শাকিরা হওয়ার পেছনে গল্প শুনলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হবে
কলকাতা টাইমস :
শাকিরা ১৯৭৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কলম্বিয়ার বার্রানকিলাতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তার মা নিদাইয়া দেল কারমেন রিপোল তোর্রাদো এবং লেবানিজ বংশোদ্ভূত বাবা উইলিয়াম মেবারাক শাদিদের একমাত্র সন্তান।
শাকিরার মোট ভাইবোনের সংখ্যা আট, যারা সবাই তার বাবার আগের স্ত্রীর গর্ভজাত। তার দাদু-ঠাকুরমা লেবানন থেকে নিউ ইয়র্কে বসবাস করা শুরু করেন এবং সেখানেই তার বাবার জন্ম হয়। এরপর ৫ বছর বয়সে তার বাবা সেখান থেকে কলম্বিয়াতে চলে আসেন।
আরবিতে শাকিরা শব্দের অর্থ “কৃতজ্ঞ”। এটি আরবি “শাকির” শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ। তার নামের পরবর্তী অংশ “ইসাবেল”এসেছে তার ঠাকুমার নামানুসারে। এর অর্থ “আমার ঈশ্বর আমার প্রতিজ্ঞা”, “আমার ঈশ্বরের ঘর” ।
তার দ্বিতীয় ডাকনাম রিপোল এসেছে ক্যাটালান থেকে। শাকিরা তার যৌবনকালের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন উত্তর কলম্বিয়ার শহর বার্রানকিলায়। ভালো বুদ্ধিমত্তা ও আইকিউ পরীক্ষায় ভালো স্কোর করার জন্যও শাকিরা বিশেষভাবে পরিচিত।
মাত্র চার বছর বয়সে শাকিরা তার প্রথম কবিতাটি লেখেন, যার শিরোনাম ছিলো “লা রোসা দে ক্রিস্টাল” (La Rosa De Cristal), অর্থাৎ “স্ফটিকের গোলাপ”। বড় হওয়ার সাথে সাথে তিনি তার বাবাকে একটি টাইপরাইটারে গল্প লিখতে দেখে এ ব্যাপারে আগ্রহী হন এবং বড়দিনের উপহার হিসেবে একটি টাইপরাইটার চান।
সাত বছর বয়সে তিনি একটি টাইপরাইটার পান এবং তখন থেকেই তিনি কবিতা লেখা চালিয়ে যান। তার কবিতাগুলো ক্রমেই গানে রূপ নেয়। শাকিরার দুই বছর বয়সে তার এক বড় সৎ ভাই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান। এ কারনে তার বাবা নিজের দুঃখ ঢাকতে চার বছর কালো চশমা পরে ছিলেন। এ ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শাকিরা আট বছর বয়সে তার প্রথম গান “তুস গ্রাফাস ওসকুরাস” (Tus Gafas Oscuras) লিখেন যার অর্থ “তোমার কালো চশমা”।
তিনি একটি ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তার বাবা ছিলেন একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। তার বয়স যখন ৭ বছর, তখন তার বাবার ব্যবসা প্রতিষ্টান দেউলিয়া হয়ে যায়। কিছুদিনের জন্য তাকে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই দুর্দিনেও তার পরিবার তার খরচ ঠিকই চালিয়ে যেতো।
যখন তিনি বাড়ি ফিরে আসলেন, তখন দেখলেন কিছুই আর আগের মতো নেই! শাকিরার পরিবার গাড়ি, দামী আসবাবপত্র সবই হারিয়েছিল।যখন তিনি বাড়িতে পৌঁছালেন তখন দেখলেন, তাদের সবকিছুই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
কারণ তার বাবার ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিলো। যখন তিনি এইসব দেখলেন তিনি খুবই হতাশ ও বাবা-মায়ের উপর বিরক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু, এতকিছুর পরও তার পিতা-মাতা বোঝাতে চেয়েছিলেন তিনি কতটা ভাগ্যবতী।
তার বাবা-মা তাকে নিয়মিত একটি পার্কে বেড়াতে নিয়ে যেতেন, যেখানে শিশুরা নোংরা ও খালি পায়ে ঘুরে বেড়াতো। এইসব শিশুদের দেখে তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন, কতো শিশু তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারে না বা বুঝতেই পারে না!
এ সময় তিনি নিজে নিজে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, “যখন আমি একদিন নামকরা শিল্পী হবো আমিই তাদের স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করবো”। সেজন্য, তিনি ৮ বছর বয়স থেকেই গান লেখা ও কম্পোজ করা শুরু করেছিলেন। ১০ বছর বয়সে, তিনি স্কুলে গান করতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ভারী কণ্ঠস্বরের কারণে বাদ পড়েছিলেন।
তাকে এমন সমালোচনাও সহ্য করতে হয়েছিল, যে তার কণ্ঠস্বর ‘ছাগলের’ কণ্ঠস্বরের মতো! সঙ্গীতের রাজ্যে প্রবেশের পর তার ২ টি অ্যালবাম খুব বাজেভাবে ফ্লপ হয়েছিল। ১৮ বছর বয়সে তার ৩য় অ্যালবাম ব্যাপক ব্যাবসা সফল হয় এবং তিনি একটি চ্যারিটি সংস্থা গঠন করেন।
যা পৃথিবীর নানা প্রান্তে গরীব শিশুদের শিক্ষা ও খাবার সরবরাহে সহায়তা করে। শাকিরার গল্প আমাদের শিক্ষা দেয়, উত্থান পতন জীবনেরই একটা অংশ, আর জীবনের পতন থেকে উত্তরণের কারিগর আপনি নিজেই।
শাকিরা সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা সাইটে একটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন । তিনি ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যে কিনা ফেসবুকে ১০০ মিলিয়ন লাইক পেয়েছেন। তিনি ম্যারাকানা স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে আছেন এমন একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন।
ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার একটু আগের মুহূর্ত ছিল সেটা। ছবিটি ৪ দিনের মধ্যেই ৩.৫ মিলিয়ন লাইক পেয়ে গেছিল, এটাই এই তারকার সবচেয়ে বেশী লাইক পাওয়া ছবি হয়ে গেছিল তখনই।
শাকিরার একটি অলাভজনক ফাউন্ডেশন রয়েছে। নিজের জনপ্রিয় অ্যালবাম ‘পিয়েস ডেসক্যালজোস’-এর নামে ১৯৯৭ সালে শাকিরা তার ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন নিজ দেশে। সার্বজনীন শিক্ষার প্রচারই এর মূল উদ্দেশ্য। যার অর্থায়নে তিনি মানব সেবার কাজ করে থাকেন।
এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি আটটি বিদ্যালয় গড়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন চ্যারিটেবল কনসার্টে তিনি অংশগ্রহণ করেন, তার বিভিন্ন অ্যালবাম ও গান থেকে অর্জিত কিছু অর্থ তিনি এই ফাউন্ডেশনে দান করেন। এ ছাড়া তিনি যুক্ত আছেন ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে।