May 10, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular ব্যবসা ও প্রযুক্তি

ঘুম ভাঙাতেও ছিল পেশাদার, বাকি ১৪ অদ্ভুতুড়ে পেশার মতো তারাও গায়েব 

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস : 
আপনি যে কাজ করে অর্থ উপার্জন করবেন সেটাই আপনার পেশা। বর্তমানে পেশার অনেক রকম থাকে। এখন মানুষের শখ যেমন অদ্ভুত হয়ে দাঁড়িয়েছে তেমনই কিছু পেশা খুবই অদ্ভুত। যদিও অদ্ভুত বলতে যা বোঝায় তার বেশ কিছু পেশা বর্তমানে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত। 
পৃথিবীতে কত রকমের পেশা রয়েছে তা বলা মুশকিল। তবে এরকমই  প্রায় ১৪টি অদ্ভুত পেশা পৃথিবীর বুক থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। পেশাগুলো এমনই অদ্ভুত যে বেশিরভাগের কথাই আপনার আগে কখনো হয়তো শোনা হয়নি। এখন জানার পর অবাকই হবেন –

১. নকার-আপ : আজকের দিনে ঘুম থেকে সময়মতো ওঠার জন্য মোবাইলের অ্যালার্মের কোনো বিকল্প নেই। এক সময় এ জায়গায় ছিল এলার্ম ঘড়ি। কিন্তু এ এলার্ম ঘড়ি আসার আগে মানুষ তাহলে সময়মতো ঘুম থেকে ওঠার জন্য কী করত? তখন আসলে অদ্ভুত এক পেশা ছিল যার নাম ‘নকার-আপ’ কিংবা ‘নকার-আপার’। নারী-পুরুষ উভয়েই এ পদ্ধতিতে জীবিকা নির্বাহ করত। যে ব্যক্তির বাড়িতে যেদিন তাদের ডিউটি, সেদিন সেই বাড়িতে গিয়ে তার বেডরুমের জানালায় বড় লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকত একজন নকার-আপার। গ্রাহক ঘুম থেকে উঠেছে নিশ্চিত করেই সে পরের গ্রাহকের দিকে ছুটত।

২. লিঙ্ক বয় : রাতের বেলায় ঘর থেকে বেরোলেই রাস্তায় জ্বলা বিদ্যুৎবাতি আমাদের পথ আলোকিত করে দেয়। আর কোনো কারণে লোডশেডিং হলে টর্চ কিংবা স্মার্টফোনের টর্চলাইটের অপশন তো আছেই। তবে বিদ্যুতের এমন সহজলভ্যতার আগের জীবন কিন্তু অতটা সহজ ছিল না। তখন রাতের বেলায় পথ চলতে গেলে অন্ধকার দূরীকরণে কাজ করত কম বয়সী ছেলেরা যাদের বলা হতো লিঙ্ক বয়। হাতে একটি মশাল ধরে তারা পথচারীদের পথকে আলোকিত করে তুলত, সঙ্গে জুটত সামান্য কিছু অর্থ। রাস্তায় বিদ্যুৎবাতি আসার আগে ইংল্যান্ডে এ লিঙ্ক বয়দের দেখা মিলত।

৩. পিম্প মেকার : একসময় লন্ডন ও এর আশপাশের এলাকায় পিম্প মেকার নামের এ পেশাটির চল ছিল। অতীতে ট্রেনিং দিয়ে পিম্পদের প্রস্তুত করা হতো! আসল ঘটনা এর ধারে কাছেও নেই। লন্ডন এবং তার আশপাশের এলাকাগুলোতে ব্যবহৃত এক আঞ্চলিক শব্দ ছিল পিম্প, যার অর্থ তাদের কাছে ছিল জ্বালানি কাঠের স্তূপ। যে ব্যক্তি বিক্রির জন্য কাঠ সংগ্রহ করত তাকেই তারা পিম্প মেকার বলত।

৪. টোশার : টোশারদের তুলনা করা যায় আমাদের দেশের কাগজ কুড়োনীদের সঙ্গে। টোশারদের দেখা মিলত লন্ডনের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কাছাকাছি জায়গায়। সব জায়গা থেকে আসা ময়লায় তারা অক্ষত কিন্তু দরকারি জিনিস খুঁজে বেড়াত। তারপর কিছু পেলে সেটা পরিষ্কার করে বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করত তারা।

৫. গং-ফার্মার : আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে মানব বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। তাই প্রাকৃতিক কর্মাদি সেরে টয়লেটের ফ্লাশ ব্যবহার করলেই হয়ে যায়। আর সেপটিক ট্যাংকে জমা হওয়া ময়লার জন্যও আছে বিশেষ ট্রাক যা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সেই ময়লাগুলো বের করে আনতে পারে মানুষের হাতের স্পর্শ ছাড়া। তবে আগেকার দিনে এ কাজের জন্য যখন যন্ত্র ছিল না তখন কিন্তু মানুষই ছিল একমাত্র ভরসা। টয়লেটের যাবতীয় আবর্জনা খালি হাতেই পরিষ্কার করা এ মানুষগুলো গং-ফার্মার বা নাইট সয়েলম্যান হিসেবেই পরিচিত ছিল। রাতের বেলায় মূলত তারা কাজ সারতেন বলেই তাদের নাইট সয়েলম্যান বলা হতো। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতেন বলে তাদের অনেকেই মারা যেতেন শ্বাসরোধ হয়ে।

