May 3, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular সফর

এ দেশে গেলে আপ্যায়নে খেতেই হবে ‘মৃতদের উৎসর্গী খাবার’  বোরসোক

[kodex_post_like_buttons]

 

পাহাড় আর সবুজ প্রকৃতির দেশ কিরগিজস্তান। চারণভূমির ঐশ্বর্য থাকায় পশুপালন এ দেশের মানুষের অন্যতম জীবিকা। আর তাই ভেড়া, গরু এবং ঘোড়ার মাংসের চাহিদা রয়েছে কিরগিজ রান্না ঘরে । তবে কিরগিজদের কাছে একটি খাবারের আবেদন একেবারেই আলাদা। ‘বোরসোক’—এই পিঠা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কিরগিজ ঐতিহ্যের অংশ। অনেকের কাছেই ‘পবিত্র’ পিঠা। ঘরে কোনো অতিথি এলে পাতে ‘বোরসোক’ থাকবেই। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, কিরগিজদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ ‘বোরসোক’ শুধু জীবিতদেরই নয়, মৃতদেরও খাবার!

চার কোনার এই পিঠা দেখতে বেশ ছোট আর মচমচে। ভেতরে বাতাস থাকায় ফাঁপা। অনেকটাই আমাদের দেশে তেলেভাজা কিংবা পুরির মতো। ঝাল কিংবা মিষ্টি নয়, বেশ আলাদা একটা স্বাদ। জ্যাম-জেলি, মাখন কিংবা মধু দিয়ে ‘বোরসোক’ খাওয়ার চল রয়েছে। আবার অনেকে হয়তো জমিয়ে খেতে বসবেন। তার আগে ‘বোরসোক’-এ দুটি কামড় দিয়ে নেন। এতে খিদে বাড়ে। এ পিঠার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বানানো অনেক সোজা। ‘বোরসোক’ তাই কিরগিজ যাযাবর জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবনের অংশ। মৃত আত্মীয়স্বজন আর বন্ধু-বান্ধবদের স্মরণ করেও এটা বানানো হয় কিরগিজ রান্না ঘরে।

Image result for borsok kyrgyzstan

ধরে নেওয়া যাক, কোনো কিরগিজ স্বজন হারালেন। এরপর এক বছর পর্যন্ত প্রত্যেক বৃহস্পতিবার নিয়ম করে এ রুটি বানানো হবে। আমাদের যেমন শ্রাদ্ধ, তেমনি  আয়োজনেরই মতো কিরগিজস্তানে কারও মৃত্যুর ৪০তম দিন আর এক বছর পূর্তিতে ‘বোরসোক’ থাকবেই। কিরগিজদের ধর্মীয় এই আচারটির নাম ‘জিত চাইগারু’—যা শুধু মৃতদের স্মরণে আয়োজন করা হয়। সেটারও আবার বিশেষ নিয়ম আছে।
‘জিত চাইগারু’ শব্দ বন্ধনীর অর্থ হলো ‘গন্ধের নিঃসরণ’। টেবিলে রাখা মচমচে ‘বোরসোক’ থেকে নিঃসৃত তেলের গন্ধ প্রার্থনার সঙ্গে মৃতের কাছে পৌঁছায় বলে বিশ্বাস করে কিরগিজরা। এ পিঠা তেলে ভাজার অন্যতম কারণও তাই। কারণ, তেলে ভাজা হলেই গন্ধটা ছড়ায় বেশি।

ময়দার মণ্ড প্রস্তুত করে কিরগিজরা দুই ধরনের রুটি বানায়—‘বোরসোক’ ও ‘মাই টোকোচ’। বোরসোকের মতোই তেলেভাজা কিন্তু আয়তনে বড় রুটিকে বলা হয় ‘মাই টোকোচ’। এ দুই ধরনের রুটির সঙ্গে নানা রকম মিষ্টান্ন আর পিঠা বানিয়ে কিরগিজরা একটি টেবিলে সাজিয়ে রাখে। এরপর একজন বিবাহিত পুরুষ কিংবা নারী সেখানে বসে পবিত্র কোরআন শরিফের আয়াত পাঠ করেন। অবিবাহিত হলে চলবে না। বিধবাদের ক্ষেত্রে আয়াত পাঠের আনুষ্ঠানিকতাটুকু সেরে দেবে কোনো তরুণ প্রতিবেশী।
শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নয়, বিয়ে কিংবা নানা রকম উৎসবেও ‘বোরসোক’ থাকতেই হবে—‘বোরসোক না ভাজলে সেটা আবার কিসের উৎসব?’

Related Posts

Leave a Reply