May 8, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular ব্যবসা ও প্রযুক্তি রোজনামচা

১২০ বছর আগের বীরাঙ্গনা, ইশারায় নাচতো বাঘ, প্রাণ নেয় সেই বাঘই

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস 

সার্কাস’ শব্দটির সঙ্গে ভারতীয়রা প্রাচীনকাল থেকে পরিচিত। কিন্তু তখন সার্কাসের খেলা যাঁরা দেখাতেন তাঁরা বেদুইন হিসেবেই গণ্য হতেন। বাঙালির প্রথম সার্কাস শুরু হয় নবগোপাল মিত্রের হাতে। সেখানে একটি ঘোড়া ও দুই একজন সদস্য নিয়ে কিছু জিমন্যাস্টিকের খেলাই দেখানো হতো।

নবগোপাল মিত্রের জামাই রাজেন্দ্রলাল সিংহ ১৮৮৩ সালে কিছু বিদেশি খেলোয়াড়ের সাহায্যে শুরু করেন ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস’। তা ছিল মূলত বিদেশি জিমন্যাস্টদের খেলা।

সে অর্থে প্রকৃত সার্কাস বলতে যা বোঝায় তার সূচনা ‘বোসের গ্রেট বেঙ্গল’ সার্কাসের হাত ধরে। এই সার্কাস কম্পানির মালিক ছিলেন ছোট জাগুলিয়ার মতিলাল বসু। তাঁর স্ত্রী রাজবালার হাত ধরেই প্রথম বাঙালি নারীর সার্কাসের জগতে পদার্পণ। রাজবালা ছিলেন মূলত ট্রাপিজ শিল্পী। ট্রাপিজ ও ব্যালেন্সের খেলা দেখেই তিনি সুনাম অর্জন করেছিলেন। কিন্তু কন্যা জন্মের পর খেলা থেকে তিনি সরে যান। তার কিছুদিনের মধ্যেই মতিলালেরও মৃত্যু ঘটে কঠিন অস্ত্রপচারের ফলে। এর পর গ্রেট বেঙ্গল সার্কাসের মালিক হন প্রিয়নাথ বসু। তিনি ১৯০৯ সালে গ্রেট বেঙ্গল ভেঙে দিয়ে গড়ে তোলেন ‘প্রফেসর বোসেস গ্র্যান্ড সার্কাস’।

ইতিপূর্বে দাদার সঙ্গে দল নিয়ে ঘোরার সময় তাঁদের সার্কাসের খেলা দেখে খুশি হয়ে ১৮৯৬ সালে রেওয়া-এর মহারাজা তাঁদের উপহার দেন একজোড়া বাঘ। তাদের নাম দেওয়া হয় লক্ষ্মী ও নারায়ণ। সার্কাসের অন্যতম খেলোয়াড় ছিলেন বাদলচাঁদ। বাঘেরা ছিল তাঁর নিতান্ত পোষ মানা। খাঁচার ভেতর ঢুকে রীতিমতো ‘বাঘের সাথে কুস্তি’ জুড়ে দিতেন তিনি। এমনকি বাঘের মুখে ঢুকিয়ে দিতেন নিজের মাথাও !

কিন্তু এই সার্কাসে বদলচাঁদের থেকেও বেশি জনপ্রিয় ও অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন ‘সুশীলা সুন্দরী’। সার্কাসের দলে বাঘের সঙ্গে খেলা দেখানো প্রথম ভারতীয় নারী।

সুশীলা সুন্দরীর জন্ম ১৮৭৯ সালে এক বাঙালি হিন্দু পরিবারে। সেকালের বাবু কলকাতার লালবাতি এলাকার রাম বাগানে। শোনা যায় অভাগী পতিতার দুই মেয়ে পেটের দায়ে এসেছিলেন সার্কাসে। অতঃপর তাঁর নাম বিখ্যাত হয়ে ওঠে গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস -এর সুশীলা সুন্দরী হিসেবে। এটা তাঁর আসল নাম ছিল কিনা সেটা নিয়েও সংশয় আছে। তাঁর পরিবার সম্পর্কে আর কিছুই জানা যায় না।

