হঠাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে চান তো ঘুম কমান!
কলকাতা টাইমস :
দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বাঁচতে কে না চায়। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় আমাদের কিছু ভুল। যেমন ঘুমের কথাই ধরুন না। দিনে কতক্ষণ ঘুমলে শরীর সুস্থ থাকবে, সেই নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেই ঠিক মতো জানেন না। তাই তো ইচ্ছা মতো ঘুমতে থাকেন অনেকেই। কেউ ৬ ঘন্টা ঘুমিয়েই লেগে পরেন দৈনন্দিন কাজে, আর কারও কারও তো ১০-১২ ঘন্টার আগে ঘুম ভাঙতেই চায় না। এই দুই ক্ষেত্রেই কিন্তু শরীর ভাঙতে শুরু করে। কারণ একাধিক গবেষণায় একথা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে যে দৈনিক ৭ ঘন্টা ঘুমলে শরীর এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতার উন্নতি ঘটে। এর থেকে কম বা বেশি ঘুমলেই কিন্তু বিপদ!
তাহলে কি বেশি ঘমনো শরীরের পক্ষে খারাপ? একেবারেই! ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন প্রকাশিত এক নথি অনুসারে প্রাপ্ত বয়স্কদের দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা ঘুমতেই হবে। এর থেকে বেশি ঘুমলে শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করবে নানা মারণ রোগ, ফলে আপনার আয়ু লাফিয়ে লাফিয়ে কমতে শুরু করবে। তাই তো দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বাঁচতে ৭ ঘন্টার বেশি না ঘুমনোই উচিত।
প্রসঙ্গত, কম ঘুমনোও কিন্তু শরীরে পক্ষে ভাল নয়। দিনে ৫ ঘন্টার কম ঘমলেও শরীর খারাপ হতে শুরু করে। তাই তো নানাবিধ রোগ থেকে দূরে থাকতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠিক মতো ঘুমনের পক্ষে সাওয়াল করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
এখন প্রশ্ন হল কীভাবে অতিরিক্ত ঘুম আমাদের শরীরের ক্ষতি করে? এই উত্তর পেতে গেলে যে চোখ রাখতে হবে বাকি প্রবন্ধে!
১. স্মৃতিশক্তি কমে যাবে: একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে ৯ ঘন্টার বেশি ঘুমলে ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে অ্যালঝাইমারের মতো মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।
২. অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে: ১৮-৫৯ বছর বয়সিদের দিনে কখনই ৯ ঘন্টার বেশি ঘমানো উচিত নয়। কারণ এমনটা করলে অবসাদে বা ডিপ্রেশন আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। আর একথা নিশ্চয় সকলেই জানেন যে আমাদের দেশে গত কয়েক বছরে অবসাদে আক্রান্ত হয়ে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বাকি দেশের থেকে বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়ছে। তাই সাবধান! নিজেকে এই দীর্ঘ লিস্টের এক জন বানাবেন না দয়া করে।
৩. ডায়াবেটিস: ৯ ঘন্টার বেশি ঘুমলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে বেশিক্ষণ ঘমলেই শরীরে শর্করা সম্পর্কিত ইনটলারেন্স তৈরি হয়। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। আর একথা তো সকলেরই জানা যে, একবার কেউ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে একে একে আরও সব মারণ রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে। ফলে কম বয়সে মৃত্যুর আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
৪. হার্টের রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়: ঘুমনোর সময় হার্টে রক্ত সরবরাহের মাত্রা খুব কমে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে এমনটা হতে থাকলে হার্টের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে নানাবিধ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, গত কয়েক দশকে সারা বিশ্বেই কম বয়সিদের মধ্য়ে হার্টের রোগের প্রকোপ খুব বৃদ্ধি পয়েছে। এমনটা হওয়ার পেছনে বেশি মাত্রায় ঘুম যে অন্যতম প্রধান কারণ, তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না।
৫. ওজন বৃদ্ধি পায়: ৫ ঘন্টার কম এবং ৯ ঘন্টার বেশি ঘুমলে শরীরে মেদ জমার হার বেড়ে যায়। আর একথা নিশ্চয় আপনাদের জানা আছে যে, ওবেসিটি বা অতিরিক্ত ওজনের কারণে ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ সহ একাধিক মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই দীর্ঘ জীবন পেতে চাইলে যেমন কম ঘুমানো উচিত নয়, তেমিন বেশিক্ষণ ঘুমনোর অভ্যাস থেকেও নিজেদের দূরে রাখা বাঞ্ছনীয়।
৬. মা হওয়ার পথে বাঁধার সৃষ্টি হয়: মেয়েরা বেশিক্ষণ ঘুমলে তাদের শরীরে নানা বদল আসতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ফার্টিলিটিও হ্রাস পায়। যে কারণে মা হতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। তাই মা হওয়ার পরিকল্পনা করলে ৯ ঘন্টার বেশি একেবারেই ঘুমবেন না কিন্তু!