May 15, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular ব্যবসা ও প্রযুক্তি

সোনার চেয়েও দামি পানীয় দা হং পাও চা!

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস : 
০০২ সালে এক ধনকুবের ২০ গ্রাম চা কেনার জন্য খরচ করেছিলেন চীনা মুদ্রায় এক লাখ ৮০ হাজার ইউয়ান, যা প্রায় ২৮ হাজার ডলারের সমপরিমাণ। চীনের দা হং পাও চা এতটাই দামি! সেই পৌরাণিক যুগ থেকেই চীনের সংস্কৃতিতে চায়ের ভূমিকা অনন্য। চা পান ও তৈরির প্রক্রিয়া দেশটিতে শিল্পের পর্যায়ে চলে গেছে বহুকাল আগে। চীনে প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে প্রচলিত এই শিল্প। দেশটিতে যে কত ধরনের চায়ের প্রচলন আছে, তা হাতে গুনে শেষ করার নয়। এর সামনে ফরাসি ওয়াইনও সাদামাটা! তাই চীনের এ শৈল্পিক চায়ের দামও যে যার তার সামর্থ্যের মধ্যে থাকবে না, তাতে আর অবাক হওয়ার কী আছে?

শোনা যায়, পৌরাণিক আমলের এক সম্রাট এই চা পান করে অলৌকিকভাবে রোগমুক্তির পর একটি টকটকে লাল রঙের কম্বল দান করে দিয়েছিলেন। দা হং পাও চা-কে সেই লাল কম্বলের নামানুসারে ইংরেজিতে আখ্যায়িত করা হয় ‘বিগ রেড রোব’ নামে।

খাঁটি দা হং পাও চা যে শুধু দামের দিক থেকে মূল্যবান ধাতু স্বর্ণেরও সমতুল্য নয়, তাই নয়। সমপরিমাণ দা হং পাও চা ও স্বর্ণের মধ্যে স্বর্ণের তুলনায় এই চায়ের দাম ৩০ গুণেরও বেশি! মাত্র এক গ্রাম চায়ের দাম হিসেবে আপনাকে খরচ করতে হবে প্রায় এক হাজার চারশ’ ডলার! আর যদি এক কাপ চা পান করতে চান, তাহলে এই- ‘মাত্র’ ১০ হাজার ডলারের কিছু বেশি খরচ করতে হবে! কাজেই বলাবাহুল্য যে বিশ্বের অন্যতম দামি চা দা হং পাও।

দক্ষিণ চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের পাহাড় ঘেরা অঞ্চলে নদীর তীরের কুয়াশাচ্ছন্ন শহর উয়িশানের চা প্রস্তুতকারক জিয়াও হুই জানালেন, ‘এই চা পান করতে চাইলে দাম একজন রাজার কাছেও বেশি বলে মনে হবে। কিন্তু এ চা পানে প্রশান্তি অনুভব করবেন বুদ্ধের মতো।’

সাধারণ মানের দা হং পাও চা সামর্থ্যের মধ্যেই, জানিয়েছে বিবিসি। উয়িশানে প্রতি কেজি মাত্র একশ’ ডলার। কিন্তু যদি উচ্চ গুনমানসম্পন্ন খাঁটি দা হং পাও পেতে চান, তাহলেই পকেট উজাড় করে দিলেও হয়তো একটি চুমুকেরও সুযোগ হবে না! আসল দা হং পাও চায়ের একেকটি পাতা সংগ্রহ করা হয় হাতেগোণা কয়েকটা মা-গাছ বা মূল গাছ থেকে। আর এই মা গাছ, যেগুলো ভীষণ চাহিদাসম্পন্ন ও দুর্লভ দা হং পাও চায়ের উৎস, সেগুলো সংখ্যায় ভীষণ কম বলেই এই চায়ের দাম এত বেশি। প্রাচীন মা-গাছগুলো দামী বললেও কম বলা হয়, এগুলো অমূল্য- জানালেন স্থানীয় চা বিশেষজ্ঞ জিয়াঙ্গিং উ।

শুধু চীনেই এই চায়ের চাহিদা নেই। দা হং পাও চায়ের শত বছরের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৪৯ সালে ব্রিটিশ উদ্ভিদবিজ্ঞানী রবার্ট ফরচুন উয়িশানের পার্বত্য অঞ্চলে গিয়েছিলেন এক গোপন লক্ষ্য নিয়ে। ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলে বিশ্বজুড়ে দাপুটে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কৃষিভিত্তিক শিল্পের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অংশ ছিল তার ওই সফর। তখন ব্রিটিশদের মধ্যে চায়ের চাহিদা ও চায়ের প্রতি মুগ্ধতা ছিল ঠিক আজকের মতোই। কিন্তু সে চা তারা পেট কেবলই চীন থেকে। চীনের তুলনায় তৎকালীন ব্রিটেনে চা জন্মাত খুবই অল্প পরিমাণে। ফলে চীন ও ব্রিটেনের বাণিজ্যে বিশাল পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল চা একাই।

তাই চীন থেকে কয়েক জাতের চায়ের বীজ চুরি করে তা দখলকৃত ভারতবর্ষে নিয়ে চাষ করা সম্ভব হলে অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের। তবে শেষ পর্যন্ত এ লক্ষ্যে সফল হয়নি তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। অন্য কোথাও এই চা উৎপাদন বা চা গাছকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।

আসল দা হং পাও চায়ের সহস্রবর্ষী মা গাছগুলো খুব অল্প জায়গার মধ্যে সীমিত। যত সময় যাচ্ছে, গাছগুলো ততই পুরোনো হচ্ছে। আর যতই পুরোনো হচ্ছে, গাছগুলোর উৎপাদন ততোই কমে যাচ্ছে। আসল সুগন্ধ টিকিয়ে রাখতে চা উৎপাদনকারীদের ঘাম ঝড়ানোর পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। তাই ভবিষ্যতে এই চা হয়ে উঠতে পারে আরো দামী, যার দামের সামনে হয়তো হীরার ঔজ্জ্বল্যও ম্লান হয়ে যাবে!

Related Posts

Leave a Reply