May 8, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

তিন হাজার বছরের গোপনীয়তার জন্ম ও মৃত্যু 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

শুনলে অবাক হতে হয় সময়ের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে ঘটে গেছে তিন হাজার বছরের গোপনীয়তার বিবর্তনের জন্ম ও মৃত্যু। আর অবাক করার বিষয় হচ্ছে গোপনীয়তার উপর ভিত্তি করেই নানান দেশ ও সমাজে তৈরি হয় নানা রকমের আইন ও সেবা। প্রিয় পাঠক, ছবিতে দেখে নিতে পারেন তিন হাজার বছরের গোনীয়তার বিবর্তন। 

অভ্যন্তরীণ দেয়াল (খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০)

সিমেন্টের চুল্লি অবিষ্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত অধিকাংশ বাড়ির রুমগুলো আলাদা করার জন্য কোন দেওয়াল ছিল না।

একক বিছানা (খ্রিষ্টপূর্ব ১৭০০)

সেসময় বিছানা ব্যবহার করা অনেক ব্যয়বহুল ছিল। অনেক পরিবারের ঘরে একটিই বিছানা থাকত এবং সবাই একসঙ্গেই ঘুমাতো। এমনকি বাড়িতে মেহমান আসলেও এর বব্যতিক্রম হতো না। সবাইকে একই খাটে ঘুমাতে হতো। আর সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার, সেসময় যে কেউ যে কারো সঙ্গে অবাধে যৌনতায় লিপ্ত হতে পারত।

শব্দ না করে পড়া (খ্রিষ্টাব্দ ১২১৫)

এ সময় নিরবে পড়াশুনার মধ্য দিয়েই দাস প্রথার নতুন সূচনা হয়। ধর্মীয় গির্জার আদেশের আগ পর্যন্ত তখনকার মানুষের মধ্যে শব্দ না করে পড়ার ট্রেন্ডটি একদমই ছিল না। তার ৫০০ বছর পরই, যখন বই কেনার সামর্থ্য মানুষের নাগালে আসে, ঠিক তখন থেকেই নিরবে পড়ার প্রচলন শুরু হয়।

ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা (১৯ শতক)            

সর্বপ্রথম অমেরিকান নাগরিকদের আদমশুমারির সময় মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য অনেকটাই উন্মুক্ত ছিল। এমনকি ১৯ শতকের ডাক বিভাগ আইনে পোস্টকার্ডের দাম খামের চেয়ে কম ছিল এবং সেটি বেশ জনপ্রিয়ও ছিল সেসময়। এরপর ১৮৯০ এর দিকে ‘গোপনীয়তা অধিকার’ আইন চালু হয়। কেন চালু হয়, সেই কারণটি কিন্তু বেশ মজার। ক্যামেরার ভয়েই এই গোপনীয়তা অধিকার আইনের প্রচলন হয়।

স্বেচ্ছায় ওয়েব ট্র্যাকিং (২০১৫)

এই সময় ‘এটি অ্যান্ড টি’ নামে একটি কোম্পানি বেশ কিছু ভোক্তাকে ৩০ ইউ.এস ডলারের সেবা দেওয়া শুরু করে। ফলে মানুষ আরও বেশি টাকা-পয়সা, স্বাস্থ্যসেবা এবং বিনোদন খুঁজে বেড়াবে। কিন্তু খুব অল্প সংখ্যক মানুষ এই সেবা গ্রহণ করে। তবে এটি বেশ কার্যকরী পদক্ষেপ ছিল, কারণ এরপরেই মানুষ নিজেদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং বিনোদন অর্থের মাধ্যমে পেতে শুরু করে।

ভিন্টন সেরফ, একজন গুগল এক্সিকিউটিভ এবং সামরিক সূত্রের প্রাথমিক ইন্টারনেট প্রোটোটাইপের কো-ক্রিয়েটর। তিনি বলেন, ‘গোপনীয়তা হলো একটি অস্বাভাবিকতা। ৩,০০০ বছরের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, যখন গোপনীয়তা দ্বন্দ্বে থাকে, তখন মনস্তাত্ত্বিকভাবেই মানুষের অর্থ, সম্মান বা সুবিধার প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়।’

উপজাতীয় জীবন ((খ্রিষ্টপূর্ব ২০০,০০০- ৬,০০০পর্যন্ত)

