কলকাতা টাইমস :
জল তো সবাই পান করি। কিন্তু কতটা করি? আমাদের শরীরের জন্য যতটা দরকার, ততটা করি কি? আসলে আমাদের ব্যস্ত জীবনে কখন যে কতটা জল পান করছি, তার হিসাব রাখাটা বেশ মুশকিল। ফলে আমাদের শরীরও দিন দিন অসুস্থ এবং কমজোর হয়ে পরছে। তবে জল কেন পান করা উচিত জানেন কি? শুধুই কি তৃষ্ণা মেটাতে জল পানের প্রয়োজন, তা কিন্তু নয়। পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করলে শরীরের কিন্তু আরও নানা রকমের উপকার হয়। যেমন…
শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় থাকে জল খাওয়ার সবথেকে উপকার হল এটি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে। কিন্তু কিভাবে? আসলে আমাদের শরীরের ৬০ শতাংশই জল দিয়ে তৈরি। তাই পরিমিত হারে জল পান করলে আমাদের শরীরের ভেতরে যে সকল তরল উপাদান থাকে, তার ভারসাম্য বজায় থাকে। এছাড়াও নির্দিষ্ট পরিমাণে জল পান করলে শরীরে পৌষ্টিক উপাদান বজায় থাকে এবং দেহের তাপমাত্রাও সঠিক থাকে। একই সঙ্গে খাদ্য হজম করতে এবং আরও নানারকম উপকার করতে সাহায্য করে জল। ক্যালরির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে জানেন কি, শুধু জল পারে আমাদের ওজন সঠিক রাখতে। তাই তো অতিরিক্ত ওজন কমাতে জলকে কাজে লাগাতেই পারেন। আসলে জল পান করলে শরীরের অন্যান্য উপকার যেমন হয়, তেমনই উপকার হয় আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও।
বহু গবেষণার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে দিনে ৩-৪ লিটার জল পান করলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলা যায়। এর মূল কারণ হল, জল পান করলে আমাদের শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরে যায়। ফলে মেদ এবং ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে।
মাংসপেশির শক্তি বাড়ায় : সারাদিন কাজ করতে করতে আমরা কত ক্লান্ত হয়ে যাই, তাই না? আসলে ক্লান্তি আসে আমাদের মাংসপেশির। এর কারণ কাজের চাপে আমাদের মাংসপেশি থেকে ঘামের আকারে প্রচুর পরিমাণে জল বেরিয়ে যায়। ফলে মাংসপেশি ক্লান্ত হয়ে পরে। জলের ঘাটতি কমাতে তাই আমাদের বাইরে থেকে প্রচুর জল শরীরে প্রবেশ করাতে হয়। এতে ক্লান্তি দূর হয় এবং নতুন করে এনার্জি পাওয়া যায়। ত্বকের যত্নে জলের থেকে উপকারি উপাদান ত্বকের জন্য আর কিছুই নেই। শুধু জল পান করাই নয়, জল দিয়ে মুখ ধুলেও আমাদের ত্বকের প্রচুর উপকার হয়। আসলে আমাদের ত্বকের যাবতীয় সমস্যা হয় শরীরের ভিতর জমে থাকা নানা ক্ষতিকারক উপাদান থেকে। আসলে শরীরের ভিতরের বিষাক্ত উপাদান এবং বাইরের নোংরা রোমকূপের মুখ বন্ধ করে দেয়। ফলে ব্রণ তো বটেই এছাড়াও ত্বকে ভাঁজ পড়ে যাওয়া, চোখের চারপাশে কালো দাগ দেখা দেয়। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে নিয়মিত পরিমাণ মতো জল পান করতেই হবে, যাতে শরীর থেকে ক্ষতিকারক উপাদান বেরিয়ে গিয়ে আমাদের ত্বক উজ্জ্বল এবং সমস্যাহীন হতে পারে।
কিডনির কাজ সঠিক রাখে : জল পান করলে কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ে এবং কিডনি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। প্রসঙ্গত, কিডনি প্রতিদিন ২০০ কোয়ার্টজ করে রক্ত পরিশোধন করতে পারে। একইসঙ্গে ব্লাডার থেকে বর্জ্য দূর করে তাঁকে মূত্র আকারে শরীর থেকে বের করে দেয়। এই কারণেই কিডনির কাজ সঠিক ভাবে চালনা করতে প্রচুর পরিমাণে জল পান করার দরকার।
ক্লান্তি দূর করে : ক্লান্তি হলেই কি হাতে চা অথবা কফির কাপ নিয়ে বসে পরেন? জানেন কি, কফি বা চায়ের থেকেও খুব বেশি উপকারি হল জল। জল পান করলে আমাদের ক্লান্তি দূর হয়। এমনকি চোখমুখ থেকে ক্লান্তির ছাপ দূর করতে পারে জল।
ব্যথা দূর করে : মাঝেমাঝেই শরীরে কি ব্যাথা হয়? হাতে ব্যথা, পায়ে ব্যথা, হাঁটু বা কোমরে? অথবা উঠতে বসতে গেলে টান ধরা বা খিঁচ ধরে যায়? জানেন কেন হয় এগুলো? এই সমস্যাগুলি তখনই হয়, যখন আমাদের শরীরে জলের অভাব দেখা যায়। তাই তো এই সমস্যাগুলি দূর করতে সঠিক পরিমাণে জল পান জরুরি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে : জল পান করলে শরীরের ভিতর আদ্রতা বজায় থাকে। তাতে যেমন এনার্জি পাওয়া যায়, তেমনই যে কোনও মরসুমে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে জল। যদিও এখনও এটা প্রমাণিত হয়নি যে জল পান করলে ঠাণ্ডা লাগা বা সর্দি লাগার সমস্যা দূর হয়ে যেতে পারে। তবে পরিমিত হারে জল খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এর কারণ জলের মাধ্যমে শরীর থেকে ক্ষতিকারক উপাদান বেরিয়ে যেতে পারে। ফলে দেহের অন্দরের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
মস্তিষ্কের কাজে সাহায্য করে : একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, যারা পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করেন, তাদের মস্তিষ্কের কাজ সুদৃঢ় হয়। কারণ জল পান করলে যেমন ক্লান্তি দূর হয়। তেমনই, এনার্জি পেতে এবং নতুন করে ভাবনা চিন্তা করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। সবথেকে বড় কথা, শরীরের মধ্যে তরল উপাদানের ভারসাম্য বজায় থাকে বলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ঠিক থাকতে পারে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ব্রেন পাওয়ার বৃদ্ধি পায়।