নিয়মিত কম ঘুম হচ্ছে? সাবধান! এই ৭ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
আজকালকার জীবনযাত্রায় বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব দেখা যায়। রাতে মোবাইল দেখে বা টিভি দেখে ঘুমাতে দেরি হওয়া, আর পরেরদিন সকালে তাড়াতাড়ি উঠে পড়া, ফলে ঠিকভাবে ঘুম হয় না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, দিনে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। কিন্তু আমরা খুব কমই এই পরামর্শ মেনে চলি। আর দিনের পর দিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাবে, সারাদিন ক্লান্তি ও দুর্বল অনুভব হওয়া, কাজে মন না বসা, রাতে ঘুম না আসা, হজমে সমস্যা, আরও অনেক কিছু হতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমালে তা স্বাস্থ্যের উপর অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর ফলে বিভিন্ন শারীরিক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের অভাবে কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
১) শেখার ক্ষমতা এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া
ঘুমের অভাব, স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতি উভয়ের উপরেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব দেখা দিলেই হিপোক্যাম্পাসের নিউরনের মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারে, এটি হল আমাদের স্মৃতিশক্তির সাথে যুক্ত মস্তিষ্কের এলাকা। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব মস্তিষ্কের বিটা-অ্যামাইলয়েড ফ্লাশ করার ক্ষমতাকেও নষ্ট করতে পারে, এটি মস্তিষ্কের কোষের মধ্যে তরলে থাকা একটি বিষাক্ত প্রোটিন। যার ফলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং অ্যালজাইমারের মতো রোগ দেখা দিতে পারে। রোজের এই ৪ অভ্যাসেই বাড়ে ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি!
২) মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হওয়ার অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়া। একজন ব্যক্তির শরীর যখন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম থেকে বঞ্চিত হয়, তখন এটি সেই ব্যক্তির সৃজনশীলতা, কর্মদক্ষতা, মনোযোগের ক্ষমতা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে।
৩) মেজাজের পরিবর্তন হওয়া
ঘুম কম হওয়ার ফলে মেজাজের পরিবর্তন বা মুড স্যুইং হয়। এছাড়াও, উদ্বেগ এবং বিষন্নতাও দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রায় ৬৫- ৯০ শতাংশ বিষণ্নতায় আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেই, ঘুমের সমস্যা রয়েছে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম। আর, বিষণ্নতাও অনিদ্রার কারণ হতে পারে।
৪) রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে
একজন ব্যক্তি যদি দিনে পাঁচ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাহলে তার উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। শরীরের ইনসুলিন নিঃসরণ করার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এই ইনসুলিন হরমোন, রক্তের শর্করার কমাতে সহায়তা করে। তাই যারা পর্যাপ্ত ঘুমান না, তারা প্রায়ই রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রায় ভোগেন এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
৫) হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে
রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, উভয়ই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। এর ফলে হার্টের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে পারে। হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে।
৬) অনাক্রম্যতা হ্রাস পায়
আপনি যখন ঘুমান, তখন আপনার ইমিউন সিস্টেম অ্যান্টিবডি এবং সাইটোকাইনস-এর মতো প্রতিরক্ষামূলক, সংক্রমণ-প্রতিরোধী পদার্থ তৈরি করে। এটি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সাথে লড়াই করে। কিন্তু পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, আপনার ইমিউন সিস্টেমকে তার শক্তি তৈরি করতে বাধা দেয়। তাই সঠিক পরিমাণ ঘুম না হলে, আমাদের শরীর ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম নাও হতে পারে। ফলে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
৭) ওজন বৃদ্ধি পায়
পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার অন্যতম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল, অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি হওয়া। কারণ যে রাসায়নিক আপনার মস্তিষ্কে পেট ভর্তি থাকার সংকেত পাঠায়, সেটি সঠিকভাবে কাজ করে না। তাই ঠিকভাবে ঘুম না হলে, পেট ভর্তি থাকা সত্বেও বারে বারে খিদের অনুভূতি হয় এবং এর থেকে অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ওজনও বৃদ্ধি পায়। অত্যধিক খাওয়া এবং ব্যায়াম না করার পাশাপাশি, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির আরেকটি কারণ। কারণ ঘুমের অভাব হলে শরীরচর্চা করতে খুব ক্লান্ত বোধ হতে পারে। ফলে শারীরিক কার্যকলাপ হ্রাস আপনার ওজন বাড়াতে পারে।