November 12, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

মিষ্টি কি সত্যি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর !

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

চিনি, শর্করা, সুগার— যে নামেই ডাকুন, গত কয়েক দশকে বিজ্ঞানী আর চিকিৎসকদের ক্রমাগত সতর্কবার্তার ফলে এটা হয়ে দাঁড়িয়েছে জনস্বাস্থ্যের এক নম্বর শত্রু। সরকার এর ওপর কর বসাচ্ছে। স্কুল আর হাসপাতালগুলো খাদ্যতালিকা থেকে একে বাদ দিয়ে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের খাবার থেকে চিনি সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দিতে।

আমরা সবসময়ই শুনছি, যারা বেশি মিষ্টি খায় তাদের টাইপ-টু ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। কিন্তু এর বিপরীতেও একটা কথা আছে। আসলে এসব স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য শর্করাই যে দায়ী— তা হয়তো না-ও হতে পারে।

ঠিক কীভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এই শর্করা তা বের করতে গিয়ে কিন্তু বিজ্ঞানীরা দেখছেন, এটা প্রমাণ করা খুব কঠিন। বিশেষ করে যখন তা উচ্চমাত্রার ক্যালরি সমৃদ্ধ খাদ্যের সঙ্গে খাওয়া না হচ্ছে।

গত পাঁচ বছরে একাধিক গবেষণার ফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোনো এক দিনের খাবারে যদি ১৫০ গ্রামের বেশি ফ্রুকটোজ থাকে, তাহলে তা উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরলের মতো সমস্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু গবেষকরা আরো বলেছেন, এটা তখনই ঘটে যখন আপনি উচ্চ ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে উচ্চমাত্রায় শর্করাসমৃদ্ধ খাবার খাচ্ছেন। তারা আরো বলছেন, শুধু সুগারের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়— এটা বলা যায় না।

বিজ্ঞানীরা আরো বলছেন, কোনো একটি খাবারকে সমস্যার মূল কারণ বলে চিহ্নিত করারও অনেক বিপদ আছে, কারণ এর ফলে এমন হতে পারে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো খাবার হয়তো আপনি খাওয়া বন্ধ করে দিলেন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, উচ্চ মাত্রার ফ্রুকটোজ সমৃদ্ধ কর্ন সিরাপ বা বাড়তি চিনিওয়ালা পানীয়, জুস ড্রিংক, মধু, বা সাদা চিনি— এগেুলো হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করতে পারে, কারণ তা ধমনীর ভেতর ট্রাইগ্লিসারাইডজাতীয় চর্বি জমাতে ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন জরিপে এই বাড়তি যোগ করা চিনিসমৃদ্ধ খাবার বা পানীয়ের সঙ্গে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্পর্ক দেখা গেছে।

কিন্তু সুগারের কারণেই যে হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস হয়— এটা স্পষ্ট করে বলার উপায় এখনও নেই। লুজান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুক টাপি বলছেন, অতিরিক্ত ক্যালরিই ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণ এবং সুগার সেই উচ্চ ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবারের একটা অংশ মাত্র। এমন দেখা গেছে, যারা এ্যাথলেট বা ক্রীড়াবিদ তারা বেশি শর্করা খেলেও শারীরিক পরিশ্রম বেশি করছেন বলে তা হজম হয়ে যাচ্ছে এবং কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে না।

কিছু গবেষণায় বলা হয়, চিনি বা মিষ্টি খাওয়ার আকর্ষণ কোকেনের আকর্ষণের মতোই, যাকে বলা চলে একটা নেশা। কিন্তু এসব গবেষণার বিরুদ্ধে এমন সমালোচনাও হয়েছে যে এখানে উপাত্তকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিছু জরিপে বলা হয়, যারা বেশি বেশি কোমল পানীয় বা ফলের রস খান তাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল, মস্তিষ্কের গড় আয়তনও কম।

কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সুইনবার্ন সেন্টারের গবেষক ম্যাথিউ পেস বলছেন, তিনি নিশ্চিত নন যে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের ওপর শুধু শর্করাই প্রভাব ফেলে। তা ছাড়া এমনও হতে পারে যারা বেশি কোমল পানীয় পান করেন, তারা হয়তো শরীরচর্চা করেন কম । মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের সঙ্গে তো এরও একটা সম্পর্ক থাকতে পারে।

অন্য কিছু গবেষণায় আবার এটাও দেখা গেছে, বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে শর্করা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং দুরুহ কাজ করার ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা যেসব স্বাস্থ্য নির্দেশিকা দিচ্ছেন তাতে বলা হচ্ছে, মানুষ প্রতিদিন যে ক্যালরি গ্রহণ করছে, তাতে ৫ শতাংশের বেশি শর্করা থাকা উচিত নয়।

খাদ্য বিশেষজ্ঞ রেনি ম্যাকগ্রেগরের মতে, ‘আমাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই সুষম খাবারের সংজ্ঞা ভিন্ন ভিন্ন।’ আসলে খাদ্যতালিকা থেকে চিনিকে বাদ দিয়ে দেয়াটা বরং হিতে বিপরীত হতে পারে। এমন হতে পারে চিনি বাদ দিয়ে আপনি হয়তো অতিরিক্ত ক্যালরিসমৃদ্ধ কোনো খাদ্য বেশি খেতে শুরু করলেন, তাতে ক্ষতিই বেশি।

চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার নিয়ে এখন জোরালো বিতর্ক চলছে বলেই আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আমরা স্বাস্থ্যকর ফল, যাতে শর্করা আছে, তার সঙ্গে কোমল পানীয়কে গুলিয়ে ফেলছি, যাতে বাড়তি শর্করা ছাড়া কোনো পুষ্টিকর উপাদান নেই।

তাহলে আমরা চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার মানেই তা খারাপ— ব্যাপারটা এরকম নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করি কেন?

জেমস ম্যাযিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ্যালান লেভিনোভিৎজের মতে, ‘এর একটা কারণ হলো, আমরা যে জিনিসটার আকর্ষণ ঠেকাতে পারি না সেটাকেই অশুভ হিসেবে চিত্রিত করি। মিষ্টি খাবার তাড়না নিয়ন্ত্রণ করতেও আমরা একই জিনিস করছি।

Related Posts

Leave a Reply