বেশি প্রোটিন মানেই সুস্থ ভাবছেন? মারাত্মক ক্ষত কিন্তু
কলকাতা টাইমস :
আজকের দিনে প্রায় সবাই স্বাস্থ্য সচেতন। মেয়েরা চায় ছিপছিপে চেহারা আর ছেলেরা চায় সুঠাম দেহ। তাই শরীরচর্চার পাশাপাশি ডায়েট করেন সবাই। আর এই ডায়েট করতে গিয়ে অনেকেই প্রয়োজনের থেকে বেশি প্রোটিন খেয়ে ফেলেন। খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে প্রোটিন অন্যতম। শরীরের তাপ উৎপাদন, দেহের হজমক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, দেহতন্তুর ক্ষতিপূরণ ও শরীরস্থ উপাদানসমূহ নির্মাণ প্রোটিনের কাজ। ওজন হ্রাসেও অবদান রাখে প্রোটিন। তাই কয়েক কেজি ওজন কমাতে প্রোটিনকে সবাই ডায়েটে রাখেন। কিন্তু সাবধান! প্রোটিনের অত্যধিক গ্রহণের ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই প্রতিদিন আপনার শরীরে যতটা পরিমাণ প্রোটিন দরকার তার বেশি প্রোটিন গ্রহণ না করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বেশি প্রোটিন গ্রহণের ফলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে আপনার শরীরে! তাই সাবধান হন আজ থেকেই।
কতটা প্রোটিন খাবেন
আপনার শরীরে কতটা প্রোটিন দরকার তা নির্ভর করে আপনার বয়স, লিঙ্গ, আপনি কতটা শারীরিক কসরত করেন প্রতিদিন তার ওপর। একজন সাধারণ মানুষের যতটা প্রোটিন দরকার তার থেকে বেশি প্রোটিন দরকার হয় একজন অন্তঃসত্ত্বার বা যিনি শিশুকে বুকের দুধ পান করান। চিকিৎসকদের মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্কের প্রতি কেজি ওজনে ০.৮ গ্রাম প্রোটিন দরকার হয়। এই পরিমাণ প্রোটিন তাদের প্রতিদিন খাওয়া দরকার। কারুর যদি প্রতিদিন শারীরিক কসরত বেশি হয় তাহলে তাঁকে নিজের প্রতি ওজন পিছু ১.৩ গ্রাম থেকে ১.৬ গ্রাম প্রোটিন খেতে হবে নিয়মিত। কোনওভাবেই প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ ১.৬ গ্রামের বেশি হওয়া উচিত না। অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হবে।
অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে যে ঝুঁকিগুলো থাকে
১) ওজন বেড়ে যাওয়া
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বা ওজন কমাতে অনেকেই বেশি প্রোটিন খান। কিন্তু অতিরিক্ত প্রোটিন হিতে বিপরীত হতে পারে। বেশি প্রোটিন ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, উচ্চমাত্রার প্রোটিন ডায়েট হয়তো অল্প সময়ে আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে, কিন্তু পরে বাড়িয়ে দেবে আপনার ওজন যা আর কমতে চাইবে না! সাত হাজার পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ওপর একটি গবেষণা করা হয়েছিল সেখানে দেখা গেছে যারা বেশি প্রোটিন গ্রহণ করেন তাঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশের ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে, যারা কম প্রোটিন গ্রহণ করেছেন তাদের তুলনায়।
২) নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ
কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিমাণ সীমাবদ্ধ করে আপনি যদি প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ বাড়ান তখন আপনার শরীরে কিটোসিস দেখা দেবে। এর ফলে আপনার মুখে বিশ্রী গন্ধ সৃষ্টি হবে। এই গন্ধ শরীরের ভিতর থেকে আসে তাই ব্রাশ করে, মাউথ ফ্রেশনার ব্যবহার করেও গন্ধ দূর হয় না। যা আপনার জন্য অপ্রীতিকর হয়ে দাঁড়াবে।
৩) কোষ্টকাঠিন্য
অতিরিক্ত প্রোটিন সেবন ও কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খেলে ফাইবার কম যায় শরীরে। কম ফাইবার গ্রহণের ফলে হজমের সমস্যা, কোষ্টকাঠিন্য দেখা যায়। বেশি প্রোটিন হিসেবে দুগ্ধজাতীয় খাবার অতিরিক্ত সেবন করলে ডায়রিয়া হতে পারে আপনার।
৪) ব্রেন ফগিং
মাথা ঘোরাও অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়ার লক্ষণ। বেশি প্রোটিন খেলে কার্বোহাইড্রেট কম খাবেন আপনি, নাহলে ক্যালোরির মাত্ৰা ঠিক থাকবে না। কার্বোহাইড্রেট কম গ্রহণের ফলে আপনার মস্তিস্ক কম সুগার পাবে, যার ফলে মস্তিস্ক সংকুচিত হয় এবং আপনি অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। কার্বোহাইড্রেট মস্তিষ্কের শক্তির প্রধান উৎস এবং শরীরে এই পুষ্টির ঘাটতি আপনার মেজাজকে প্রভাবিত করতে পারে।
৫) কিডনি, হার্ট-এর সমস্যা
অতিরিক্ত প্রোটিন খেলে কিডনির ক্ষতি হয়। ২০১২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কম কার্বোহাইড্ৰেট এবং হাই প্রোটিন ডায়েটের ফলে কিডনিতে প্রভাব পড়ছে। হার্ট-এর সমস্যাও বাড়ায় প্রোটিন। বিশেষ করে রেড মিট, ডেয়ারি প্রোডাক্ট অতিরিক্ত খেলে দেখা দেবে হার্টের সমস্যা।
৬) ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় প্রোটিন
হাই প্রোটিন ডায়েট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রসেসড মিট অতিরিক্ত খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার, মূত্রথলিতে ক্যান্সার হতে পারে।
তাই প্রোটিন খেতে হবে মেপে। ঠিক ততটুকুই প্রোটিন খান যতটা আপনার শরীরে দরকার। নাহলে বিপদে পড়বেন আপনি!