May 9, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular ব্যবসা ও প্রযুক্তি

অবাক হবেন বিশ্বের প্রথম ব্যাংক শুরুর গল্প শুনে !

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

ব্যাংক হল এক ধরণের আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা সাধারণ মানুষের সঞ্চয় সংগ্রহ করে পুঁজি গড়ে তোলে এবং সেই পুঁজি উদ্যোক্তাদের ধার দিয়ে বিনিয়োগে সাহায্য করে। ব্যাংক মূলত ব্যক্তি কর্তৃক প্রদেয় সঞ্চিত অর্থ জমা রাখে এবং ঐ অর্থ ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানে ঋণগ্রহণ করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।

কিন্তু এই ব্যাংকের প্রচলন কীভাবে শুরু হল? কোনটিই বা বিশ্বের প্রথম ব্যাংক? চলুন জেনে নিই বিশ্বের প্রথম ব্যাংক শুরুর ইতিহাস-

ছবির মতো সুন্দর ভূপ্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর দৃষ্টিনন্দন সব ঐতিহাসিক স্থাপনা মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে মধ্য ইতালির তুসকান অঞ্চলে। এই অঞ্চলটি ঘিরে রয়েছে মধ্যযুগের দেয়াল, সবুজ উঁচু-নিচু পাহাড় আর পাহাড়ের গায়ে রয়েছে নানা রঙের তুলির ছোঁয়া।

ছবির মতো সুন্দর এই শহরেই তৈরি হয়েছিল বিশ্বের প্রথম ব্যাংক। ‘তুসকান হলিডে’ বলে পরিচিত এ শহরের নাম বললে কোনও ব্যাংকের ছবি ভেসে উঠে না আসলেও এই শহরেই ৫৪৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ব্যাংক ‘মনতে ডেই পাসকি ডে সেইনা (এমপিএস)’।

ইতিহাসের পাতার অনেকখানি দেখা হয়েছে এই ব্যাংকটির। উল্লিখিত হিসেবে বলা যায়, কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কারেরও দু’দশক আগেও ব্যাংকটি তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এমনকি সপ্তম হ্যানরি যখন ‘বসওরর্থের যুদ্ধে’ তৃতীয় রিচার্ডকে পরাজিত করে ইল্যান্ডের সিংহাসনে বসেন তারও এক যুগ পরে এ ব্যাংকটির কার্যক্রম পুরোদমে চলছিলো। অতীতের সেই স্বর্ণালী সময় এখন অনেকটা কমে গেলেও ঐতিহ্যের গৌরব নিয়ে এখনও টিকে আছে বিশ্বের এই প্রাচীন ব্যাংকটি।

সেইনাতে অবস্থিত মনতে ডেই পাসকি ডে সেইনা ব্যাংকের সদর দপ্তর

ব্যাংক শুরু হওয়ার পূর্বের কথা : তুসকান অঞ্চলের ‘সেইনা’ বর্তমানে একটি শহর হলেও সেযুগে এটি স্বতন্ত্র একটি রাজ্য ছিল। একসময় তুসকান সেইনাকে নিজেদের অধীনে নিয়ে আসে। সেসময় জরুরি প্রয়োজনে টাকার দরকার হলে মূল্যবান জিনিসপত্র বন্ধক রেখে ধার নেওয়ার ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। বন্ধক রাখা জিনিসগুলোর বিনিময়ে ধারের কার্যক্রমগুলো পরিচালিত হতো ব্যক্তিগত পর্যায়ে।

১৪৭২ সালের ৪ মার্চ ‘রিপাবলিক অব সেইনা’র ম্যাজিস্ট্রেট ধার দেয়া নেয়ার এ ব্যবসাকে একটি কাঠামোর আকার দেওয়ার উদ্দেশ্যে বন্ধক রেখে টাকা ধার দেওয়ার প্রতিষ্ঠান ‘মনতে ডেই পিয়েতা’ প্রতিষ্ঠা করেন। সেই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিই  আজকের ‘মনতে ডেই পাসকি ডে সেইনা (এমপিএস)’ যা কিনা বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ব্যাংক। এত বছর পরও ব্যাংকটি এখনো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটির কার্যক্রম বিস্তৃত রয়েছে সমগ্র বিশ্ব জুড়েই। বর্তমানে ব্যাংকটির আছে ৩১,০০০ কর্মচারী আর বিশ্বব্যাপী ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন গ্রাহক।

