May 5, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

জীবন্ত কবরের ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতা!

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস : 
ঘুমের চেয়ে নিশ্চিন্ত বিশ্রাম আর দ্বিতীয়টি নেই। ঘুমের সময়টুকুই হয়তো পৃথিবীর সকল সমস্যা থেকে সাময়িক বিরতীতে যাওয়া সম্ভব। এই নিশ্চিন্ত ঘুম ভেঙে যদি নিজেকে খুঁজে পান সাড়ে তিন হাত মাটির ভেতর? অথচ দিব্যি বেঁচে আছেন, কিন্তু পৃথিবীর মানুষের কাছে ততক্ষণে আপনার অস্তিত্ব বিলীন!

পৃথিবীতে এই রকম বহু ঘটনা কয়েক বছর আগেও প্রায়শই ঘটেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান তখন আজকের মতো উন্নত নয়। এই রকম অনেক মানুষ বেঁচে নেই ভেবে শেষকৃত্য সম্পন্ন করে দাফন শেষ করার পর মৃত ব্যক্তি কবরে তার চেতনা ফিরে পেয়েছেন। কী ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা! এই সময় বসে আমরা নিশ্চয় এ ধরণের অভিজ্ঞতার কথা কল্পনাও করতেও শিউরে উঠবো, কিন্তু সত্যিই বাস্তবে এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে। কেমন ছিল সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা, জেনে নেওয়া যাক-

আঠারো শতকে আয়ারল্যান্ড এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছিল। সেই দুর্ভিক্ষে মারা গিয়েছিল প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ। বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃতদেহ দাফন করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় যেখানে সেখানে দ্রুত কবর খুঁড়ছিল কবর খননকারীরা। আর এই তাড়াহুড়াতেই তারা বেশ বড় ধরনের কিছু ভুল করে বসে। এই ভুলের শিকার হন টম গ্রুয়েন নামের এক আইরিশ। ভুলক্রমে তিন বছরের জীবন্ত শিশু গ্রুয়েনকে দাফন  করা হয় গণকবরে। সবাই মনে করেছিল গ্রুয়েন মারা গেছে, আর তাই দেরি না করে গণকবরের মধ্যেই গ্রুয়েনকে শুইয়ে দেয় গোরখাদকরা। এমনকি তাড়াহুড়ায় কোদালের আঘাতে টমের দুই পাও ভেঙে ফেলে তারা। এসবের কিছুই টের পাননি গ্রুয়েন, কিন্তু যখন জ্ঞান ফিরে, নিজেকে সে আবিষ্কার করে মাটির নিচে অসংখ্য মৃতদেহের সাথে। কোনোমতে দু হাত দিয়ে কবরের মাটি সরান তিনি, ভাঙা পা নিয়ে নিজেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনেন কবর থেকে। কবর থেকে নিজের প্রাণ ফিরিয়ে আনলেও পা দুটো আর কোনোদিনও ঠিক হয় না তার, বাকিটা জীবন লাঠিতে ভর দিয়েই হেঁটেছেন তিনি।