৬. জিমনারসিয়াখ : জিমনেশিয়াম বলতে আমরা চিনি ব্যায়ামাগারকে। আর এ জিমনেশিয়ামের সঙ্গেই সম্পর্ক রয়েছে জিমনারসিয়াখের। প্রাচীন গ্রিসে প্রচলিত ছিল এ পেশাটি। রেসলিং, ব্যায়ামাগারে ব্যায়াম সারা কিংবা অন্যান্য খেলাধুলার পর একজন অ্যাথলেটের গায়ে লেগে থাকা ঘাম পরিষ্কার করা, তার শরীর মুছে দেওয়া এবং তেল মাখিয়ে দেওয়াই ছিল এ পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তির প্রধান কাজ। শুনতে কিছুটা অদ্ভুত আর গা ঘিনঘিনে হলেও তখনকার গ্রিসে কিন্তু পেশাটিকে বেশ সম্মানের চোখে দেখা হতো। আবেদনকারীর বয়স হতে হত  ৩০-৬০ এর ভেতর। একইসঙ্গে সম্ভ্রান্ত বংশীয় হওয়াও ছিল পেশাটিতে শর্ত।

৭. শেষকৃত্যানুষ্ঠানের ভাঁড় : একজন মানুষের শেষকৃত্যানুষ্ঠান শোকের চাদরে মোড়া থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রাচীন রোম যেন এ স্বাভাবিক নিয়মটিও মানতে চায়নি। তাই কারো শেষকৃত্যানুষ্ঠানেও তারা নিয়োগ দিত বিভিন্ন ভাঁড়কে। তারা রং-বেরঙের পোশাক পরে এসে করত নানা মজাদার অঙ্গভঙ্গি, অনুকরণের চেষ্টা করত মৃতের নানা কথাবার্তা-চালচলন। এসবের উদ্দেশ্য ছিল মৃতের আত্মাকে শান্তি দেওয়া এবং জীবিত শোকার্ত আত্মীয় ও কাছের মানুষদেরকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করে তোলা। এসব করে তাদের অর্থোপার্জনও বেশ ভালোই হতো।

৮. ফুলার : ফুলিং বলতে বোঝায় কাপড় পরিষ্কার করার প্রক্রিয়াকে। প্রাচীন রোমে এ কাজটি করত ক্রীতদাসেরা। এজন্য গোড়ালি সমান মূত্রের মাঝে দাঁড়িয়ে কাপড় ধুতে হতো তাদের! কিছুটা অদ্ভুত শোনালেও এর পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। তখনকার দিনে তো আর এখনকার মতো কাপড় ধোয়ার জন্য এত সাবান কিংবা গুঁড়া সাবানের প্রচলন ছিল না। মূত্রে থাকা অ্যামোনিয়াম লবণ পরিষ্কারক ক্ষমতাসম্পন্ন। এজন্যই মূলত মূত্রের দ্বারস্থ হয়েছিল রোমের মানুষেরা। সেই মূত্রের মাঝে মূলত মানুষের মূত্রই থাকত।

৯. গ্রুম অব স্টুল : আজ প্রাচীন পৃথিবীর যেসব অদ্ভুত পেশার কথা আলোচনা করলাম, তার মাঝে সবচেয়ে অদ্ভুত সম্ভবত এটিই। একজন ইংরেজ রাজার সভাসদদের মাঝে তার সবচেয়ে কাছের লোক থাকতেন এ গ্রুম অব স্টুল। তার কাজ ছিল রাজার  হাত-পা ধুইয়ে দেওয়া এবং সেই সঙ্গে প্রকৃতির বড় ডাকে সাড়া দেওয়ার পর তার পশ্চাদ্দেশ পরিষ্কার করে দেওয়া! শারীরিকভাবে রাজার এত কাছে আসার কারণেই রাজা তাকে এতটা বিশ্বাস করতেন, রাজ্যের নানা গোপনীয় কথাবার্তাও শেয়ার করতেন তার সঙ্গে। বর্তমান দুনিয়ায় কাজটি যতই অদ্ভুত এবং অপমানজক মনে হোক না কেন, তখনকার দিনে কিন্তু একজন গ্রুম অব স্টুলকে বেশ সম্মানের চোখে দেখা হতো।

১০. পিন সেটার : ১৯৩৬ সালে গটফ্রিড স্মিট যান্ত্রিক পিন সেটার উদ্ভাবনের আগ পর্যন্ত বোলিং পিনগুলো সাজাতে, পড়ে যাওয়া পিনগুলো সরাতে এবং বলটি খেলোয়াড়ের হাতে দিয়ে আসতে এসব কমবয়সী ছেলেদের কাজে লাগানো হতো।

১১. ফ্রেনোলজিস্ট : বর্ণবাদ এবং অপবিজ্ঞানের দায় মাথায় নিয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এ পেশাটি। মানুষ এককালে ফ্রেনোলজিস্টের কাছে গেলে তিনি একজনের মাথার আকার দেখে তার বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারতেন!

১২. পাউডারমাঙ্কি : অতীতের নৌপথের যুদ্ধগুলোতে কমবয়সী যে ছেলেগুলো কামানে গানপাউডার ভরে দিত তাদেরকে বলা হতো পাউডারমাঙ্কি।

১৩. লেক্টর : ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে করতে শ্রমিকদের মাঝে যাতে একঘেয়েমি জেঁকে না বসে সেজন্য নিয়োগ দেওয়া হতো লেক্টরদের। তাদের কাজ ছিল উচ্চস্বরে বিভিন্ন খবর এবং সাহিত্যকর্ম পড়ে যাওয়া।

১৪. র‌্যাট ক্যাচার : এখন তো ইঁদুর মারার জন্য কত রকমের ওষুধের কথাই শোনা যায় রাস্তার বের হলে। কিন্তু এককালে যখন এসব ওষুধ ছিল না, তখন এসব র‌্যাট ক্যাচাররাই ইঁদুর ধরার দায়িত্বটি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতেন।

Related Posts

Leave a Reply