May 20, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular রোজনামচা

এবার রেশমপোকায় করোনা ভ্যাকসিনের সন্ধান 

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস : 

বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা কভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্যে হন্যে হয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। একেক বিজ্ঞানী বা দল বিভিন্ন উৎসে ভ্যাকসিনের সন্ধান চালাচ্ছেন। এর মধ্যে জাপানের কাইয়ুশু ইউনিভার্সিটির প্রফেসর তাকাহিরো কুসাকাবে এবং তার দল অনন্য এক ভ্যাকসিন আবিষ্কারে মন দিয়েছেন। তারা এটি প্রস্তুত করবেন রেশমপোকা থেকে।

তার এই প্রজেক্টে প্রতিটি রেশমপোকা যেন এমন এক-একটি কারখানা যেখানে বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন উৎপাদিত হয়। আর এই বিশেষ প্রোটিনই হবে তাদের ভ্যাকসিন তৈরির মূল উপকরণ। কুসাকাবে বলেন, রেশমপোকা ব্যবহার করে মুখে গ্রহণ করতে হয় এমন একটি ভ্যাকসিন বানানো সম্ভব হবে এবং ২০২১ সালেই মানবদেহে এর পরীক্ষা চালানোর লক্ষ্য নেয়া হয়েছে।

পশ্চিম জাপানের ফুকুওকায় কাইয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি ভবনে বসে এর সম্পর্কে বলছিলেন কুসাকাবে। তিনি জানান, আমাদের সংগ্রহে ৫০০ প্রজাতির আড়াই লাখ রেশমপোকা রয়েছে।

এ ভবনের অদূরেই তার পরীক্ষাগার। এই ভ্যাকসিন তৈরিতে গবেষণা করছেন তার শিক্ষার্থী ভলান্টিয়াররা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে তারা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। গত মে মাসে কুসাকাবের সাথে কথা বলে নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ। তখন জাপানে জরুরি অবস্থা বিরাজ করছিল। কার্যকর ভ্যাকসিন তৈরির জন্যে বিজ্ঞানীদের দলটি তাদের গবেষণা পরিকল্পনা প্রস্তুত করে ফেলেছে।

রেশমপোকার এই প্রোটিনের জিন করোনাভাইরাসের ওপর কার্যকরভাবে প্রভাববিস্তার করতে সক্ষম। গবেষণায় রেশমপোকার দেহে করোনাভাইরাস ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়। চারদিন পরই দেখে গেছে কভিড-১৯ এর ওপর প্রভাববিস্তারকারী প্রোটিনের উৎপাদন বেড়ে গেছে রেশমপোকার দেহে। করোনার প্রভাব ঠেকাতে যে প্রোটিন উৎপন্ন হয়েছে, তা বের করে আনা হয় রেশমপোকার দেহ থেকে। এটি পরিশোধন করে ভ্যাকসিনে রূপান্তর করা হয়েছে যা কিনা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে কার্যকারিতা পরখ করা হয়।

গবেষণাগারে থাকা হাজারো রেশমের মধ্যে এক নির্দিষ্ট প্রজাতি পাওয়া গেছে যার দেহে এই প্রোটিন উৎপন্ন হয় আশানুরূপভাবে।

জাপানে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির জন্যে ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অ্যাঞ্জেস নামের একটি বায়োটেকনলজি কম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই প্রতিষ্ঠান একটি ডিএনএ ভ্যাকসিন প্রস্তুত করেছে যার মাধ্যমে মানবদেহে করোনাবিরোধী প্রোটিনের জিন প্রদান করাই লক্ষ্য। এই জিন মানবদেহে কার্যকর প্রোটিন তৈরি করবে এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলবে।

তবে কুসাকাবের দলের উদ্দেশ্য এই কার্যকর প্রোটিন রেশমপোকার দেহ থেকে তৈরি করে প্রয়োগ করা, মানবদেহে তৈরি করা নয়। তাদের বিশ্বাস, এটি অন্যান্য ভ্যাকসিনের চেয়ে বেশি নিরাপদ।

কুসাকাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সেস এর সহায়তায় তার তৈরি ভ্যাকসিন পশুর দেহে প্রয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছেন। প্রথমেই তিনি রেশমপোকার দেহ থেকে সংগৃহীত এই কার্যকর প্রোটিন ইঁদুরের দেহে প্রয়োগ করে দেখবেন এটি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে অ্যান্টিবডি তৈরি করে কিনা। তারপর তিনি দেখবেন এবং অ্যান্টিবডি দেহের কোষে করোনার অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সক্ষম কিনা। ২০২১ সালের প্রথম দিকেই পশুর দেহে যাবতীয় পরীক্ষার কাজ সেরে ফেলতে চান বিজ্ঞানী। এরপর মানবদেহে পরীক্ষা করা হবে।

কুসাকাবের মতে, ভ্যাকসিন উৎপাদনে যে উপাদান দরকার হবে তার রেশমপোকার দেহে মাত্র ৪০ দিনেই উৎপন্ন হবে। এছাড়া এই উপায়ে ভ্যাকসিন উৎপাদনের ব্যয় মোটেও অনেক বেশি হবে না।

বছর দুয়েক আগে কুসাকাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক গবেষণাগার তৈরি করেন যার নাম কাইকো। এখন পর্যন্ত তারা রেশমপোকার দেহ থেকে এক ধরনের এনজাইম তৈরি করেছেন। মুরগি বা শুকরের দেহে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করেছেন তারা।

চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা এবং জাপানের মানুষ, অর্থাৎ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ প্রোটিনের উৎস হিসেবে কীট-পতঙ্গ খেয়ে থাকেন। আবার অনেক মানুষ এসব কীট-পতঙ্গ খেতে পারেন না। তাদের জন্যে মূককীটকে প্রক্রিয়াজাত করে পাউডার তৈরি করা যেতে পারে। এই পাউডার ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল আকারে সহজেই গ্রহণ করা যায়। এসব মূককীটের নাড়ি-ভুড়ি থাকে না। ফলে তাদের পাউডার তৈরি করার পরও হজম প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া এনজাইম পোকার দেহের প্রোটিন নষ্ট করতে পারে না।

Related Posts

Leave a Reply