সাইবেরিয়ার বাসিন্দা নাতালিয়া প্যাস্টারনেকের একটি কুকুর ছিল যাকে নিয়ে প্রায়ই তিনি জঙ্গল ভ্রমণে বের হতেন। এক বিকালে কুকুরটিকে ছাড়া একাই তিনি জঙ্গলে বের হয়েছিলেন, উদ্দেশ্য বার্চ গাছের রস সংগ্রহ করা। সেই বিকালে ঘটে যায় এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। মানুষখেকো এক ভাল্লুক হঠাৎ আক্রমন করে বসে নাতালিয়ার উপর, থেঁতলে দেয় তার সুন্দর দুটি পা। নাতালিয়া তবু দমে যাননি, হাতের কাছে একটি গাছের ডাল পেয়ে ভাল্লুকটিকে পিটাতে থাকে সে, কিন্তু ওইটুকু ডালে কিছুই হয় না ভাল্লুকের। বরং মানুষখেকো ওই ভাল্লুকের কাছে পরাজয় মেনে নিতে হয় নাতালিয়াকে, দ্রুতই জ্ঞান হারান তিনি। কিন্তু কি ভেবে নাতালিয়াকে না খেয়ে মাটি খুঁড়ে সেখানে ফেলে রেখে যায় ভাল্লুকটি। প্রচণ্ডভাবে আহত নাতালিয়া যখন জ্ঞান ফিরে পান, বুঝতে পারছিলেন না কি করা উচিৎ, মাটির নিচে, জঙ্গলের ভেতর চিৎকার চেঁচামেচি করে লাভ হবে না জেনে চুপ করে পড়ে থাকেন তিনি। দু হাত দিয়ে কবরের মাটি কিছুটা সরিয়ে বাতাসের ব্যবস্থা করে নিয়ে রাতটুকু ওইভাবেই কাটিয়ে দেন তিনি। পরদিন জঙ্গলে একদল শিকারি সদ্য খোঁড়া মাটির ঢিবি দেখে উঁকি দেন তাতে। অসংখ্য ময়লা আবর্জনার মধ্যে তারা আবিষ্কার করেন নাতালিয়ার আহত দেহটি। নাতালিয়া কথা বলতে পারে না, শুধু অস্পষ্ট ‘ভাল্লুক’ শব্দটি উচ্চারণ করেন, শিকারিরা টেনে নাতালিয়াকে বের করে আনেন, তাদের মধ্যেই কয়েকজন চলে যায় ভাল্লুকটির খোঁজে। অবাক কাণ্ড হলো, পুরোপুরি জ্ঞান ফেরার পর নাতালিয়া প্রথম প্রশ্নটি করেছিল- ‘ভাল্লুকটি কি বেঁচে আছে?’ ভয়ঙ্কর এই ট্রমা কাটাতে বেশ কয়েক মাস লেগেছিল তার।

আগের দুটো ঘটনার চেয়ে এটা কিছুটা ব্যতিক্রম। মদের দোকানের পরিবেশক মাইক মিনি নামের এক আইরিশ ব্যক্তি কবরে থাকার অভিজ্ঞতা জানতে নিজেই নিজের কবর খুঁড়েন। তিনি সেই কবরের অভিজ্ঞতায় কি অর্জন করেছেন সেটা মাইক নিজেই ভালো বলতে পারবেন, তবে টানা ৬১ দিন মাটির নিচে কাটিয়ে জীবিত ফিরে আসা মাইক গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তার নামটি ঠিকই লিখিয়েছেন।

মিনির অদ্ভুত এই ইচ্ছা পূরণে ১৯৬৮ সালে লন্ডনের এক কবরস্থানে তার বন্ধুরা দাফন করে আসে তাকে। তার কফিনের ভেতর একটি ছোট্ট ছিদ্র করে রাখা হয়, যাতে কার্বন ডাই অক্সাইডের বিষক্রিয়ায় তিনি সত্যি সত্যিই মারা না যান। জানা যায়, ওই ছিদ্র দিয়েই নাকি খাবার আর জল পাঠানো হতো তাকে। আর তার এই শখ মেটাতে বন্ধুদের পকেট থেকে খসেছে মোটা অঙ্কের টাকা। টানা ৬১ দিন কবরে থাকার পর মাইক যখন ফিরে আসেন, তার চোখে ছিল কালো সানগ্লাস, এতদিন অন্ধকারে থাকার পর হঠাৎ আলোতে তার দৃষ্টি শক্তির যেন কোনো ক্ষতি না হয়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। নিজের কবরে থাকার দিনগুলিকে মাইক মিনি মিশকালো অন্ধকার আর একাকিত্বের সাথে যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। মাইকের বন্ধুরা যদিও তাকে বদ্ধ উন্মাদ বলে দাবি করেছিলেন, তবে মাইক জানান- আর কিছু দিন তিনি কবরের মধ্যে থাকলে নির্ঘাত পাগলই হয়ে যেতেন। গিনেস বুকে নিজের নামটি লেখানোর তীব্র ইচ্ছা থাকলেও, গিনেস কর্তৃপক্ষ এই ধরনের ঘটনাকে জীবননাশক বলে আখ্যায়িত করেছেন, এবং জীবননাশক কোনো পাগলামিকে রেকর্ড হিসেবে যুক্ত করতে তারা রাজি নন বলে, মাইকের এই ঘটনাকে গিনেস বুকে রেকর্ড রাখতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

Related Posts

Leave a Reply