চিনির চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি, তবু ডায়াবেটিকদের জন্য মহৌষধ
[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
চিনির চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি, কিন্তু ক্যালরিমুক্ত। ভেষজ ঔষধি হিসেবে ডায়াবেটিক রোগী ও সুস্থ মানুষ নির্ভয়ে খেতে পারবে। এই বিস্ময়কর ভেষজ উদ্ভিদ হলো স্টেভিয়া। মিষ্টি পাতা, মধুপাতা, মিষ্টি হার্ব প্রভৃতি নামে পরিচিত এই উদ্ভিদ।
স্টেভিয়া ট্রপিক্যাল বা সাবট্রপিক্যাল ও কষ্টসহিষ্ণু বহু বর্ষজীবী গুল্মজাতীয় গাঢ় সবুজ ঔষধি গাছ। ফুল সাদা, নলাকৃতি ও উভয়লিঙ্গ। গাছ সুগন্ধ ছড়ায় না, কিন্তু পাতা মিষ্টি। পৃথিবীতে ২৪০টির মতো প্রজাতি ও ৯০টির মতো জাত আছে। উদ্ভিদটির উৎপত্তিস্থল প্যারাগুয়ে। বর্তমানে সেখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রাজিল, উরুগুয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, থাইল্যান্ড, চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও এর বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ রয়েছে। বাংলাদেশে বিএসআরআইয়ের বিজ্ঞানীরা উদ্ভিদটি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন ২০০১ সালে। গবেষণায় সফল হওয়ার পর এখন তাঁরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে স্টেভিয়া চাষের লক্ষ্যে কৃষকদের মধ্যে প্রচার, তাদের উদ্বুদ্ধকরণ, বীজ, চারা সরবরাহকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
এখনো বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ শুরু না হলেও অলাভজনক হিসেবেই শৌখিন মানুষ, উত্সুক কৃষকরা দু-একটি করে গাছ বাড়ির টবে, ছাদে ও বাগানে চাষ করতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে বেশ সাড়াও পড়েছে।
এখানকার এক গবেষক জানান, স্টেভিয়া স্বল্প দিনের ঔষধি উদ্ভিদ হলেও দীর্ঘকাল বেঁচে থাকে। স্বল্পদীর্ঘ দিবস উদ্ভিদ। স্টেভিয়া সহজে চাষ করা যায়। এমনকি মাটির টবেও হয় এই গাছ।
চিনির বিকল্প হিসেবে ক্যালরিমুক্ত স্টেভিয়ার পাতা ব্যবহার করা যায়। স্টেভিয়ার পাতা চিনি অপেক্ষা ৩০-৪০ গুণ এবং পাতার স্টেভিয়াসাইড চিনি অপেক্ষা ৩০০ গুণ বেশি মিষ্টি। ক্যালরিমুক্ত হওয়ায় স্টেভিয়া ডায়াবেটিক রোগী খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরিবর্তন হয় না। অগ্ন্যাশয়কে (প্যানক্রিয়াস) ইনসুলিন উৎপাদনে উদ্দীপ্ত করে বলে রক্তের গ্লুকোজও নিয়ন্ত্রণে থাকে। রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণ করে এ উদ্ভিদ। এ ছাড়া ব্যাকটেরিয়া সাইডাল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। দাঁতের ক্ষয়রোগ রোধ করে। ত্বকের কোমলতা ও লাবণ্য বাড়ায়। স্বাদ বৃদ্ধিকারক হিসেবেও কাজ করে। স্টেভিয়া চা, কফি, মিষ্টি, দই, বেকড ফুড, আইসক্রিম, কোমল পানীয় ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর ভেষজ উপাদান মানুষের দেহে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না।
এই বিজ্ঞানী বলছেন, এটি একবার লাগালে তিন থেকে চার বছর নতুন করে চারা লাগানোর প্রয়োজন পড়ে না। সেখান থেকেই নতুন চারা গজায়। স্বল্প শ্রম ও কম খরচে স্টেভিয়া উৎপাদন হয়। ড. কুয়াশা মাহমুদ বলেন, স্টেভিয়ার চারা লাগানোর আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে পাতা সংগ্রহ করা যায়। সেই পাতা রৌদ্রে শুকিয়ে চিনির পরিবর্তে চা, কফি, মিষ্টিসহ বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় খাবারে ব্যবহার করা যায়। তিনি বলেন, ‘দিন দিন স্টেভিয়ার চাহিদা বিশ্ববাজারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশে স্টেভিয়ার চাষ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হলে দ্রুত বাজার পাবে।’
এই বিজ্ঞানী মনে করেন, মানুষের মধ্যে স্টেভিয়ার উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে এ দেশের চাষিরা আর্থিকভাবে বহুগুণ লাভবান হবে।