November 22, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

শিশুর হজমের সমস্যা হবে উধাও যদি …

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :

বাচ্চাদের হজমে সমস্যা হলে একসঙ্গে অনেক অসুবিধা হয়। পেটে ব্যথা, বমি, গ্যাসট্রাইটিস সব মিলেমিশে বেশ জটিল আকার ধারণ করে। জন্মের ছয়মাস পর থেকেই বাচ্চার ফুড হ্যাবিট সঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারলে এর অনেকটাই সামলে দেওয়া সম্ভব। বাইরের খাওয়াদাওয়া কমিয়ে বাড়ির পুষ্টিকর খাওয়া যথাযথ পরিমাণে খাওয়ান। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সারাদিনে খাবার ভাগ করে দিন। দেখবেন হজমের সমস্যা অনেকটাই সমাধান করতে পেরেছেন। শিশুদের হজমের সমস্যা নিয়ে কলকাতার ম্যাগাজিন সানন্দা-য় বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ডা. শান্তনু রায়।

কেন হয়

** অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড ও বাইরের খাবার খাওয়ার কারণে বাচ্চাদের মধ্যে গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রিফ্লেক্স ডিজিজের সমস্যা দেখা যায়। দুইবছরের বাচ্চা থেকে বড় বাচ্চাদের মধ্যেও তাই হজমের গোলমাল হচ্ছে। এখন দুই-তিন বছরের বাচ্চারাও জাঙ্ক ফুড খাচ্ছে। টিফিনে চিপস, ফ্রায়েড স্ন্যাকস দেওয়া হয়। হজমের গোলমালের সঙ্গে বাচ্চাদের পেটে ব্যথা, বমি হয়। এই বয়সের বাচ্চাদের হজমের সমস্যা হচ্ছে, সেটা অনেক মা-বাবাই বুঝতে চান না।

** ঠিকসময় না খেলে এমনকী অধিক সময় খালি পেটে থাকলেও হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ধরুন, সকালে খাবার খাওয়ার পরে বাচ্চা স্কুলে গেল। তারপর টিফিন খেলই না। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ভাত খেল। এই দীর্ঘ গ্যাপের ফলে অ্যাসিড সিক্রেশন বাড়ছে এবং গ্যাসট্রাইটিস ডেভলপ করছে। জাঙ্ক ফুড থেকে অনেকসময় পেটে ইনফেকশনও হচ্ছে। ইনফেকশন থেকে ডায়রিয়া হতে পারে। বারবার ইনফেকশন হলে বাচ্চার হজম ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

** কৃমি থেকে পেট ব্যথা হওয়া বোধহয় বাচ্চাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। কৃমি এক ধরনের প্যারাসাইট যা শরীরে ঢুকে সাধারণত অন্ত্রে বাসা বাঁধে। আপনার বাচ্চা যা খাচ্ছে তার ওপর কৃমি বেঁচে থাকে এবং বড় হয়। অন্ত্রে থাকাকালীনই কৃমি ডিম পাড়ে এবং সেখান থেকে নতুন কৃমির জন্ম হয়। এই ভাবেই ক্রমশ কৃমির বংশ বৃদ্ধি হতে থাকে। স্টুল টেস্ট করে বোঝা যায় কৃমি হয়েছে কি না। কৃমির প্রধান চিকিত্সা ডিওয়র্মিং। তবে শুধু বাচ্চার ডিওয়র্মিং করালেই হবে না। ৬ মাস অন্তর বাড়ির বাচ্চার সঙ্গে বাড়ির সকলের ডিওয়র্মিং করা জরুরি।

** জিয়ার্ডিয়া এক ধরনের ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট ইনফেকশন। যদি কোনওভাবে জিয়ার্ডিয়া লাম্বলিয়া (এক ধরনের প্যারাসাইট) ক্ষুদ্রান্ত্রের ওপরের অংশে বাসা বেঁধে ফেলে তখন পেট ব্যথা, পেট খারাপ, বমি হতে পারে। স্টুল টেস্ট করে জিয়ার্ডিয়া নির্ণয় করা হয়। ৫-৭ দিন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া জরুরি। এ ছাড়াও বাচ্চা যাতে প্রচুর পরিমাণে পানীয় খায় (সফ্ট ড্রিংক নয়), সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

