় (জিএমটি) ছিল। ফ্রাঙ্কো দেশটিকে মধ্য ইউরোপীয় সময়ে (সিইটি) পরিচালিত করা শুরু করেন, যা রাজধানী মাদ্রিদ থেকে ২ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পূর্বের সার্বিয়ান রাজধানী বেলগ্রেডের সঙ্গে সমন্বয় রাখে।
ঘড়ি পরিবর্তিত হওয়ায় গত ৭৭ বছর ধরে স্প্যানিশদের ৪টার পরিবর্তে ৩টায় বিকাল এবং ৯টার পরিবর্তে ৮টায় রাত শুরু হয়।ভুল সময়ের দেশে বসবাসের ফলে অনেক স্প্যানিশের ঘুম পর্যাপ্ত হয় না এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। তাদের মধ্যাহ্ন বিরতি হয়ে গেছে দুই ঘণ্টার। সকাল ৯টার পরে কাজ শুরু হওয়ায় সামাজিক জীবনও সকালে এক ঘণ্টার মধ্যে সংরক্ষণে বাধ্য হন।
দেশটির প্রধান শহর ও ছুটির রিসোর্টের বেশ কয়েকটি মধ্যাহ্ন বিরতির সময় খোলা থাকে, যেন পর্যটকদের উপযোগী হয়।
না সঠিক সময়ের পেছনে থাকায় গালিসিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে শীতকালে সকাল ৯টা পর্যন্ত সূর্য ওঠে না। ৬০ মিনিট পরে সূর্য দেখা যাওয়ার মানে এই যে, বাসিন্দারা অন্ধকারেই তাদের দিন শুরু করছেন। গ্রীষ্মে সন্ধ্যার পরিবর্তে রাত দশটায় সূর্যাস্তের কারণে সময়ের পার্থক্যের ফলাফল নানা বিড়ম্বনা ডেকে আনে।
২০০৬ সাল থেকে সঠিক সময় জোন জিএমটিতে ফিরে আসতে প্রচারণা চালাচ্ছে স্প্যানিশ প্রশিক্ষণ সংস্থার জাতীয় কমিশন। এর সভাপতি হোসে লুইস ক্যাসোরো বলেন, ‘স্পেনের সময় সূর্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। বিষয়টি স্বাস্থ্য, বিশেষ করে ঘুমের জন্যও উপযোগী নয়’।
‘যদি আমরা সময় অঞ্চল পরিবর্তন করি, সূর্য এক ঘণ্টা আগে উঠবে এবং আমরা স্বাভাবিকভাবেই জেগে যাবো। খাবারের সময় এক ঘণ্টা আগে হবে এবং আমরা অতিরিক্ত এক ঘন্টা ঘুমাতে পারবো। মধ্যাহ্নকালীন বিশ্রামের জন্যও কম সময়ের প্রয়োজন হবে’।
গবেষণা সংস্থা সিম্পল লোগিকার গত বছরের জানুয়ারিতে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ১৮ শতাংশেরও কম স্প্যানিশ কর্মস্থলে নিয়মিত থাকেন। প্রায় ৬০ শতাংশই সকালের নাস্তা গ্রহণ করেন না।
ক্যাসোরো বলেন, ‘আমরা অবশ্যই স্পেন থেকে সিইটিকে বহিষ্কার করবো। কারণ, এটি বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই নয়’।