May 17, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular বিনোদন

বিয়ে, অভিনয়, উত্তম, অপহরণ এবং সুচিত্রা…

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস : 
সুচিত্রা সেন একটি অধ্যায়ের নাম। রহস্যেরও। তার উপস্থিতি বাংলা ছবিকে পৌঁছে দিয়েছিলো অন্য উচ্চতায়। সাধারণ গৃহবধূ থেকে মহানায়িকা হয়ে ওঠা, একসময় হারিয়ে যাওয়া অন্তরালে- সুচিত্রার জীবনজুড়ে রহস্যের আনাগোনা।
বিয়ে হলো যখন
বাড়ি থেকে সুচিত্রা সেনের বিয়ের ব্যবস্থা চলছিলো। পাত্রপক্ষের সঙ্গে হলো যোগাযোগ। পাত্রের বাবা আদিনাথ সেন নিজে আসবেন হবু পুত্রবধূকে দেখতে। বিশেষ কোনো দাবি নেই তার। শুধু একজন সুন্দরী মেয়েকে পুত্রের বউ করে নিয়ে যেতে চান। মনোহরপুকুর রোডে নিকটাত্মীয় সুরেন্দ্রনাথ সেনের বাড়িতে সুচিত্রাকে দেখানো হবে। সুচিত্রার পরিবার মোটামুটি ধরেই রেখেছিলেন, মেয়েকে তার পছন্দ হবেই।
কিন্তু সুচিত্রাকে দেখেই যে সঙ্গে সঙ্গে আদিনাথ সেন বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করতে বসে যাবেন- সেটা ধারণায়ও ছিলো না কারও। বাবা দেখে যাওয়ার পর এরপর একদিন স্বয়ং পাত্র এলেন- দিবানাথ সেন। তবে শুধু ওই একদিন নয়, বিয়ের আগে বারবার আসতেন তিনি। দিবানাথ ছিলেন সাহেবী মানুষ। কথাবার্তা, চলাফেরায় ছিলো মার্জিত ব্যক্তিত্বের ছাপ। সুচিত্রাকে তার এতই পছন্দ হয়েছিলো যে, বাড়িতে বলেই দিয়েছিলেন- বিয়ে এখনই হোক আর যখনই হোক, এ মেয়ে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবেন না। বিয়ে হলো ১৯৪৭ সালে। সুচিত্রা বলেছিলেন- ‘ফ্রক ছেড়ে শাড়ি ধরতে না ধরতেই বিয়ে..’। এক আজব ঘটনা ঘটেছিলো বিয়ের দিন। লগ্ন আটটায়। বিয়ের পিড়িতে বসে ফুলপিসি আর বাণীপিসির দিকে তাকিয়ে সুচিত্রা বললেন, ‘আমি ঘোমটা পরে বিয়ে করবো না। মুখ লুকিয়ে বিয়ে করতে যাবো কেন?
রমা থেকে সুচিত্রা সেন: এই যে লেখায় এতো ‘সুচিত্রা সেন, সুচিত্রা সেন’ করা হচ্ছে, তার পারিবারিক নাম কিন্তু রমা। চলচ্চিত্রে আসার পর তার নাম বদলে গেলো। এর আগে বিয়ের সময়ও নাম রমা-ই ছিলো। তিনি তো বিয়ের প্রায় তিন-চার বছর পর চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেছিলেন। রমার নাম ‘সুচিত্রা সেন’ রেখেছিলেন নীতিশ রায়। পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্তের সহকারী। একদিন সবার সামনেই তিনি বলে বসলেন, ‘চলচ্চিত্রে আজ থেকে আপনি সুচিত্রা সেন।’ সেই থেকে শুধু চলচ্চিত্রপাড়ায় নয়, ব্যবহারিক জীবনেও এই নাম ব্যবহার করেছেন তিনি। তবে স্বামী দিবানাথ তাকে রমা নামেই ডাকতেন। আর তিনি দিবানাথকে ডাকতেন তুতু বলে।
শুরু হলো অভিনয় : ব্যক্তিজীবন নিয়ে আলাপ করতে গিয়ে চলচ্চিত্র প্রসঙ্গই যখন ঢুকে পড়লো, তাহলে আর দেরি করা কেনো! সুচিত্রার অভিনয়ের শুরু কীভাবে হলো- সেটি বলে ফেলা যাক। তখনও তিনি ঘরের বউ। রমা। সুচিত্রা হননি তখনও। বালিগঞ্জ প্লেসের দুর্গামন্দির ক্লাবের ছেলেদেও চোখ পড়লো তার ওপর। ক্লাবের উৎসবে ‘নটীর পূজা’ নাটকটি মঞ্চস্থ হবে। সেখানে তারা রানী চরিত্রের জন্য রমাকে চায়। প্রস্তাব দিলো দিবানাথের কাছে, দিবানাথও জানালেন রমাকে। কিন্তু তিনি নারাজ। দিবাকর নাছোড়বান্দা। শেষমেষ শ্বশুরের মতামত নিয়ে রমা মঞ্চে উঠলেন। পাড়ার মঞ্চে রমার যে প্রাথমিক ঝিলিকটুকু দেখা গেলো, অচিরেই তার খবর পৌঁছে গেলো টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়ায়। পরিচালক বিমল রায় সেন পরিবারের আত্মীয়। তিনিই চলচ্চিত্রে আসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রমাকে। আর দিবানাথ দিয়েছিলেন উৎসাহ। সেন পরিবারের বউ, চাইলেই তো আর বড় পর্দায় যাওয়া যায় না। দিবানাথের জোরাজুরি- ‘বেশ তো, সিনেমায় অভিনয় না করো। সিনেমার প্লেব্যাক সিঙ্গার হতে তো তোমার আপত্তি নেই।’ পার্ক স্ট্রিটের কাছে একটা স্টুডিও ছিলো। ১৯৪৯ সালের এক বসন্ত বিকেলে সেখানেই রমাকে নিয়ে যাওয়া হয় নেপথ্য গায়িকা হিসেবে কণ্ঠ দেওয়ার জন্য। অডিশন আর কি! অডিশন হলো, উতরেও গেলেন তিনি। গায়িকা নয়, সরাসরি অভিনয়ের প্রস্তাব এলো। কিন্তু শ্বশুরের অনুমতি ছাড়া কীভাবে সম্ভব? ভয়ে ভয়ে একদিন রমা দাঁড়ালেন শ্বশুরের সামনে। বললেন ইচ্ছার কথা। আদিনাথ সেন শুনলেন। কিছুক্ষণ চোখ বুজে রইলেন। একটু পরে ধীরে ধীরে বললেন, ‘তোমার মধ্যে যদি মেধা থাকে, তাকে নষ্ট করার অধিকার আমার নেই বৌমা। অতএব, তোমার যদি ইচ্ছা থাকে তাহলে আমি বাধা দেব না।’ আবার সেই স্টুডিওতে যাওয়া হলো। চুক্তিপত্রে সই হলো। বাড়ি এসে আবার বেঁকে বসলেন রমা। তবে শেষ পর্যন্ত ছবিটিতে কাজ করেছিলেন তিনি। ছবির নাম ছিলো ‘সংকেত’, পরিচালক অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায়। তবে টাকার অভাবে মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো এর কাজ।
যেদিন থেকে উত্তম-সুচিত্রা যুগ শুরু : ১৯৫৩ সালের ২০ ফেব্রæয়ারি। এদিন মুক্তি পায় ‘সাড়ে চুয়াত্তর’, শুরু হয় নতুন অধ্যায়। সুচিত্রা সেন স্টুডিওতে ঢুকেই বুঝলেন, চারপাশে চাপা উত্তেজনা। সবার দৃষ্টিই তার দিকে, যেন তিনি অন্য কেউ! ছুটে এলেন ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর পরিচালক নির্মল দে। চোখে-মুখে উত্তেজনা নিয়ে তিনি বললেন, ‘উত্তরায় ম্যাটিনি শো ফুল। ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি হয়েছে। সাড়ে চুয়াত্তর দারুণভাবে লেগে গেছে। আর দেখতে হবে না ম্যাডাম, উত্তম-সুচিত্রা সুপারহিট।’ আসলেই হিট। পুরো পঞ্চাশের দশক জুড়ে মহানায়িকা সুচিত্রার ৩৫টি ছবি মুক্তি পায়, তার মধ্যে ২৩টিরই নায়ক ছিলেন মহানায়ক উত্তম কুমার।
অপহরণের কবলে সুচিত্রা : সুচিত্রা তখন অভিনয় ছেড়ে দিয়েছেন। থাকেন অন্তরালে। গভীর রাতে বেরিয়ে পড়েন। হাঁটেন বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড ধরে। রাতে গাড়ি চলাচল একেবারেই থাকতো না বলা চলে। বিজ্ঞান কলেজের সামনে দিয়ে হাঁটতেন। পরনে থাকতো একটা আটপৌড়ে শাড়ি। পায়ে চটি। সঙ্গে একজন বালিকা-ঝি। গল্প করতে করতে হাঁটতেন। পড়া ধরতেন। কখনোবা সহজ করে রামায়ণ বা মহাভারতের গল্প শোনাতেন। সেদিনের ঘটনাটা খুব আকস্মিক। রাত প্রায় ১১টা। বিজ্ঞান কলেজের সামনে আলো-আঁধারী পরিবেশ। অন্যান্য দিনের মতো সেদিনও হাঁটছিলেন তারা। একটা সাদা রঙের গাড়ি দ্রুত পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করলেন না সুচিত্রা। বাড়ির রাস্তার মুখ থেকে আবার যখন ফাঁড়ির দিকে যাচ্ছিলেন, তখনই ওই অঘটনটা। সেই সাদা গাড়িটি ফিরে এসে সুচিত্রার পাশে থামে। বালিকা-ঝিকে একটানে কোলের কাছে নিয়ে আসেন সুচিত্রা। এরপর গাড়ির দিকে চোখ রেখে পিছু হটেন। এ সময় উল্টোদিক থেকে আসা আরেকটি গাড়ির তীব্র আলোয় বিভ্রান্ত হয়ে যায় সাদা গাড়িটি। সেই ফাঁকে সুচিত্রা দ্রুত নিজের বাড়ির রাস্তায় ঢুকে যান। দারোয়ান গেটের কাছেই ছিলো। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন সুচিত্রা। তালাবন্ধ গেটের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখেন- গাড়ির চারজন অপহরণকারীরা তখনও ক্ষুদ্ধ দৃষ্টি নিয়ে রাস্তার মুখে দাঁড়িয়েআছে।

Related Posts

Leave a Reply