April 26, 2024     Select Language
৭কাহন Audio News Editor Choice Bengali ধর্ম

বৌদ্ধ দর্শনের তাত্ত্বিক আলোচনা (পর্ব ৪) -কলমে রজত পাল 

[kodex_post_like_buttons]
রজত পাল:
শুরু হয়েছে বৌদ্ধ দর্শনের ওপর বিশেষ তাত্বিক আলোচনা। আপাতত শুধু শনি এবং রবিবার প্রকাশ হচ্ছে এই লেখা।আজ আপনাদের জন্য রইলো চতুর্থ পর্ব।
 
বৌদ্ধ দর্শন ৪
রজত পাল: আমরা আগেরদিন দেখেছিলাম মানুষের দুই সত্তা, ব্যবহারিক ও পারমার্থিক। ব্যবহারিক সত্তার ক্রমশঃ বিনাশের মাধ্যমে পারমার্থিক সত্তার বিকাশ হয়। আমরা আলোচনা করেছিলাম যে দিনের আলোয় অপ্রকাশিত থাকলেও দিবাবসানের সাথে সাথে চন্দ্র-নক্ষত্রাদির প্রকাশ ঘটে।
একজন বন্ধু এক বিশেষ কথা জানিয়েছেন যা আলোচনা যোগ্য । ব্যবহারিক সত্তা থাকাকালীন পারমার্থিক সত্তার ঝলক দেখা যেতে পারে । তিনি অত্যন্ত কার্যকরী উদাহরণ দিয়েছেন । বলেছেন সূর্যগ্রহণ হলে দিবাভাগেই চন্দ্র – নক্ষত্রের দর্শন পাওয়া যায় ।
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াতে বলা হয়েছিল এভাবে সূর্যগ্রহণ তথা পারমার্থিক সত্তার প্রকাশ হওয়াটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, দৈব ঘটনা, ব্যক্তির জীবনের স্বাভাবিক বিকাশ নয় । আর্ত বা মুমুক্ষু মানুষ কোনোভাবেই এক্ষেত্রে ব্যবহারিক থেকে পারমার্থিক সত্তার বিবর্তনকে প্রভাবিত করতে পারে না । ঋষি মহাপুরুষেরা যোগাদি নানা অভ্যাসের প্রক্রিয়ার দ্বারা এই বিবর্তনকে যেভাবে ত্বরান্বিত করতে পারেন সূর্যগ্রহণ রূপক পারমার্থিক ঝলকানিতে এটি সম্ভব নয় ।
পাশাপাশি এও বোধ হয়েছিল যে সূর্যগ্রহণ রূপক পারমার্থিক সত্তার বিকাশ ক্ষণস্থায়ী এবং নিকটাত্মীয় বিয়োগে ‘শ্মশান বৈরাগ্য ‘ জাতীয় সাময়িক প্রভাব পার করে ব্যবহারিক সত্তা পূর্ববৎ চলতে থাকে ।
পরে অনুধাবন করা গেল যে দিনান্তে নক্ষত্রদর্শন একটি স্বাভাবিক বিবর্তন প্রক্রিয়া এবং সূর্যগ্রহণকালে প্রাপ্ত দর্শন বিচ্ছিন্ন ঘটনা, এমনটি ভাবা অনুচিত। আমার বন্ধু প্রকৃত সত্য কথা বলেছেন। দিবারাত্রির চক্রের মতো গ্রহণও এক বিশেষ প্রাকৃতিক চক্র, বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ব্যবহারিক সত্তা যে কোনওভাবে সংকুচিত (সাময়িক বা স্থায়ী) হলে পারমার্থিক সত্তা প্রকাশিত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে প্রকৃতি মানুষকে পারমার্থিক সত্তার অস্তিত্ব জানান দিয়ে যায়।
পারমার্থিক সত্তার প্রকাশ হলে আভ্যন্তরীন বিকাশ ঘটে এবং চরম সত্যের অনুভব হয়। বস্তূজগতের বাইরে এক বিশ্ববিস্তারিত চেতন জগতের সাথে সংযোগ ঘটে। বাহ্যিকভাবে সেই ব্যক্তিমানুষের বাক্য, দৃষ্টি, আচরণে এক এমন চৌম্বক শক্তির বিকাশ ঘটে যে সাধারন মানুষ তাতে আকৃষ্ট ও প্রভাবিত হয়। তখন সাধারন বাক্যও বেদবাক্য বলে মনে হয়। বুদ্ধের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। এই আকৃষ্ট মানুষদের বুদ্ধ চাইলেন স্বনির্ভরভাবে সত্যের পথে নিয়ে যেতে। এবার উনি বললেন অষ্টাঙ্গ মার্গের কথা। যা অনুসরণ করবে লক্ষ লক্ষ মানুষ শতশত বছর ধরে। উনি ব্যবহারিক সত্তা থেকে পারমার্থিক সত্তায় উত্তরণের পথ দেখালেন।
দ্বিতীয় জনসভায় বুদ্ধ বললেন, দুই অন্ত পরিবর্জনীয় । প্রথম হল অনর্থ সংযুক্ত কাম্য বস্তুর উপভোগ এবং দ্বিতীয়টি হল অনর্থ সংযুক্ত দেহ নির্যাতন । অর্থাৎ দেহ কেন্দ্রিক ভোগ ও দেহ নির্যাতন দুইই বর্জনীয়। তিনি মধ্যম পন্থার কথা বললেন । ‘মজঝম পন্থা ‘ । তিনি মধ্যম পন্থার আটটি পথের কথা বললেন ।
1। সম্যক দৃষ্টি
2। সম্যক সংকল্প
3। সম্যক বাক
4। সম্যক কর্মান্ত
5। সম্যক আজীব
6। সম্যক ব্যায়াম
7। সম্যক স্মৃতি
8। সম্যক সমাধি
এসব নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা হবে পরদিন ।
ক্রমশ….

Related Posts

Leave a Reply