May 17, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

অলিখিত নিয়মেই পরিবারের সবাই রাতে একসঙ্গে খাবারের টেবিলে! লাভ না ক্ষতি বলছে বিজ্ঞান 

[kodex_post_like_buttons]

 

বেশিরভাগ পরিবারেই সবাই একসঙ্গে রাতের খাবার খাওয়ার প্রচলনটা এখনও রয়েছে। কিন্তু এর পেছনের কারণগুলি ঠিক চাপিয়ে দেয়া নিয়ম নয়। বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

ছোট পরিবার হোক বা বড়সড় একান্নবর্তী পরিবার, সকালের নাস্তা এবং রাতের খাবার বাড়ির সবাই একসঙ্গে খেতে বসার রেওয়াজ এদেশের বেশিরভাগ পরিবারেই রয়েছে। যেহেতু দুপুরেরর খাবার সময় সবাইকে একসঙ্গে পাওয়া মুশকিল এবং সকালে বের হওয়ার সময় সবার দেখা নাও হতে পারে, তাই এই সময়গুলোতে সকলের একসঙ্গে খাওয়া হয়ে ওঠে না।

তাই বেশিরভাগ পরিবারেই অলিখিত নিয়ম, নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি ফিরে রাতের খাবারটা সকলের সঙ্গে করতে হবে। এই নিয়ে শাশুড়ি-বউ এবং বাবা-ছেলের মধ্যে চাপা টেনশন থাকে একটু-আধটু।

যারা কর্মরত, তাদের না হয় কাজে কর্মে দেরি হতে পারে কিন্তু কলেজ-পড়ুয়া ছেলেমেয়েরাও রাতের খাবারের সময় এসে উপস্থিত না হলে বহুক্ষেত্রেই বাড়ির বড়দের বকুনি শুনতে হয়।

প্রাপ্তবয়স্করা কখন বাড়ি ফিরবেন, এই নিয়ে বেশি কিছু বলা তাদের ব্যক্তি-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ যেমন, তেমনই এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে দিনের মধ্যে অন্তত একবার পরিবারের সকলের সঙ্গে খাবার খাওয়াটা শুধুই সংস্কার নয়, এর কিছু বিজ্ঞানসম্মত উপকারিতা রয়েছে—

প্রথম এবং প্রধান উপকারিতাটি কিন্তু শিশু-কিশোরদের। এই বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা-ভয় কাজ করে। রাতের খাবারে পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে পেলে তাদের আত্মবিশ্বাস ও পরিবারের প্রতি আস্থা বেড়ে যায়। তারা অনেক বেশি সুরক্ষিত বোধ করে।

২০১৬ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল যে ৭১ শতাংশ টিনএজার মনে করে যে ডিনার খাওয়ার থেকেও বেশি তারা পছন্দ করে ওই সময় বাড়ির সকলের সঙ্গে গল্প করা বা দেখা হওয়া।

দেখা গেছে, যে সব পরিবারে এই চল রয়েছে, সেই পরিবারের শিশুরা পড়াশোনায় বেশ এগিয়ে থাকে।

‘কাসা’-র একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, যে সব বাচ্চারা সপ্তাহে অন্তত ৫-৭দিন পরিবারের সবার সঙ্গে বসে ডিনার করতে পারে, তাদের মধ্যেই ‘এ’ এবং ‘বি’ গ্রেড পাওয়ার সংখ্যা বেশি।

২০০৮ সালে, আইবিএম সংস্থার কর্মীদের মধ্যে একটি সমীক্ষা করে ব্রিঘাম ইয়ং বিশ্ববিদ্যালয়। সমীক্ষায় দেখা যায় যে, ফ্যামিলি ডিনার যে কোনও ধরনের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। কাজের জায়গায় দীর্ঘক্ষণ কাটানোর পরে বাড়ি ফিরে এসে সবার সঙ্গে একসঙ্গে বসে ডিনার সারলে অনেকটা স্বস্তি আসে।

প্রত্যেকেই চান, ডিনারে গরম গরম খাবার পরিবেশিত হোক। সবাই মিলে একসঙ্গে না খেলে, বার বার খাবার গরম করার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এর ফলে খাবারের খাদ্যগুণ অনেকটা কমে যায়।

রান্না করার সময়ে এমনিতেই খাদ্যগুণ কমে যায় ২৫ শতাংশ। এর পরে সেই খাবার ফ্রিজে রাখলে আরও ৫ শতাংশ কমে খাদ্যগুণ। তার পরে আবারও গরম করলে খাদ্যগুণ কমে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ।

একসঙ্গে ডিনার সারার অভ্যাস থাকলে জীবনযাপনে অনেক বেশি শৃঙ্খলা আসে। কারণ এর জন্য নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি ফিরতেই হয় এবং ডিনারের পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়। কাজের প্রয়োজনে, বা কখনও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাতের কারণে ফ্যামিলি ডিনার বাদ দিয়ে বেশি রাতে ফেরা যায় কিন্তু এমনটা প্রতিদিন হলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব একটা ভাল না।

ক্রিস্টোফার র‌্যান্ডলার, জার্মানির হাইডেলবার্গে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ এডুকেশনের অধ্যাপক, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোনোর অভ্যাস নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন। তার মতে, যে সব চাকুরিজীবীরা তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান ও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠেন, তাদের মধ্যে কর্মক্ষমতা বেশি থাকে, সেন্স অফ হিউমার অপেক্ষাকৃত ভাল হয় এবং এদের পেশাগত সাফল্যও অনেক বেশি হয়।

রাতে পরিবারের সঙ্গে ডিনারের অভ্যাস থাকলে স্বাভাবিকভাবেই নিয়মিত বাইরে খাওয়ার ঝোঁকটা কমে। পৃথিবীজুড়ে সমস্ত নিউট্রিশনিস্ট ও লাইফস্টাইল বিশেষজ্ঞদের এই ব্যাপারে কোনও দ্বিমত নেই যে বাড়ির খাবারই নিয়মিত খাওয়া শরীর-স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল।

Related Posts

Leave a Reply