টানা ৫ দিন ব্রেকফাস্ট না করলে কি হতে পারে জানেন?
কলকাতা টাইমস :
দিনের মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মিল হল ব্রেকফাস্ট। শরীরের সচলতা থেকে রোগমুক্তি সবই নর্ভর করে এই সময় কী খাবার, কতটা পরিমাণে খাওয়া হচ্ছে তার উপর। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হল সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় সিংহভাগই ব্রেকফাস্ট ঠিক মতো করেন না। ফলে যা হওয়ার তাই হয়! একদিকে যেমন শরীর ভাঙতে শুরু করে, তেমনি একাধিক রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধে। ফলে লগু পাপে গুরুদণ্ড হয়ে যায়। অর্থাৎ হঠাৎ মৃত্যুর আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
একেবারেই ঠিক শুনেছেন, ব্রেকফাস্টকে আমরা যতটা তাচ্ছিল্যের চোখে দেখি না কেন। সকালবেলা খাবার না খাওয়ার ফল যে কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা এই প্রবন্ধে চোখ রাখলেই বুঝতে পারবেন। আর সব থেকে ভয়ের বিষয় হল, মাত্র ৫ দিন ব্রেকফাস্ট না করলেই কিন্তু এতটা ক্ষতি হয়ে যেতে পারে শরীরের।
তাই সাবধান! হাবার্ড ইউনিভার্সিটির করা এক গবেষণা অনুসারে যারা নিয়মিত ব্রেকফাস্ট করেন না, তাদের হাঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে হরমোনাল ইমব্যালেন্স সহ আরও নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন…
১. ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে: সকালে কিছু না খেয়েই যারা দিন শুরু করুন, তাদের শরীরে গ্লকোজ টলারেন্স বেড়ে যায়, যা এক সময়ে গিয়ে ইনসুলিন রেজিটেন্স হওয়ার পথকে প্রশস্ত করে করে। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। আসলে অনেকটা সময় না খেয়ে হঠাৎ করে পেট পুরে খেয়ে ফললে শরীরের উপর মারাত্মক চাপ পরে। সেই সঙ্গে দেহে শর্করার মাত্রা এতটাই অস্বাভাবিক হাকে ওঠা-নামা করে যে ইনসুলিনের পক্ষে ঠিক মতো কাজ করা সম্ভবই হয় না। ফলে ধীরে ধীরে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে। আর এমনটা হতে থাকলে এক সময়ে গিয়ে ডায়াবেটিসের মতো রোগ শরীরে এসে বাসা বাঁধে।
২. ওজন বৃদ্ধি পায়: অনেকেই ভাবেন কম খেলে ওজন কমে। এই ধরণা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। বরং যত কম খাবেন, তত বেশি বেশি করে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। কেন এমনটা হয় জানেন? ব্রেকফাস্ট না করার কারণে লাঞ্চের সময় আসতে আসতে এতটাই ক্ষিদে পেয়ে যায় যে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়ে যায়। ফলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমা হতে হতে এক সময়ে গিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সেই কারণেই তো চিকিৎসকেরা ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ এবং ডিনার, এই তিনটে সময়ে ভুলেও খালি পেটে থাকতে মানা করেন।
৩. হজম ক্ষমতা কমে যায়: খাবার হল জ্বালানি, যাকে কাজে লাগিয়ে শরীর সচল থাকে। সেই কারণেই তো সকাল বেলা কিছু না খেলে শরীরের কাছে নির্দেশ যায় কম কম কাজ করার জন্য। কারণ জ্বালানি তো নেই, বেশি বেশি করে কাজ করবেই বা কীভাবে! তাই তো জ্বালানি বাঁচাতে ধীরে ধীরে শরীর কম কাজ করতে শুরু করে। এমনটা হওয়া মাত্র বেসাল মেটাবলিক রেট কমে যাওয়ার কারণে হজম ক্ষমতাও কমতে শুরু করে দেয়। ফলে একদিকে যেমন ওজন বৃদ্ধি পায়, তেমনি মেটাবলিজম কমে যাওয়ার কারণে গ্যাস-অম্বল এবং বদহজমের মতো সমস্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
৪.বুদ্ধি কমে যায়: ব্রেকফাস্ট না করলে শরীরে গ্লকোজ লেভেল কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্র কমে যাওয়ার কারণে ব্রেনে পুষ্টির ঘাটতি হতে শুরু করে। ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধির ধারও কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি একটি গবেষণা চলাকালীন দেখা গিয়েছিল যেসব বাচ্চা ব্রেকফাস্ট করে স্কুলে যায়, তারা যত দ্রুত শিখতে পারে, তত তাড়াতাড়ি কিন্তু সেই সব বাচ্চারা নিজের কাজ করতে পরে না, যারা ব্রেকফাস্ট স্কিপ করে। তাই মনোযোগ এবং বুদ্ধি বাড়াতে ব্রেকফাস্ট না করা কিন্তু কোনো ভাবেই চলবে না।
৫. এনার্জি লেভেল কমতে শুরু করে: ব্রেকফাস্ট আমাদের শরীরের ২৫ শতাংশ এনার্জির চাহিদা পূরণ করে। তাই সকাল সকাল পেট খালি রাখার অভ্যাস করলে দেহে এই পরিমাণ এনার্জির ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে শরীর, রিজার্ভে রাখা এনার্জিকে কাজে লাগাতে শুরু করে। এমনটা হওয়া মাত্র দেহের কর্মক্ষমতা কমেই, সেই সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাও চলে যায়। তাই কর্মক্ষেত্রে সফল হতে ব্রেকফাস্টের সঙ্গ ছাড়া কিন্তু চলবে না।
৬. রাগ বাড়তে থাকে: লক্ষ করে দেখবেন যখন পেটে ক্ষিদের আগুন জ্বলতে থাকে, তখন মন মেজাজও কেমন বিগড়ে যায়। তাই তো সকাল সকাল খাবার না খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীর ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে মন মেজাজও খারাপ হতে শুরু করে। ফলে কোনও কিছুতেই মন বসতে চায় না। সম্প্রতি ব্রিটেনে হেওয়া একটি গবেষণায় দেখা গেছে ব্রেকফাস্ট করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যা মনকে একেবারে চাঙ্গা করে তোলে। আর যখন কেউ প্রাতঃরাশ করেন না, তখন একেবারে উল্টো ঘটনা ঘটে। তাই সকালটা যদি খুশি মনে শুরু করতে চান, তাহলে ভুলেও ব্রেকফাস্টের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবেন না যেন!