তবে জানা যায়, ছোটোবেলা থেকেই সুশীলার নানান রকম ব্যায়ামের দিকে প্রবল আগ্রহ ছিল। কলকাতার সিমলা অঞ্চলে প্রফেসর প্রিয়নাথ বোস ব্যায়ামের আখড়া খুললে সুশীলা ও তাঁর বোন কুমুদিনী সেখানে যোগ দেন এবং সার্কাসে যুক্ত হয়ে পড়েন। এবং খুব দ্রুতই অন্যান্য খেলার সঙ্গে বাঘের খেলা দেখাতে শুরু করেন।

এর আগে সার্কাসে বাঘের খেলা দেখানো হলেও সেই বাঘগুলোকে চেন দিয়ে বেঁধে তবে খেলা দেখানো হতো। গ্র্যান্ড সার্কাসে বাদল চাঁদের পর যিনি এই খেলা দেখাতেন তিনি আর কেউ নন, এই বাঙালি মেয়ে সুশীলা। তাঁর খেলা দেখাবার সময় বাঘেরা থাকত মুক্ত। খাঁচার ভেতর ঢুকে সুশীলা বাঘকে আদর করতেন, চুমু খেতেন। তাঁদের নিজের কথামতো দাঁড় করাতেন, বসাতেন, গর্জন করাতেন। এমনকি তিনি তাদের সঙ্গে বাহুযুদ্ধও করতেন, তাদের বিস্তৃত চোয়াল জনসমক্ষে দেখাতেন। এর পর এসব খেলা দেখানোর পর তিনি তাদের ওপর হেলান দিয়ে দাঁড়াতেন ছবি তোলার জন্য। টানা আধঘণ্টার খেলার শেষে ছবি তোলা হলে উদ্ভাসিত দর্শকদের করতালির মধ্যে তিনি এসে দাঁড়াতেন স্টেজে।

বাঘের সঙ্গে খেলার জন্য সর্বাধিক আলোচিত হলেও তিনি আর একটি খেলা দেখতেন, সেটিও ছিল অতি বিখ্যাত -জীবন্ত সমাধি। সার্কাসের রিংয়ের এক কোণে সুশীলাকে গর্ত করে পুঁতে দেওয়ার পর সেই কবরের ওপর বেশ কিছু দর্শক ঝাঁপাঝাঁপি লাফালাফি করে দেখতেন, ঠিকমতো কবর দেওয়া হয়েছে কি-না। তার পর সেখানে ঘোড়ার খেলা দেখানো হতো। সেই শো শেষ হলে সুশীলা গর্তের মধ্যে থেকে হাসতে হাসতে স্টেজের ওপর উঠে আসতেন।

জানা যায় একবার সার্কাসে শো চলাকালীন সুশীলাকে কবর দেবার পর হঠাৎ ঝড় ও মুষলধারে বৃষ্টি নামে। সার্কাসের শো বন্ধ করে দিতে হয়। বাড়ি ফিরে প্রফেসর বোসের মনে পড়ে সুশীলাকে কবর থেকে তোলা হয়নি। তিনি দ্রুত ফিরে যান মাঠে। দেখেন সেই কবর থেকে সুশীলা গায়ের জোরে উঠে এসেছেন মাটি ফুঁড়ে।

খ্যাতির মধ্য গগনেই সুশীলাকে সার্কাস থেকে সরে যেতে হয় এক দুর্ঘটনার জেরে। সুশীলা যে বাঘ দু’টিকে নিয়ে খেলা দেখাতেন তাদের একটি মারা গেলে নতুন এক বাঘ ‘ফরচুন’কে নিয়ে খেলা দেখাতে যান তিনি। এই বাঘটি তখনো পুরোপুরি ট্রেনিং পেয়ে উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি। শোনা যায়, এই বাঘটির উপযুক্ত খাবার না পাওয়ার কারণে সেদিন তাকে আধপেটা করে রাখা হয়েছিল। সব খেলা শেষ করে সুশীলা যখন বাঘের গায়ে হেলান দিয়ে শুয়েছিলেন তখন হঠাৎ বাঘটি থাবা দিয়ে জোরে আঘাত করলে ভীষণভাবে আহত হন তিনি। অতি কষ্টে সুশীলার প্রাণ রক্ষা হলেও ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে আর রিংয়ে ফেরা সম্ভব হয়নি তাঁর।১৯২৪ সালের মে মাসে সুশীলার মৃত্যু হয়।

Related Posts

Leave a Reply