May 17, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

সাবধান: বাচ্চাদের দিনে ৯০ মিনিটের বেশি টিভি দেখতে দিয়েছেন কি …!

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

কটি গবেষণা পত্র অনুসারে প্রতিদিন ৩ ঘন্টার বেশি সময় বাচ্চার যদি টিভির সামনে বসে থাকে, তাহলে তাদের শারীরিক সচলতা কমতে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেহে মেদের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে বাড়ে আরও নানা সব রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও।

তাই বাবা মায়েরা সাবধান হন! গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে বাচ্চাদের মধ্যে ওবেসিটি সমস্যা মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পয়েছে। যে কারণে সামগ্রিক ভাবে বেড়েছে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের রোগের মতো নন-কমিউনিকেবল ডিজিজে আক্রান্তের সংখ্যা। তাই নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যতকে সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর করতে এখন থেকেই বাবা-মায়েদের এগিয়ে আসতে হবে। না হলে আমাদের সবার ভবিষ্য়তই যে বেজায় অন্ধকারে হারিয়ে যাবে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

প্রসঙ্গত, পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্য়ার প্রায় সিংহভাগই অবসর সময়ে টিভি দেখতে পছন্দ করেন। এমনটা করাতে তাদের জ্ঞানের ভান্ডার একেবারে ফুলেফেঁপে ওঠে। সেই সঙ্গে নানা বিষয় সম্পর্কে আগ্রহও বৃদ্ধি পায়। ফলে মানুষ হিসেবে অনেক অগ্রগতি ঘটে সবার। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না যে প্রদীপের তলাতেই কিন্তু বেশি অন্ধকার থাকে। মানে টিভি দেখার যতটা না উপকারিতা আছে, তার থেকেও অপকারিতার লিস্টটাই বেশি লম্বা। নিশ্চয় বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা। ভাবছেন টিভি দেখার মধ্যে খারাপ কী আছে? একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে সারা দিনে শরীরের কথা না ভেবে যেসব ভুল কাজগুলি আমরা করে থাকি, তার মধ্যে সব থেকে প্রথমে রয়েছে বহুক্ষণ ধরে টিভি দেখার অভ্যাস। এমনটা করলে যে যে শারীরিক ক্ষতিগুলি হয়ে থাকে সেগুলি হল…

১. হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়: প্রায় ৬ বছর ধরে ৮,৮০০ মানুষের উপর চালানো এক গবেষণা শেষে জানা গেছে ঘন্টার ঘন্টা টিভি দেখলে প্রতি ঘন্টায় কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের কারণে মৃত্যুর সম্ভবনা প্রায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। আর ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে প্রায় ৯ শতাংশ। তাই তো একথা বলাই যায় যে যারা প্রতিদিন ৪ ঘন্টার বেশি সময় টিভি দেখেন তাদের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা সাধারণ মানুষদের তুলনায় প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি থাকে। তাই হার্টকে সুস্থ রাখতে আজ থেকেই টিভি দেখার সময় কমান। না হলে কিন্তু বিপদ!

২. ঘুম কমে যায়: বেশি সময় টিভি দেখলে তার থেকে বেরনো আলো আমাদের মস্তিষ্কের অন্দরে তৈরি হওয়া মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। ফলে সহজে ঘুম আসতে চায় না। কারণ মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরনের সঙ্গে আমাদের ঘুমের সরাসরি যোগ রয়েছে।

৩. ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়: ২০০৩ সালে আমেরিকান মেডিকাল অ্যাসোসিয়েশনের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্র অনুসারে টানা ২ ঘন্টা টিভি দেখলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। টিভি দেখার সময় যত বাড়তে থাকে, তত আমাদের শরীরে নেতিবাচক পরিবর্তন হওয়ার মধ্যে দিয়ে মধুমেহ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত, সেই একই সময় প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা পত্রে উল্লেখ ছিল, যারা সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা টিভি দেখেন, তাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৩ গুণ বেড়ে যায়। একবার ভাবুন তাহলে বর্তমান জেট যুগে যেসব লাইফ স্টাইলে ডিজিজে বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকেন, সেই সবকটি রোগের সঙ্গেই টিভি দেখার সরাসরি যোগ রয়েছে।

৪. ওজন বৃদ্ধি পায়: বহুক্ষণ ধরে টিভি দেখলে পেশির সঞ্চালন কমে যায়। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতাও কমে যেতে শুরু করে। ফলে ওজন বাড়তে থাকে। টিভি দেখার সঙ্গে ওজন বৃদ্ধির যে সম্পর্কে রয়েছে তা কিন্তু এখানেই শেষ হয়ে যায় না। একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে টিভি দেখার সময় মুখ চালাতে অনেকেই খুব পছন্দ করেন। ফলে যত বেশি সময় টিভি দেখা হয়, তত বেশি বেশি করে খাওয়াও হয়ে যায়। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই শরীরে ক্যালোরির মাত্রা বেড়ে গিয়ে ওজন বাড়তে শুরু করে। আর ওজন বাড়লে একে একে শরীরে এসে বাসা বাঁধে কোলেস্টরল, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হার্টের রোগের মত মারণ রোগ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আয়ু কমতে শুরু করে।

৫. মনযোগ কমে যায়: ১৯৭০ সালে প্রফেসর ওয়ার্নার হেলপেরিন একটা কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, টিভি দেখার সময় আমাদের সামনে দ্রুত বদলে যায় ছবি এবং আওয়াজ। যে কারণে বাচ্চাদের নিউরোলজিক্যাল সিস্টেমে মারাত্মক কু-প্রভাব পরে। ফলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি মনযোগের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে পড়াশোনা খারাপ হতে শুরু করে। সেই কারণেই তো বাবা-মায়েদের উচিত বাচ্চাদের টিভি দেখার অভ্যাস না করিয়ে বই পড়ার বিষয়ে বেশি আগ্রহী করে তোলা।

৬. অ্যাস্থেমা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়: প্রায় ১১ বছর ধরে প্রায় ৩০০০ জনের উপর করা এক গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যেসব বাচ্চা দিনে ২ ঘন্টার বেশি টিভি দেখে, তাদের জীবনের একটা সময়ে গিয়ে অ্যাস্থেমা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

৭. চোখ খারাপ হয়ে যায়: বেশক্ষণ টিভি দেখলে রেটিনার উপর মারাত্মক চাপ পরে। ফলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, যারা অন্ধকারে বসে টিভি দেখেন তাদের চোখের ক্ষতি বেশি হয়। তাই ভুলেও এবার থেকে অন্ধকারে বসে টিভি দেখবেন না।

৮. রাগ বেড়ে যায়: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে টিভিতে খুন, খারাপি বা হিংসাত্মক প্রোগ্রাম বেশি দেখলে ৮-৮০ সবারই চরিত্রে ধীরে ধীরে বদল আসতে শুরু করে। এক্ষেত্রে রাগ বেড়ে যাওয়া, হিংস প্রভৃতি চারিত্রিক লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে শুরু করে। তাই বাচ্ছাদের ছোটবেলাটা সুন্দর করে তুলতে তাদের টিভির থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখুন, সেই সঙ্গে নিজেরও টিভি দেখার অভ্যাসে লাগাম পরান।

Related Posts

Leave a Reply