অবশেষে কেরালার বিতর্কিত সবরিমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারলেন মাত্র এক জন মহিলা!
কলকাতা টাইমসঃ
অবশেষে কেরালার বিতর্কিত সবরিমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারলেন মাত্র এক জন মহিলা! নির্দিষ্ট বয়সের মহিলাদের প্রবেশ নিয়ে ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের পর শনিবার এক মহিলা ভক্ত মন্দিরটিতে ঢোকার সুযোগ পেয়েছেন। তবে এর জন্য তাকে আগে বয়সের প্রমাণপত্র দেখাতে হয়েছে যে তিনি মন্দিরে প্রবেশের জন্য নিষিদ্ধ নন।
দেবী আয়াপ্পার এই মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। শনিবার বিকেলে তামিলনাড়ু থেকে আসা এক মহিলা তার পরিবারসহ পাহাড় চূড়ায় উঠে মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারী ভক্তরা তাকে বাধা দেয় এবং তার বয়স ৫০ বছর মনে করে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ওই সময় পাহাড় বেয়ে ওঠা লতা নামের ওই ক্লান্ত মহিলা তার পরিচয়পত্র বের করে দেখান যে তার বয়স ৫০ নয়, ৫২। ছলছলে চোখে কার্ড দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি এখানে আমার দ্বিতীয় দর্শন। আমি এখানে গত বছরও এসেছিলাম।’ বয়স নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল লতা ও তার পরিবারকে সবরিমালার শেষ ১৮ টি সোনালি সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে দেবী আয়াপ্পার দর্শন করতে দেওয়া হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুইমহিলা- সাংবাদিক কবিতা জগদল এবং সমাজকর্মী রেহানা ফাতিমা প্রায় শ’খানেক পুলিশ নিয়ে মন্দিরের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। শেষ প্রায় ৫ কিলোমিটার বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথর থেকে পুলিশই তাদের রক্ষা করে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু মাত্র কয়েকশ মিটার পথ বাকি থাকতেই তাদের পথরোধ করে দাঁড়ায় একদল ভক্ত। তাদের সঙ্গে থাকা প্রধান পুরোহিত হুমকি দিয়ে বলেন, প্রয়োজনে মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেবেন। তবুও ‘নিষিদ্ধ’ বয়সের কোনো মহিলাকে সেখানে ঢুকতে দেবেন না। অবশেষে সেখানেই হাল ছেড়ে দিয়ে ফিরে যায় দলটি।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কেরালার বিখ্যাত এই মন্দিরে ঋতুমতী নারীর (১০ থেকে ৫০ বছর বয়স) প্রবেশ একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ওই মন্দিরের উপাস্য দেবী আয়াপ্পা একজন চিরকুমারী এবং পিরিয়ড হওয়ার বয়স হয়েছে এমন সব নারী এখানে ‘অপবিত্র’। এই বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের দেওয়া রায়ে এই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়। রায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, উপাসনা এবং নিবেদন কখনো লিঙ্গ বৈষম্যমূলক হতে পারে না। ঈশ্বরের কাছে সব ভক্তই সমান। দেবী আয়াপ্পাও এর বাইরে নন। প্রার্থনা-উপাসনায় সবার সমান অধিকারে পুরুষতন্ত্র কখনো বাধা হতে পারে না।
পাঁচ সদস্যের ওই বেঞ্চের একমাত্র মহিলা সদস্য বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা শুধু এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। তার বক্তব্য ছিল, আদালতের কখনো ধর্মচর্চায় হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। এর প্রায় এক মাস পর মঙ্গলবার প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে মহিলা ভক্তদের জন্য বিকেল ৫টা থেকে খুলে দেওয়া হয় মন্দিরের দরজা। কিন্তু মন্দিরের ভক্তরা সুপ্রিম কোর্টের এই বিচার মেনে নিতে অপারগ। মঙ্গলবার বিকেল ৩ টে থেকে মন্দিরের সব বয়সী পুরুষ ও বর্ষীয়ান মহিলা ভক্তরা মন্দিরের পথ আটকে মিছিল শুরু করে। ওই সময় পূণ্যার্থীবাহী প্রত্যেকটি বাস থামিয়ে জোর করে উঠে তারা খুঁজে খুঁজে দেখতে থাকে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সের কোনো মহিলা মন্দিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে কিনা। একই সঙ্গে সবাইকে নির্দেশ দিতে থাকে যেন সুপ্রিম কোর্টের রায় কেউ না মানে।
এই সময়ে একটি সরকারি বাস থেকে মন্দিরগামী সাংবাদিকতা বিভাগের একদল ছাত্রীকে জোর করে টেনেহিঁচড়ে বের করে মারধর করে ফেরত পাঠিয়ে দেয় উত্তেজিত ভক্তরা। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবারের ঘটনার পর গোটা এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করে সরকার। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব ভক্তের মন্দিরে প্রবেশ নিশ্চিত করার আশ্বাস দিলেও কোনো ‘নিষিদ্ধ’ বয়সের মহিলাকে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেয় অবস্থানকারী ভক্তরা।