May 22, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

গ্রহগুলোয় এখনই আগাম বুকিং..  

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

কিছুদিন আগে একটি আজব বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয় ! মোবাইল ফোনের ম্যাসেজে বলা হয়, “গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সুন্দর জীবনযাপন করতে চাইলে এখনই যোগাযোগ করুন।” এই পর্যন্তই ঠিক ছিল, এরপর সেই বার্তায় যা লেখা ছিল তা পড়লে মাথা ঘুরে যাওয়াই স্বাভাবিক। সেখানে লেখা রয়েছে, “ট্রাপিস্ট ১এফ’এ এপার্টমেন্ট বুকিং দিন। ইন্টার গ্যালাকটিক এক্সপ্রেসওয়ে থেকে মাত্র ০ কিলোমিটার দূরত্বে বাসযোগ্য এলাকায় জীবনযাপন করতে চাইলে এখনই আগাম অর্থ জমা দিন। মূল্য ৫১ হাজার ইউরো। এই মুহুর্তে ৫ ভাগ পরিশোধ করুন। বাকি অর্থ এপার্টমেন্ট বুঝে পাওয়ার পর।” বার্তায় যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বরও দেওয়া রয়েছে।

পৃথিবী থেকে ৪০ আলোকবর্ষ দূরে ৭টি নতুন গ্রহ আবিস্কারের পর থেকেই অনেকের মোবাইলে এই বার্তাটি আসছে। জি সামপাথ নামের এক ভারতীয় সাংবাদিকের মোবাইলেও এমন বার্তা আসে। অবাক হলেও তিনি বিষয়টিকে ঠাট্টা হিসেবেই ধরে নেন।

কিন্তু টনক নড়ে তার এক বন্ধুর ফোনে। সে নাকি এরই মধ্যে তিনটি গ্রহে এপার্টমেন্টের জন্য অর্থও জমা দিয়েছে! শুধু তাই নয়, এখন সে বন্ধুকেও বুকিং করার পরামর্শ দিচ্ছে।

ট্রাপিস্ট ১এফ নামের সৌরজগতে যে ৭টি গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে, নাসা বলছে এর অন্তত ৩টিতে পৃথিবীর মত পরিবেশ থাকতে পারে। প্রতিটি গ্রহেই জলের অস্তিত্ব বিদ্যমান। রয়েছে প্রাণের সম্ভাবনাও। দূরত্বকে জয় করতে পারলে পৃথিবীর নিকটবর্তী সৌরজগতটিতে মানুষের বসবাসের সম্ভাবনা অবাস্তব কল্পনা নয়।

তবে তাই বলে গ্রহগুলোয় এখনই আগাম বুকিং..? সামপাথ তার বন্ধুর কথায় বেশ অবাকই হলেন। বন্ধুকে তিনি বরাবরই বিচক্ষণ এবং বুদ্ধিমান বলে জানেন। শুধু সেই নয়, বন্ধু মহলের অনেকেই তাকে এমন প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এদের মধ্যে এমন একজন আছেন যিনি কিনা মাত্র ২৪ বছর বয়সে বিনিয়োগকারী ব্যাংক গোল্ডম্যান শেচেস থেকে অবসর নেন। এরপর ভারতের মাজোর্কা এবং মিলাপোর’এ সময় দিচ্ছেন।

সম্প্রতি সেও সামপাথকে একই বিষয়ে ফোন করেন । বলেন, ‘বিজ্ঞাপনটি আজব মনে হলেও অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। যে প্রতিষ্ঠান এই বিজ্ঞাপন দিচ্ছে তাদের আমি চিনি। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা থেকে তারা সব অনুমতি জোগাড় করে ফেলেছে।’

তাজ্জব বনে যাওয়ার পরও কিছু বিষয়ে কৌতুহল দমাতে পারছিলেন না তিনি। নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি বন্ধুকে প্রশ্ন করেন ডেভেলপার কী অন্য কোনো গ্রহে বসতি নির্মাণ করেছে? উত্তরে বন্ধুটি বলে অবশ্যই! সামপাথ জানতে চান, ‘কোথায়?’

উত্তরে বন্ধুটি বলে, ‘ভারতের গুরগাঁও’এ তারা ৫টি প্রকল্প শেষ করেছে।’ একথা শুনে তিনি কী বলবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না।

তবে কোনো কথা বলার আগেই বন্ধুটি বলে, “বিনিয়োগের জন্য এখনই উৎকৃষ্ট সময়। শুরুতে দাম কম থাকলেও যত সময় যাবে, মূল্য ততোই বেড়ে যাবে।”

একথার সঙ্গে অবশ্য একমত পোষণ করেন সামপাথ। তিনিও জানেন, বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া সম্পত্তির মূল্য দিন দিন বাড়তেই থাকে। তবে নতুন প্রকল্প সম্পর্কে বন্ধুর ধারণা আছে কি না তা বুঝতে বলেন, “তোমার বোধহয় জানা আছে, যে গ্রহগুলোয় বাড়ি নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে তা পৃথিবী থেকে ৪০ আলোকবর্ষ দূরে। প্রায় ২৩৫ ট্রিলিয়ন মাইল হবে। তাছাড়া সেখানে তরল জল রয়েছে কিনা সে সম্পর্কেও আমরা নিশ্চিত না।”

বন্ধুটির এবার অবাক হওয়ার পালা। বন্ধুর বিস্ময় আরো বাড়াতে সামপাথ বলেন, সেখানে স্থানীয় অধিবাসীরাও থাকতে পারে।

জবাবে বন্ধুটি বলে, “তোমার তো ইতিহাস জানা থাকার কথা। যখন কলম্বাস আমেরিকা আবিস্কার করেন তখনও সেখানে আদিবাসীরা ছিল। তারা তো ভালোভাবেই সেই বিষয়টির নিষ্পত্তি করেছিল। নাকি?”

সামপাথ বলেন, ‘তারমানে কি বলতে চাও গ্রহগুলোর দখল নিতে স্থানীয়দের হত্যা করা হবে।’

বন্ধুটি বলে, ‘শোন, আমাদের এই গ্রহের কোনো ভবিষ্যত নেই। সাগর কলুষিত হয়ে পড়েছে, বনও উজাড় হয়ে গেছে। বাতাসও এখন শ্বাস গ্রহণের অযোগ্য। নদীতে দূষণ ছড়িয়ে পড়েছে, ভূগর্ভস্থ জলের মজুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। যতদূর মনে হচ্ছে, পরমাণু বোমার হুমকি আমাদের কাঁধে নি:শ্বাস নিচ্ছে। এখন তুমিই বল, এই পৃথিবীকে নিয়ে ভাবার কোনো অবকাশ সত্যি কী আছে?’

বন্ধুটি বলতে থাকে, ‘তুমি কি এলোন মাস্কের স্পেস এক্স’এর কথা শুনেছ? আমাদের অবশ্যই পৃথিবী থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে। সেটা এখনই হোক কিংবা পরে।’ ভিনগ্রহে বসতি নির্মাণ সংক্রান্ত আরও অনেক লোভনীয় বর্ণনার পর বন্ধুটি জানতে চায়, তুমি সেখানে বুকিং করবে ?

জবাবে সামপাথ বলেন, ‘দু:খিত, আমার জন্ম এই পৃথিবীতে। যদি পৃথিবী ধ্বংস হয়েই যায় তবে আমাকেও একই পরিণতি মেনে নিতে হবে।’

Related Posts

Leave a Reply