জারড ডায়মন্ড, একজন ইউসিএলএ-এর নৃ-তত্ত্ববিদ। তিনি বলেন, ‘ট্রোবরিয়ান দ্বীপপুঞ্জে শিকারীদের ছেলে-মেয়েরা বাবা মায়ের সঙ্গে একই কুঁড়েঘরে, একই রুমের একই বিছানায়ই ঘুমাতো। সেখানে তাদের কোন গোপনীয়তা ছিলনা। তারা তাদের ছেলে-মেয়েদের সামনেই যৌন মিলনে লিপ্ত হতো। তারা শুধু চাদর দিয়ে তাদের বাচ্চাদের মাথা ঢেকে রাখতে বলত আর বাচ্চারাও তাদের বাবা মাকে চোখের সামনে যৌনকর্ম করতে দেখতো।’

চীন শহরগুলি (খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ থেকে খ্রিষ্টাব্দের ৪র্থ শতাব্দী পর্যন্ত)

গ্রীকদের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ থেকে প্রাচীন উপজাতীরা জ্যামিতিকভাবে ঘর বানানো শুরু করে। সক্রেটিস বলেন ‘যখন মানুষ আলোর দিকে সচেতন না হয়ে অন্ধকারে নিজেদের গোপন করে রাখে, তখন আর কোন মানুষই তার সফলতা, যথাযথ সম্মান এবং নিখুঁত ন্যায়বিচার খুঁজে পায়না।

প্রাথমিক মধ্যযুগ (৪র্থ শতাব্দী থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ): বিচ্ছিন্ন গোপনীয়তা

‘ব্যক্তিগত ইতিহাস: মধ্যযুগীয় বিশ্বের উদ্ঘাটন’’ এর লেখক জর্জ ডেবি বলেন, ‘প্রাইভেটো মানে- দূর থেকে নেয়া। কিন্তু প্রাইভেসি (গোপনীয়তা) বলে ক্লাসিক্যাল বা মধ্যযুগীয় ল্যাটিন কোন শব্দই খুঁজে পাওয়া যায় নি।’

প্রাচীন রেনেসাঁ যুগ (১৩০০-১৬০০)

প্রাচীন রেনেসাঁ যুগের এ সময় থেকেই শুরু হয় মানুষের গোপনীয়তা রক্ষা করার প্রবণতা।

প্রাক-শিল্প বিপ্লব (১৬০০-১৮০০)

এই সময়ে মানুষ ক্রমান্বয়ে তাদের ঘরবাড়ি ও বাসস্থানের গোপনীয়তা রক্ষা করতে শুরু করে।

স্বর্ণ যুগ (১৮৪০-১৯৫০)

এটি ছিলো শিল্প বিপ্লবের সময়। তখন মানুষের গোপনীয়তা রক্ষা করার প্রত্যাশা বাড়তে থাকে।

(খ্রিষ্টাব্দ ২০০০)

স্যাম আল্টম্যন, যিনি এই প্রতিবেদনের তথ্যগুলো প্রদান করেন, তিনি বলেন, ‘১৯৮১ সালের পরে যারা জন্মগ্রহণ করে তাদের জন্য এটি হলো জাদুর যুগ। যেখানে প্রাইভেসি সেটিং এর বিশাল পরিবর্তন পাওয়া যায়।’

গোপনীয়তা আবার স্বচ্ছতা হারায়

তিন হাজার বছর যাবত মানুষ সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসা-বানিজ্য, অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এবং খ্যাতির মতো ব্যাপারগুলো গোপন রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখে এবং এটি আজকের দিনেও পুরোপুরি সত্য। তবে এখনকার দিনে গোপনীয়তা বজায় রাখা আর আগের মতো নেই। বরং সবকিছুই সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে। গবেষকদের মতে, তারা আবিস্কার করেছেন- যদি রোগীরা নিজেদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা সবার জন্য উন্মুক্ত রাখে, তাহলে সেই রোগের প্রকোপ থেকে প্রায় ২৫ হাজার জীবন বাঁচানো সহজ হয়।

যদি ইতিহাসকে আমরা চলার পথের সঙ্গী হিসেবে দেখতে শুরু করি, তাহলে আমরা আমাদের আগের যুগের মানুষদের অর্জন করা গোপনীয়তা বজায় রাখতে সক্ষম হবো। তবে আমরা যদি আমাদের প্রাচীন ইতিহাসের শেকড়কে মূল্যবান উপাদান হিসেবে জীবনে প্রয়োগ না করি, তাহলে আমরা এই বিশ্বের কোন কিছুই গোপন রাখার কথা কল্পনাও করতে পারবো না। এখনকার আবিষ্কৃত প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা দিন দিন আমাদের গোপনীয়তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছি। তবে তথ্য গোপন রাখাও কিন্তু অনেক সময় হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ সেক্ষেত্রে আমরা প্রাকৃতিকভাবে মানবতার স্বচ্ছতা হারিয়ে ফেলতে পারি। 

Related Posts

Leave a Reply