May 23, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

অপহরণ করে মুক্তিপণই বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে এম-১৯ এর কাছে 

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
ম-১৯ মোটামুটি সবাই এই সংখ্যার সঙ্গে পরিচিত। কিন্তু এর পেছনের ভয়ঙ্কর কাহিনী জানেন ক’জন।
সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের মাধ্যমে জন্ম হলেও সব সময় আদর্শ মেনে চলতে পারেনি গেরিলা বিশ্বে এম-১৯। যে কারণে তাদের রক্তিম সূর্যের ডাক পৌঁছায়নি জনগণের মধ্যে।
কলম্বিয়াকে বলা হয় গেরিলা বাহিনীর স্বর্গরাজ্য। ল্যাতিন আমেরিকাসহ পৃথিবীর অন্যকোনো দেশে এতগুলো সক্রিয় গেরিলা সংগঠন নেই। এম নাইটিন (এম-১৯) বা নাইনটিনথ এপ্রিল অব মুভমেন্ট কলম্বিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম গেরিলা সংগঠন। ইউনাইটেড স্টেটস ব্যুরো অব সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের (ইউএসবিসিআইএস) প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ফার্কের সঙ্গে মতাদর্শের বিরোধের কারণে জেমি ব্যাটম্যান ও কার্লোস পিজারো নামের দুজন গেরিলা ফার্ক থেকে বেরিয়ে ১৯৭২ সালে গেরিলা এম-১৯ গঠন করে। তবে এর নামকরণ করা হয় ১৯৭০ সালের ১৯ এপ্রিল প্রতারনায় ভরপুর ও ভোট চুরির যে নির্বাচন হয়েছিল, সেই তারিখকে স্মরণ করে। বিশেষজ্ঞরা এম-১৯ গেরিলাদের সাংগঠনিক জীবনকে দুইটি পর্যায়ে ভাগ করে থাকে। এর প্রথম পর্যায় ছিল ১৯৭২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত। সংগঠন প্রতিষ্ঠার পরে এম নাইনটিনের নেতারা সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যে অত্যন্ত গোপনে কলম্বিয়ার প্রধান প্রধান শহরগুলোতে তাদের শাখা স্থাপন করে। সম্পূর্ণ ভিন্নমতালম্বী ও খুবই রক্ষণশীল মনোভাব নিয়ে গড়ে ওঠা
এ সংগঠনটি শুরুতে কলম্বিয়ার মাদক পাচারকারী বা তাদের পরিবারের সদস্যদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করত। তবে এ কৌশলটি অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়ায়। কারণ একটা পর্যায়ে এসে কলম্বিয়ান পুলিশ এম নাইটিনের সদস্যদের ধরতে মাদক পাচারকারীদের ব্যবহার শুরু করে। এম নাইটিনের প্রথম উল্লেখযোগ্য গেরিলা অপারেশন ছিল ১৯৭৪ সালে অত্যন্ত সুরক্ষিত জাদুঘর থেকে ল্যাতিন আমেরিকার বিখ্যাত নেতা সাইমন বলিভারের তলোয়ার চুরি। এ ঘটনাকে এম নাইনটিন গেরিলারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রথম পদাঘাত হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এরপর তারা ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউনিয়ন লিডার হোসে রাকায়েল মার্কাডোকে অপহরণ এবং একই বছরের ১৯ এপ্রিলে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে। মার্কাডো ছিলেন কলম্বিয়ার কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট। তার বিরুদ্ধে এম নাইটিনের অভিযোগ ছিল, তিনি আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
সরকাররের বিরুদ্ধে এম-১৯ সবচেয়ে বড় আঘাতটি করে ১৯৭৯ সালে। নিরাপত্তা বুহ্য ভেদ করে এদিন নববর্ষের প্রাক্কালে গেরিলারা একটি সুড়ঙ্গের মাধ্যমে কলম্বিয়ান আর্মির অস্ত্রাগারে ঢুকে পড়ে। মনে করা হয়, অস্ত্রাগার থেকে গেরিলারা কমপক্ষে ৫ হাজারের মতো অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণে গোলাবারুদ লুট করে। সরকারের তরফ থেকে এম নাইনটিনের বিরুদ্ধ সবচেয়ে বড় অপারেশন পরিচালিত হয় ১৯৮০ সালে। অপারেশনের মাধ্যমে সরকার এম নাইটিনের কমান্ডার জেমি ব্যাটম্যানকে গ্রেফতার করে। তবে পাল্টা আঘাত দিতে বিলম্ব করেনি গেরিলারা। ওই বছরের এপ্রিলে তারা ডমিনিকান রিপাবলিকের দূতাবাসে হামলা করে মার্কিন যুকরাষ্ট্রসহ চৌদ্দ জন কূটনীতিককে অপহরণ করে। এরপর সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর ৬১ দিন পরে বিপুল অঙ্কের মুক্তিপণের বিনিময়ে (প্রায় ২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) কূটনীতিকদের মুক্তি দেয়। ১৯৮২ সালে এসে সরকার এবং এম নাইটিন গেরিলারা উভয় পক্ষই পানামার মধ্যস্থতায় আলোচনার টেবিলে বসতে সম্মত হয়। কিন্তু ১৯৮৩ সালের ২৮ এপ্রিল জেমি ব্যাটম্যান পানামা যাওয়ার পথে আকস্মিক বিমান দুর্ঘটনায় মারা যায়। ফলে আলোচনাও বন্ধ হয়ে যায়।
এরপর ১৯৮৫ সালে আবারও সরকারের বিরুদ্ধ আঘাত আনে এম-১৯। এবার তাদের লক্ষ্য ছিল প্যালেস অব জাস্টিস বা করম্বিয়ার সুপ্রিম কোর্ট। দুই ডজনের মতো গেরিলা কোর্ট ভবনে ঢুকে আইনজীবী ও বিচারকদের আটক করে। তবে এবার কলম্বিয়ার সরকার আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়। সেনাবাহিনী সমস্ত কোর্ট ভবন ঘিরে ফেলে এবং অপারেশন শুরু করে। অপারেশনে কলম্বিয়ার তৎকালীন প্রধান বিচারপতিসহ সমস্ত গেরিলারা মারা। এটা ছিল এম নাইটিনের জন্য অনেক বড় আঘাত।কারন প্যালেস অব জাস্টিস ভবনে অপারেশনের ফলে তাদের প্রধান প্রধান সামরিক ও রাজনৈতিক নেতা মারা পড়ে। দিশেহারা এম নাইনটিন ১৯৮৯ সালে এসে সরকারের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে এবং ১৯৯০ সালে সব সদস্যই তাদের অস্ত্র সমার্পণ করে। এরপর তারা এম-১৯ ডেমেক্রেটিক অ্যালায়েন্স নামে রাজনৈতিক দল গঠন করে।
রাজনৈতিক দল গঠনের পরে প্রথম দিকে তারা সুবিধা করতে পারেনি। ১৯৯০ সালে তাদের অনেক নেতা গুপ্ত হত্যার শিকার হয়। ১৯৯১সালে এসে তারা রাজনৈতিকভাবে বেশ সফলতা অর্জন করে এবং একই বছরে আধুনিক কলম্বিয়ার সংবিধান প্রণয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। তবে সময়ের সঙ্গে রাজনৈতিক দল হিসেবে এম নাইটিন ব্যর্থতার পরিচয় দিতে থাকে। কারণ তাদের অনেক নেতাই বিভিন্ন দলে যোগ দিয়ে রাজনীতি শুরু করে।

Related Posts

Leave a Reply