May 16, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

আছে আবার নেই, এমনই রহস্যে ঘেরা আলেকজান্ডারের সমাধি

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
লেকজান্ডার দা গ্রেট। ম্যাসিডনের তৃতীয় আলেকজান্ডার খ্রিস্টপূর্ব ৩৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। রাজা হিসেবে মাত্র ২০ বছর বয়সে পিতা দ্বিতীয় ফিলিপের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। তার শাসনামলের বেশিরভাগ সময় তিনি উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়া জুড়ে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই তিনি মিসর থেকে শুরু করে উত্তর পশ্চিম ভারত পর্যন্ত ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
কথিত আছে, পৃথিবীর শেষপ্রান্তে পৌছানোর ইচ্ছে নিয়ে ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারত অভিযান শুরু করেন। কিন্তু তার সেনাবাহিনীর দাবির কারণে ফিরে যেতে বাধ্য হন।

খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বের জুন মাসে ইহলোক ত্যাগ করেন এই বীর। আলেকজান্ডারের দৃঢ বিশ্বাস ছিল, তিনি ইজিপ্সীয় পূরাণের দেবতা আমনের সন্তান। এমন বিশ্বাসের কারণে মৃত্যুর আগে তিনি চেয়েছিলেন, তাঁর মরদেহ যেন ইউফ্রেটিস নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। কেননা তিনি মনে করতেন, নদীতে ভাসিয়ে দিলে তার দেহ সরাসরি চলে যাবে স্বর্গে। কিন্তু তার সহযোগী ও অনুরাগী প্রজারা তা পারেননি। তাই তারা আলেকজান্ডারের মরদেহের জন্য অতি যত্নে প্রায় দু’বছর ধরে তৈরি করেছিলেন সুদৃশ্য মানবাকৃতি শবাধার। এই দু’বছর নাকি তার মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হয়।

বিখ্যাত ইতিহাসবিদ প্লুতার্ক এর বর্ণনায় পাওয়া যায়, মৃত্যুর পর ছ’দিন ধরে আলেকজান্ডারের দেহটি একটি সাধারণ কফিনে ফেলে রাখা হয়েছিল। কেননা, রাজার মৃত্যুর পর সবাই ব্যস্ত ছিল শোকে আর পরবর্তী সরকারগঠনের রাজনীতি নিয়ে। হঠাৎ সবার খেয়াল হল যে, আসল কাজটিই তারা করেননি। যে তাঁবুর ভিতরে সাধারণ কফিনটি রাখা হয়েছিল সবাই ছুটে গেলেন সেখানে। সাধারনত এতদিনে মরদেহ পচে যাওয়ারই কথা। তবেসেখানে গিয়ে সবাই নাকি হতবাক হয়ে যান। কফিন খুলে দেখা গেল, মৃতদেহটির কোনও ক্ষতি তো হয়ইনি বরং সেটি বেশ অক্ষতই রয়েছে।

আলেকজান্ডারের মৃত্যু নিয়েও রয়েছে রহস্য। কেউ বলেন, অতিরিক্ত মদ্যপানের জন্যই মারা যান তিনি। আবার কারও মতে, টাইফয়েডে তাঁর মৃত্যু হয়। কথিত আছে, আলেকজান্ডার ব্যাবিলনে মারা গিয়েছিলেন। মৃত্যুর পর উপযুক্ত সোনা দিয়ে তৈরি শাবাধার বানিয়ে তা রাজকীয় গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলম্যাসিডোনিয়ায়। কথিত আছে আরিস্তানদের নামে এক জ্যোতিষী নাকি সেই সময় ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন, আলেকজান্ডারের দেহ যে জায়গায় বিশ্রাম নেবে, সে দেশ থাকবে অপরাজেয় এবং চিরশান্তিতে। এই কারণে কিনা, শবাধারটি নেয়ার পথে টলেমি নামের তারই সেনাবাহিনীর এক সদস্য তা নিয়ে চলে যান মিসরে।সেখানে মেমফিস এ রাখা হয় তাঁর দেহ।

