টিভি দেখা ছেড়ে দেখুন, জীবনে ঘটবে এই ১৩ পরিবর্তন

এক বিখ্যাত রিপোর্টার ক্যাডেন্স ব্যামবেনেক টিভি দেখা ছেড়েছেন দু্ই বছর আগে। টিভি দেখাকে অনর্থক ও সময় অপচয়কারী কাজ মনে করেই তিনি তা ছেড়ে দেন। এছাড়া তিনি কল্পনার জগৎ ছেড়ে বাস্তবে নিজের একটি জগৎ গড়ার জন্যও টিভি দেখা ত্যাগ করেন বলে জানান। এরপর তিনি যে ১৩টি অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন:
১. যখন আমি বলি আমি আর টিভি দেখিনা তখন অনেকেই হতভম্ব হয়ে যান। তারা ঠিক বুঝতে পারেন না যে আমার কথার উত্তরে তারা কী বলবেন। অনেকে বিষয়টিকে এক ধরনের নৈতিক কাজ বা ধার্মিক কোনো আত্ম-অস্বীকৃতি হিসেবে দেখেন। কিন্তু তাদের কোনো ধারণাই ঠিক নয়। টিভি দেখা ছেড়ে দেওয়ার পর আমি আমার জীবন নিয়ে এখন অনেক বেশি সুখি।
২. আমাদের সংস্কৃতিতে বিনোদনের বিষয়টি গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট। কিন্তু টিভি দেখা ছেড়ে দিয়ে আমি মূলত লোকের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই সহজভাবে মেশার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিটি ছুড়ে ফেলেছি। তবে কারো সঙ্গে সংযোগে আমি অন্য অনেক সাধারণ ভিত্তি পেয়েছি। আর টিভিতে দেখায় না এমন বিষয়ে আলাপ-আলোচনাকেই আরো বেশি অর্থপূর্ণ মনে হয় আমার। আমি জীবনে গেম অফ থ্রোনস এর একটি এপিসোডও দেখিনি।
৪. বিজ্ঞাপনগুলো এখন সত্যিই অদ্ভুৎ এবং অতি আধুনিক মনে হয়। আর আমি ভাবি কী বিস্ময়কর সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিজ্ঞাপনগুলোর এমন আধুনিক চেহারা দেওয়া হচ্ছে। আমার ধারণা কোনো বিষয়ে আপনি মনোযোগ দেওয়া বন্ধ করে দিলে সেগুলো ভবিষ্যতে চলে যায়। আর আপনি তখনও সেই আগের জায়াগাতেই পড়ে থাকেন।
৫. কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমি টিভি দেখা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে দিনের বেলায় আমি কোনো বাড়তি অবসরের সময় পাচ্ছি না। আপনি কোনো এক ধরনের বিনোদন ছেড়ে দিলে অন্য একটি এসে সে খালি জায়গাটি পূরণ করবে। এছাড়া অন্য কোনো না কোনো কাজে আপনার সময় কেটে যাবে।
৬. তবে আমি বুঝতে পেরেছি যে টিভি দেখার মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে একটি বন্ধনও তৈরি হয়। পরিবারের সদস্য বা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে বসে টিভি দেখা এক ধরনের বন্ধনমূলক তৎপরতাও বটে।
৮. টিভি দেখা ছেড়ে দেওয়ায় আমি আরো বেশি সক্রিয় হয়েছি এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের তৎপরতায় নিজেকে আরো বেশি সংশ্লিষ্ট করতে পারছি। টিভি দেখা ছেড়ে দেওয়ার পর আমি বিস্ময়কর কিছু মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেয়েছি। এছাড়া বিভিন্ন আনন্দদায়ক অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গেও যুক্ত হতে পেরেছি। গত বছর প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীদের আয়োজনে একটি উদ্ভাবনী প্রতিযোগীতার সংগঠক হিসেবে ভুমিকা পালন করেছি আমি। ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন অ্যাট ম্যাডিসনে ওই প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রান্সসেন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামে উদ্যোগে উৎসাহদানকারী একটি সংগঠনের বোর্ড সদস্য হিসেবে আমি ওই প্রতিযোগিতার আয়োজনে কাজ করেছি।
৯. টিভি দেখা ছেড়ে দেওয়ায় আমি নিজের ভবিষ্যৎ কর্মজীবন নিয়ে আরো বেশি চিন্তা করার ও কাজ করার সুযোগ পাই। গত ফল সেশনে হয়তো একটি টিভি এপিসোড দেখেই সময় পার করে দিতে পারতাম। কিন্তু তা না করে বরং ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়াতে ওমেন-ইন-মিডিয়া নামের একটি ইভেন্টে যোগদানের জন্য ভ্রমণ স্কলারশীপের আবেদন করি।
এতে আমি লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি রাউন্ড ট্রিপ টিকেট পাই। সেখানে আমি ভার্চুয়াল বাস্তবতা এবং আরো অনেক তরুণ নারীর সঙ্গে বিষয়ের গভীরে গিয়ে সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা লাভ করি। আর সেখান থেকেই আমার প্রযুক্তি বিষয়ে লেখালেখি করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। যা আমি এখন করছি।
১০. এছাড়া আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় বই পড়ায় ব্যয় করছি। ছোটবেলায় বই পড়ার পোকা ছিলাম আমি। কিন্তু হাইস্কুলে উঠে বই পড়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তবে টিভি দেখা বন্ধ করে দেওয়ার পর আমি পুনরায় বই পড়ায় অনেক সময় ব্যয় করছি।
১২. টিভি দেখা ছেড়ে দেওয়ার পর আমি করতে চাইতাম এমন অনেক কাজ শুরু করি। টিভি দেখা ছেড়ে দেওয়ার সময়ে আমার তেমন বিশেষ কোনো কাজের দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু এরপর আমি অনেক কাজের দক্ষতা অর্জন করি এবং অভিজ্ঞতা লাভ করি। যদিও অনেক ভুল ত্রুটির মধ্য দিয়েই আমাকে এগোতে হয়েছে। বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা লাভ করার মধ্য দিয়ে আমি এখন আমার জীবনটাকে কোন দিকে নিয়ে যেতে হবে তার একটি পরিষ্কার ধারণা ও চিত্র পেয়েছি।
১৩. আর টিভি দেখা ছেড়ে দেওয়ার পর গত দু্ই বছরে আমার দৃষ্টিভঙ্গিতেও বড় এবং নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। টিভি দেখে যদি আপনি সুখ পান তাহলে তাতে সময়ের খুব বেশি অপচয় হয়েছে বলা যায় না। তবে আমি এখন আর টিভি দেখে বা ইন্টারনেটে সময় কাটাতে চাই না; অন্তত যে সময়টুকু আমি ভ্রমণ, বই পড়ে বা কারো সঙ্গে খোশগল্প করে কাটাতে পারি সে সময়টুকুতে তো নয়ই।