May 21, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular রোজনামচা

এদের সঙ্গে কথা বললেই জরিমানা ৫০০!

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস : 

ফের উঁচু-নিচু জাতের ভেদাভেদি নিয়ে সামাজিক বয়কটের শিকার শালবনির কুড়িটি পরিবার। পানীয় জল থেকে চিকিৎসক, মুদি দোকান, সবেতেই উঁচুজাতের ফরমান জারি। নিচু জাতের সঙ্গে কথা বললেই জরিমানা দিতে হবে পাঁচ শ টাকা। পরিস্থিতির কারণেই আপাতত কোণঠাসা হয়ে শালবনির পরিবারগুলো। প্রশাসনিক দপ্তরে লিখিত জানিয়েও মেলেনি সুরাহা। ঘটনা, পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি থানার পাথরাজুড়ি গ্রামের। মেদিনীপুর শহরে থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে এই গ্রাম। গোদাপিয়াশাল থেকে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার রাস্তা ধরে ৫ কিলোমিটার গেলেই এই গ্রাম পড়ে রাস্তার ধারে। এই গ্রামের দুটি প্রান্তে দুটি ভাগ হয়ে গিয়েছে বর্তমানে। যার একদিকে রয়েছে দেড় শ’টি পরিবার নিয়ে দোলাইপাড়া, যাদের মধ্যে অনেকেই সাধারণ পর্যায়ের, যারা নিজেদের উচ্চ সম্প্রদায়ের বলে মনে করেন। অন্যদিকে রয়েছে আদিবাসী ভুমিজ সম্প্রদায়ের ২০টি পরিবারের লোকজন, যেটাকে সিংহ পাড়া বলা হয়। এদের নিচু জাত বলে বর্তমানে অ্যাখ্যা দিয়ে সামাজিক বয়কটে রেখেছে পাশের দোলাইপাড়া।

জানা গিয়েছে, গ্রাম থেকে পাঁচ শ মিটার দূরে মাঠের মাঝে একটি মন্দির রয়েছে। গাছের তলাতে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দীর্ঘদিন ধরে পুজো দেওয়ার চল গ্রামবাসীদের। কয়েকমাস আগে এই মন্দিরে পুজো দেওয়াকে কেন্দ্র করেই দুই ভাগে বিভাজন ঘটেছে গ্রামবাসীদের। মন্দিরের কর্তৃত্ব নিয়ে দুই পাড়ার সংঘর্ষও হয়। সামাল দিতে আসতে হয়েছিল শালবনি থানার পুলিশকে। এরপরই সংখ্যাগুরু দোলইপাড়ার লোকজনের ফরমান জারি হয়। অভিযোগ, দোলাইপাড়ার লোকজন সিংহপাড়ার ভূমিজ সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিচু জাত অ্যাখ্যা দিয়ে গ্রামের পরিষেবা থেকে বয়কট করা হয়। বলা হয় পানীয় পরিষেবা বন্ধ করা হচ্ছে, সিং দের জমিতেও কোনো লোক সেচ দেবেন না, বা কাজ করবেন না। কোনো গ্রামীণ চিকিৎসক সিংহ দের চিকিৎসা করবেন না। এমনকি দোলাইদের কেউ সিংহপাড়ার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বললেও পাঁচ শ টাকা জরিমানা।

সমস্ত দিক থেকে সামাজিক বয়কট হয়েছে প্রায় ২৫ দিন ধরে। দোলাইপাড়াতে রয়েছে স্থানীয় প্রধান শ্যামসুন্দর দোলাই। তিনিও নাকি দোলইপাড়ার পক্ষে হয়ে কাজ করছেন। পরিস্থিতি নিয়ে জেলা শাসক ও পুলিশ সুপারকেও লিখিত ভাবে জানিয়েছেন গ্রামের সিংপাড়ার বাসিন্দারা। কিন্তু সুরহা মেলেনি। সমস্ত বয়কটে থেকে কষ্টের মধ্যে রয়েছেন সিংপাড়ার দেড় শ’র বেশি মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিত সিং বলেন আমাদের নিচু জাত বলে উল্লেখ করে সামাজিক ভাবে বয়কটে রাখা হয়েছে। চাষের জমিতে পানি দিতে বারণ করায় ধান মরেছে, তিল জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। শারীরিকভাবে অসুস্থদের চিকিৎসা করতে দিচ্ছে না গ্রামীণ চিকিৎসকদের। এমনকি পাশের পাড়ার কেউ কথা বললে তার পাঁচ শ টাকা জরিমানা বলে ঘোষণা করেছে।

সিংহপাড়া ও দোলাই পাড়ার মাঝে রয়েছে একটি মুদির দোকান। দোকানের মালিক এক মহিলা শ্যামলী সিং বলেন আমার মুদি দোকান থেকেই সংসার চলে। আমি এই পাড়ার লোকেদের জিনিস বিক্রি করেছিলাম বলে আমাকেও বয়কট করা হয়েছে। কেউই কথা বলেনি আমাদের সঙ্গে, আসছে না দোকানেও। স্থানীয় প্রধান দোলইপাড়ার বলে সঙ্গে দিয়েছে উঁচু জাত দোলইপাড়ার। এই বিষয়ে স্থানীয় কাশিজোড়া অঞ্চল প্রধান শ্যামসুন্দর দোলাই বলেন জাতিভেদ সমস্যা নয়, মন্দিরে পুজো করা নিয়ে সমস্যা। তবে বয়কটের অভিযোগও মিথ্যা। সমস্যা যেটা রয়েছে সেটা উদ্যোগ নিচ্ছি। এই ধরনের সমস্যা পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়েও দেখা দিয়েছে। সামাজিক ভাবে বয়কটে থাকা বেশ কিছু রুইদাস পরিবার জেলা শাসকের দপ্তরে এসে বিক্ষোভ দেখায় সম্প্রতি। সেই সমাধান করার আগে ফের শালবনিতে একই সমস্যা দেখা দিয়েছে।

Related Posts

Leave a Reply