ছিল বন্দর হয়ে গেলো দ্বীপ, নদী কিন্তু নাম সাগর
কলকাতা টাইমস :
গঙ্গাও না | সাগরও না |কিন্তু কোথায় আছে ‘ সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার | সেই প্রবাদ আজ অকেজো | এ হল গঙ্গাসাগর |এখানেই সাগরের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে গঙ্গা | তবে দ্বীপের নামে ভাগ বসাতে পারল না নদী | তার নাম রয়ে গেল সাগর দ্বীপ | তবে বলা হয় দ্বীপের নামকরণে সমুদ্রের কোনও ভূমিকা নেই | ওটা এসেছে সগর রাজার নাম থেকে |
এখনকার প্রজন্ম সগর রাজার গল্প জানে না | একটা সময় ছিল যখন ছোটদের নির্জন দুপুরে সঙ্গী হত সগর রাজার উপাখ্যান | সেই সগর রাজা যাঁর অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়াকে কপিল মুণির আশ্রমের পাশে লুকিয়ে রেখেছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র | এদিকে রাজার ৬০ হাজার ছেলে তো ঘোড়া খুঁজতে খুঁজতে হাজির সেখানে | তাঁরা তো আর ইন্দ্রের কারসাজি জানেন না | তাই ঘোড়া চুরির অপবাদ দিয়ে বসল কপিল মুণিকে |
আর কোথায় যাবি ! মুণির রাগে ভস্মীভূত হয়ে গেল ৬০ হাজার সন্তান | পরে সগর রাজার নাতি ভগীরথ কপিল মুণির আদেশে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে নিয়ে এল গঙ্গাকে | সেই জলের ছোঁয়ায় ঘটল শাপমুক্তি | জীবন ফিরে পেল সগরের সন্তানাদি || বিশ্বাস, তিনবার ডুব দিলেই ধুয়ে যাবে সব পাপ |
স্নানের পাশাপাশি পুজো দেওয়া হয় কপিল মুণির মন্দিরে | এই মন্দির বাংলায় হলেও এর পরিচালনার রাশ কিন্তু আছে অযোধ্যায় | যেহেতু পুরাণ অনুযায়ী সগর রাজা ইক্ষ্বাকু বংশের এবং রামচন্দ্রের পূর্বপুরুষ, সেহেতু মন্দির পরিচালনা করেন অযোধ্যার সাধুরা |
১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দে টাইফুনে বিধ্বস্ত হয় এই দ্বীপ | তারপর দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল এই এলাকা | পরে ১৭২৭-এ আলেকজান্ডার হ্যামিল্টনের লেখায় ফের উঠে আসে এই জনবিরল দ্বীপের নাম | জানা যায় অতীতে এই দ্বীপে পুণ্যস্নান করতেন ভক্তরা | ক্রমে সাহেবদের নজর পড়ে বাংলার এই উপকূলীয় অংশে | পরে অষ্টাদশ শতকে এখানে তৈরি হয় বন্দর |
জমে ওঠে বন্দরের কাজকর্ম | ১৭৭৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর এখানে নোংর ফেলে পূর্ব মাদ্রাজ থেকে আসা একটি জাহাজ | ভারতের মাটিতে প্রথম পা রাখেন উইলিয়াম হিকি | Memoirs Of William Hicky’ বইতে সবিস্তার বর্ণনা আছে সেই পর্বের | আবার ১৮০৮-এ ইংল্যান্ড ফেরার সময় এই বন্দর থেকেই জাহাজে ওঠেন তিনি | এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল সাগরদ্বীপের বন্দরের গুরুত্ব | কিন্তু পরে কলকাতার খিদিরপুরে তৈরি হয় নতুন বন্দর আর ডক | ক্রমে গুরুত্ব হারায় সাগর বন্দর | পর্যটনের মানচিত্রে জেগে থাকে শুধু পুণ্যক্ষেত্র হিসেবে |