বলা হয় সেইনা শহরে বসবাস করা ৬০ হাজার মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত। একভাগে আছেন যারা ব্যাংকটিতে বর্তমানে কর্মরত আছেন আর অপর ভাগে আছেন যারা ব্যাংকে কর্মজীবন শেষ করে এখন পেনশন পাচ্ছেন!

ব্যাংকটি আজকের কাঠামো লাভ করে ১৬২৪ সালে। সেসময় তুসকানের গ্রান্ড ডাচি ও গ্রান্ড ডিউক দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড ঘোষণা করেন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পশু চড়ানোর (পেসচিউর) এলাকা থেকে যা আয় হবে তা ব্যাংকে অর্থ জমাকারীদের আয় বলে গণ্য হবে। এই ঘোষণার পর ধীরে ধীরে ব্যাংকটি স্থানীয় জনগনের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ ও ১৮ শতকে ব্যাংকের কার্যক্রম আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি করা হয়।

১৮৭১ সালে ইতালি উপদ্বীপের স্বতন্ত্র সকল রাজ্য মিলে ঐক্যবদ্ধ ইতালি গঠন করে আর রোমকে করা হয় রাজধানী ঘোষণা করে গঠন করা হয় ‘কিংডম অব ইতালি’। এরপরেই এমপিএস ব্যাংক পুরো ইতালি জুড়ে তাদের ব্যবসা বিস্তৃত করে। সাথে যুক্ত করে নতুন নানা ধরণের সেবা।

যেমন ব্যবসা বিস্তৃত করণের সময় এমপিএস ব্যাংক ইতালিতে প্রথমবারের মত বন্ধকী লোন চালু করে। এরই কিছুদিন পর তারা তুসকানভিত্তিক সঞ্চয়ী ব্যাংক ‘কাসা দি রিসপারমিও দি প্রাতো’র অধিকাংশ শেয়ার কিনে নেয়। ১৯৯৫ সালে ইতালি সরকারের মিনিস্ট্রি অব ট্রেজারের জারি করা আদেশে এমপিএস ব্যাংক আলাদা দুটি ইনস্টিটিউট গঠন করে। যাদের একটি হচ্ছে ‘ফনডাজিওন মনতে দিও পাসকি ডে সেইনা’। ১৯৯৯ সালে ব্যাংকটি ইতালিয়ান স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়।

বিস্তৃতি : স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির ব্যাংকটি বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ব্যাংক অধিগ্রহণ করে। ২০০২-০৬ সাল নাগাদ ব্যাংকটি প্রাইভেট ব্যাংকিং ও প্রাইভেট পেনশন প্লানস কার্যক্রম গ্রহন করে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে তারা সমগ্র ইতালি জুড়ে ২ হাজারেরও বেশি শাখা চালু করে।

গভীর সংকটে এমপিএস : পাঁচ শতাব্দী টিকে থাকা বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ব্যাংকটি বর্তমানে খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ব্যাংকটি আবার লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে। আর এর জন্য ব্যাংকটির মন্দ ঋণের ক্রমবৃদ্ধিকে দায়ী করা হচ্ছে।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুনে ব্যাংকটি শেয়ারবাজার থেকে ৫ বিলিয়ন ইউরো সংগ্রহ করে, যা রাষ্ট্রের দেনা পরিশোধে এবং নিজেদের আর্থিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয়।

অনেক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গেলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে থেমে থেমে চলতে থাকা ‘মনতে ডেই পাসকি ডে সেইনা (এমপিএস)’ ব্যাংকটির গ্রাহকরা ৫০০ বছর বয়সী এ প্রতিষ্ঠানকে এখনো স্নেহের চোখেই দেখেন।

Related Posts

Leave a Reply