** এইচ পাইলোরি বলে একধরনের ইনফেকশন হয়। ইউইএস টেস্ট করে জানা যায় এর কারণে গ্যাসট্রাইটিস হয়েছে কিনা।

প্রতিরোধ

** ছয়মাসের পর বাচ্চা প্রথম সলিড ফুড খেতে শুরু করে। ৯ মাস পর্যন্ত দিনে ৩ বার সেমি সলিড খাবার খাওয়া জরুরি। ৯ মাসের পরে দিনে ৪ বার সেমি সলিড খাবার খাওয়া উচিত। বাচ্চা সলিড খাবার না খেলে শুধু দুধ খাইয়ে রেখে দেওয়া ঠিক নয়। এতে হয়তো ওজন বাড়বে, কিন্তু বাচ্চার হজম ক্ষমতা গড়ে উঠবে না। পরবর্তীকালে বাচ্চাদের হজমের ক্ষমতা কমে যায়। এই কারণে ‘উইনিং’ ঠিকমতো হওয়া জরুরি। ছয়মাসে প্রথম সেমি সলিড ডায়েট শুরু করা যায়। হজম হলে তারপর আবার আর একটা সেমি সলিড খাবার শুরু করলাম। এইভাবে নতুন খাবার শুরু করবেন। একসঙ্গে সব খাবার শুরু করবেন না। স্লো অ্যান্ড স্টেডি প্রসেস হতে হবে। ছয়মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত যেন উইনিংটা ঠিকমতো হয়। দু’ বছর পর থেকে প্রপার ডায়েট মেনটেন করতে হবে। শুধু দুধ বা হেলথ ড্রিংক দিয়ে সব চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়।

** বাচ্চাদের ফুড হ্যাবিটও অনেকসময় হজমের সমস্যা ঘটায়। অনেক মা-বাবাই ভাবেন যে বেশি খেলেই বোধহয় ভাল। বেশি খাওয়া নয়। ব্যালেন্সড ডায়েটটা জরুরি। ভাজাভুজি, তেলমশলাদার খাবার দিয়ে সারাদিনের খাবারটা সেরে ফেলছি। ঠিকমতো ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনার করাটা খুব জরুরি।

** বাচ্চাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব বোঝান। খাওয়ার আগে হাত ভাল করে সাবান দিয়ে ধোয়া, নোংরা হাত মুখে না দেওয়া, বাইরে থেকে খেলে এসে হাত-পা ধুয়ে নেওয়া ইত্যাদি ছোট থেকেই শেখানোর চেষ্টা করুন।

** কৃমি থাকুক বা না থাকুন বাচ্চাদের ৩ মাস অন্তর কৃমির ওষুধ খাওয়ানো জরুরি।

চিকিৎসা 

বাচ্চার স্বাভাবিক হজম ক্ষমতা বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু অনেকসময় ওষুধ দিতেই হয়। যথাযথ ওষুধের কোর্স করতে হয়। তারপর অ্যাসিড সিক্রেশন কমে যায়। ঠিকসময়ে ওষুধ না খাওয়ানো হলে গ্যাসট্রাইটিস বা গ্যাসট্রিক আলসার ডেভলপ করে যেতে পারে।

খাওয়াদাওয়া

বাচ্চার মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার সু-অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনারা সবাই যদি হেলদি খাবার খান, তা হলে ও এই সব খাবার খেতে উৎসাহ পাবে। বাইরের খাবার যতটা কম খাওয়া যায় ততটাই ভাল। বিশেষ করে জাঙ্ক ফুড বেশি খেতে দেবেন না। মাঝে মধ্যে একটু আধটু খাওয়া যেতে পারে, তবে তা যদি রোজকার বায়না হয়ে দাঁড়ায়, তা হলে বাচ্চার ভালর জন্যেই আপনাকে একটু কড়া হতে হবে।

বাচ্চা যাতে খালি পেটে না থাকে, তার দিকে খেয়াল রাখুন। অনেক সময় তাড়াহুড়া করে বাচ্চারা স্কুল যাওয়ার আগে ১ কাপ দুধ খেয়ে চলে যায়। এটা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। ভাল করে ব্রেকফাস্ট করা খুবই জরুরি। এখন ব্রাঞ্চ বলা যায়। কারণ বেশিরভাগ বাচ্চাই স্কুলে টিফিন না খায়। না হলে পেটে অ্যাসিড সিক্রিশন হতে পারে। তবে তার মানে এই নয় যে বাচ্চাকে একগাদা খাওয়াবেন। দিনে বার বার অল্প অল্প করে খাওয়ার অভ্যেস গড়ে তুলুন।

বাচ্চাদের খাবারে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট যেন যথাযথ পরিমাণে থাকে। সবজি, ফল যথেষ্ট পরিমাণে রাখুন। সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে।

Related Posts

Leave a Reply