এই ঘটনার কয়েক বছর পর খ্রিস্টপূর্ব ৩০৫ সালে নাকি এই সেনাই নিজেকে মিসরের রাজা ঘোষণা করেন। সিংহাসনে বসেন রাজা প্রথম টলেমি।অবশ্য তার পুত্র রাজা দ্বিতীয় টলেমি ফিলাডেলফাস-এর সময় পুরো সমাধি সৌধটি সরিয়ে নেয়া হয় মিসরের আরেক শহর আলেজান্দ্রিয়ায়। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে আবার স্থানান্তরিত হল, আলেকজান্ডারের মরদেহ। সেসময় শাসনকর্তা টলেমি ফিলোপেটর একটি বড় সমাধিস্থান তৈরি করেন। যেখানে তিনি তাঁর পূর্ব পুরুষদের সঙ্গেই আলেকজান্ডারকে রাখলেন। অর্থাৎ টলেমি রাজত্বকালেই তিন জায়গার স্থানান্তরিত হয় তাঁর মরদেহ।

অনেকের মতে, দীর্ঘদিন আলেকজান্দ্রিয়াতেই ছিল এই গ্রিক বীরের মরদেহ। রোমান সম্রাট অগাস্টাস নাকি দেখেছিলেন আলেকজান্ডারের মরদেহ। তাঁর নাকি জীবনীতে উল্লেখ আছে, এসময় তিনি সমাধির উপরে ফুল ছড়িয়ে দেন। মমির মাথায় পরিয়ে দেন মুকুট।এমনকি পরবর্তীতে জুলিয়াস সিজারের সময়ও নাকি সমাধিটি সেখানেই ছিল। আলেকজান্ডারের সমাধি দর্শনের কাহিনী নাকি জুলিয়াসের জীবনীতেও আছে।

এই মহান বীরের মরদেহ যদি সেখানেই চিরকালের জন্য থাকতো তাহলে কথা ছিল না। বাস্তবতা হল, সেখানে নেই মহান এই বীরের সমাধি। কোথায় আছে তা কেউ জানে না। ইতিহাসবিদ প্লুতার্ক কিংবা অগাস্টাস অথবা জুলিয়াস সিজারের বর্ণনায় সমাধির উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে এর অস্তিত্ব মেলেনি। তবে চেষ্টার ত্রুটি হয়নি। আধুনিকতম যন্ত্রের মাধ্যমে গবেষকেরা সমাধির খোঁজ করেছেন।চালিয়েছেন প্রায় দেড়শোটি খননকার্য। কিন্তু উত্তর অজানাই থেকে গেছে।

অবশ্য ১৮৮৭ সালে লেবানন থেকে একটি শিল্পকীর্তি আবিস্কার হয়। সেটি একটি শবাধার,যা বর্তমানে রাখা আছে ইস্তানবুল জাদুঘরে। সেটির নামফলকে লেখা ‘আলেকজান্ডার সার্কোফেগাস’। অর্থাৎ আলেকজান্ডারের শবাধার। সেই হিসেবে আলেকজান্ডারের শবাধার মিলেছে বলে স্থাপত্যবিদেরা দাবি করলেও ইতিহাসবিদদেরা একমত নন। তাদের মতে এটি সম্ভবত সিডন এর রাজা ‘আবদালোনিমাস’এর।সম্ভবত শবাধারটির গায়ে আলেকজান্ডার ও তাঁর সেনাবাহিনীর ছবি খোদাই থাকায় এটি জাদুঘরে ঠাঁই পেয়েছে।যাকে সবাই চেনে আলেকজান্ডারের সমাধি হিসেবে।

তাহলে কোথায় আলেকজান্ডারের প্রকৃত সমাধি? ইতিহাসবিদদের ধারণা, গ্রিক বীরের শেষ সমাধিটি সম্ভবত ২৭০ খ্রিস্টাব্দে ভেঙে ফেলে দুষ্কৃতিকারীরা। অবশ্য এর পরেও অনেকেই আলেকজান্ডারের সমাধি দেখার দাবি করেছেন। এদের মধ্যে আছেন ইতিহাসবিদ ও পর্যটক ইবন আবদেল হাকাম, আল মাসুদি, লিও দি আফ্রিকানসহ অনেকেই। কিন্তু এরা শুধু দেখার কথাই বলেছিলেন। কোথায় দেখেছিলেন তার স্পষ্ট উল্লেখ নেই। আর এভাবেই এখনও রহস্য হয়ে রয়েছে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সমাধি।

Related Posts

Leave a Reply