জানেন, তরমুজের বীজ পেটে গেলে কী হবে?
কতজনে কত কি শিখিয়েছে আমাদের। এটা নয়, ওটা, ওটা নয় এটা। তবে যেই শিখিয়ে থাকুন না কেন, সব ক্ষেত্রেই যে ঠিক শিখিয়েছেন এমন নয় কিন্তু! তবে শেখানোর বিষয়টির উপর যদি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকে তবে সেটা বিশ্বাস করাই উত্তম। এই যেমন তরমুজের কথাই ধরুন। এতদিন পর্যন্ত জেনে এসেছি জল ভর্তি এই ফলটি খাওয়ার সময় মুখ থেকে ফু করে বীজটা তীর বেগে সামনে ছুড়ে মারা। কারণ পেটে যদি তরমুজের বীজ যায়, তাহলে পর দিনে পেটে যন্ত্রণা তো হবেই, হতে পারে আরও অনেক কিছু! কিন্তু মজার বিষয় কি জানেন, এই ধরণাটা সিকিভাগও সত্যি না। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে শরীর গঠনে তরমুজ যতটা কাজে আসে, তার থেকে কোনো অংশে কম কাজে আসে না এর বীজ!
তরমুজের বীজে আছে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম, কপার, সেলেনিয়াম এবং জিঙ্ক, যা হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে তোলে। একইসঙ্গে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে ভাববেন না এখানেই শেষ, আরও নানা উপকারে লেগে থাকে এই প্রকৃতিক উপাদানটি। যেমন ধরুন…
১. হার্ট অ্যাটাক রোধ করে : তরমুজের বীজে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। প্রসঙ্গত, কেন্টাকি স্টাডি অনুসারে তরমুজের বীজে ম্যাগনেসিয়াম ছাড়াও রয়েছে সিটরুলিন নামে একটি উপাদান, যা অ্যারোটিক ব্লাড প্রেসারকে কমিয়ে হার্টকে চাঙ্গা রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যাদের পরিবারে ক্রনিক হার্টের রোগের ইতিহাস রয়েছে তারা তরমুজ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বীজটা খেতেও ভুলবেন না যেন!
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে : পরিমাণমতো তরমুজের বীজ নিয়ে হালকা করে ভেজে নিয়ে যদি খেতে পারেন, তাহলে শরীরে আয়রন এবং ভিটামিন বি-এর ঘাটতি কমতে শুরু করে। ফলে কেউ যদি অ্যানিমিয়া রোগে ভুগতে থাকেন, তাহলে নিমেষে সেই রোগ সেরে যায়। কারণ, আয়রণ শরীরে প্রবেশ করা মাত্র লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তসল্পতার প্রকোপ কমতে শুরু করে। অন্যদিকে ভিটামিন ‘বি’ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আর একবার ইমিউনিটি যদি বেড়ে যায়, তাহলে শুধু সংক্রমণ নয়, আরও একাধিক রোগের আক্রমণ থেকে সহজেই রক্ষা পায় শরীর।
৩. বন্ধ্যাত্ব দূর হয় : বাবা হওয়ার কথা ভাবছেন নাকি? তাহলে আজ থেকেই তরমুজের বীজ খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় জিঙ্ক। এই খনিজটি স্পার্ম কাউন্ট বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। ফলে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যাই হয় না।
৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে : সম্প্রতি হওয়া এর ইরানিয়ান স্টাডি অনুসারে তরমুজের বীজে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা শরীরে প্লাজমা গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেইসঙ্গে এতে উপস্থতি ওমেগা-৬ ফ্য়াটি অ্যাসিড ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা এতটাই বাড়ায়ে দেয় যে ডায়াবেটিস রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
৫. ব্রেন পাওয়ার বাড়ে : তরমুজের বীজে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই খনিজটি স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু কেস স্টাডিতে দেখা গেছে দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি থাকলে স্মৃতিশক্তি নষ্ট হতে শুরু করে। ফলে এক সময়ে গিয়ে অ্যালঝাইমারস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই এই পুষ্টিকর উপাদানটির ঘাটতি যাতে কোনো সময় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন।
৬. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায় : তরমুজের বীজের অন্দরে থাকা জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়াম হজমে সহায়ক অ্যাসিডের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের মতো রোগ নিমেষে কমে যায়। প্রসঙ্গত, বেশ কিছু কেস স্টাডি অনুসারে শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি দেখা দিলে ডায়ারিয়ার মতো রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ারও আশঙ্কাও থাকে। তাই বিষয়টি মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন।