লিভার সহজে হবে বিষমুক্ত এই ১০টি খাবারে
কলকাতা টাইমস :
‘জীবনটা কি যাপন করার যোগ্য? বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে লিভারের ওপর’। উইলিয়াম জেমস এর এই উক্তিটি আধুনিক জীবন-যাপনের ধরনের জন্য যথাযথভাবে প্রযোজ্য। কারণ আধুনিক কালের মানসিক চাপপূর্ণ কর্মজীবন এবং ভারসাম্যহীন খাদ্যাভ্যাসের কারণে লিভারের কর্মক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এই অতি উচ্চাকাঙ্খী সাফল্যের দুনিয়ায় আমার প্রায়ই ভুলে যাই সাফল্য পেতে হলে একচি ভারসাম্যপূর্ণ দৈহিক স্বাস্থ্যও জরুরি।
এমন কিছু খাদ্য এবং জীবন যাপনের অভ্যাস আছে যেগুলো আমাদের অজান্তেই আমাদের লিভারের বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করছে। লিভারের সবচেয়ে বড় শত্রু মদ। তেল-চর্বি এবং ট্রান্স ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবারও লিভারের ক্ষতি করে। আপনার লিভারের আকার যদি ইতিমধ্যেই বেড়ে গিয়ে থাকে, ফ্যাটি লিভার হয়ে থাকে বা এসজিপিটি ও এসজিওটির মতো মৌলিক লিভার পরীক্ষায় কোনো গণ্ডগোল ধরা পড়ে থাকে তাহলে আপনাকে এখনই সতর্ক হতে হবে। আপনার লিভারকে এর স্বাভাবিক আকার ও স্বাস্থ্য ফিরিয়ে দিতে হবে।
লিভার বেশ বড় একটি অঙ্গ। ফলে এটির ক্ষয়-ক্ষতি হতে যেমন দীর্ঘ সময় লাগে তেমনি এটি ভালো হতেও দীর্ঘ সময় লাগে। তবে একবার যদি সিরোসিস হয়ে যায় তাহলে লিভার ভালো করা কঠিন হয়ে পড়ে। সুতরাং খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই আপনার জীবন-যাপন ও খাদ্যাভ্যাসে মৌলিক কিছু পরিবর্তন আনুন লিভারকে সুস্থ্য রাখার জন্য।
বেশ কিছু খাবার আছে যেগুলো আমাদের লিভারকে ভালো রাখার জন্র বিস্ময়করভাবে উপকারী। আজ থেকেই সেগুলো নিয়মিত খাওয়া শুরু করুন। আসুন জেনেও নেওয়া যাক এমন ১০টি খাবারের কথা।
১. হলুদ : সোনালি মশলা নামে পরিচিত হলুদ লিভারের সবচেয়ে বেশি উপকার করে। কারণ এই মশলাটি দেহ থেকে খাদ্য বিষ নিঃসরণের কাজ করে যেসব এনজাইম সেসবকে সহায়তা করে। এ কারণেই ভারতীয় উপমহাদেশের রান্নায় সবসময়ই হলুদ ব্যবহার করা হয়। প্রতিদিন এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে এক চা চামচ হলুদ মিশিয়ে পান করুন।
২. লেবু: ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু দেহকে বিষাক্ত পদার্থ সংশ্লেষণ করে এমন বস্তুতে রুপান্তরিত করে, যাকে পানি সহজেই শুষে নিতে পারে। আর এ কারণেই সকালে লেবু-জল পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ লেবু-পানি লিভারকে কার্যকরভাবে কাজ করতে উদ্দীপনা যোগায়।
৩. আপেল : সকালে একটি আপেল খেলে তা লিভারকে দিনভর টক্সিন বা খাদ্য-বিষ থেকে রক্ষা করে। এতে আছ পেকটিন নামের উপাদান যা হজম নালিকে টক্সিন বা বিষমুক্ত ও পরিষ্কার করতে জরুরি। এছাড়া অন্যান্য টক্সিন থেকেও লিভারকে সুরক্ষা দেয় আপেল।
৪. সবুজ শাক-সবজি : স্পিনাক, করলা, সুবজ সরিষা শাক এর মতো সবুজ শাক-সবজি খেতে হবে নিয়মিত। কারণ সবুজ শাক-সবজি পায়খানা সৃষ্টি এবং মলত্যাগের হার বাড়ায়। যার ফলে লিভার এবং রক্ত থেকে বর্জ্য পরিষ্কার হয়।
৫. অলিভ অয়েল : অলিভ অয়েল দেহে থেকে লিভারের মতোই টক্সিন শুষে নিতে পারে। ফলে এটি লিভারের সহায়ক হাত হিসেবে কাজ করে।
৬. জাম্বুরা : জাম্বুরাতে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে উচ্চ মাত্রায়। প্রতিদিন এক গ্লাস জাম্বুরার জুস পান করলে লিভারকে বিষমুক্ত করতে সহায়ক এনজাইমের উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে ক্যান্সারজনক এবং অন্যান্য টক্সিন দেহে থেকে বের হয়ে যায় সহজেই।
৭. রসুন : এতে আছে উচ্চামাত্রার অ্যালিসিলিন এবং সেলেনিয়াম। এই উপাদান লিভারকে পরিষ্কার প্রক্রিয়া জোরদার করে। তবে প্রতিবেলা খাবারের সঙ্গে সীমিত পরিমাণে খেতে হবে রসুন। বেশি খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৮. বিটরুট : উদ্ভিদ-ফ্ল্যাভোনোয়েড এবং বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ এই খাবারটি লিভারের কর্মতৎপরতা জোরদার করে। এবং রক্তকেও বিষমুক্ত করে।
৯. অ্যাভোকাডো : নিয়মিতভাবে এই খাবারটি খেলে দেহে গ্লুটাথিওন এর উৎপাদন বাড়ে। যা লিভারকে ক্ষতিকর টক্সিন বা খাদ্য-বিষ থেকে মুক্ত করতে জরুরি একটি উপাদান।
১০. আখরোট : এতে আছে গ্লুটাথিওন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং অ্যামাইনো এসিড আর্জিনিন যা লিভারকে পরিষ্কার করতে সহায়ক। এছাড়া অ্যামোনিয়া টক্সিনমুক্ত করতে সহায়ক। আখরোট খাওয়ার সময় তা গলাধকরনের আগে ভালো করে চিবিয়ে নিন।