May 2, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular শিল্প ও সাহিত্য

‘জেন’ গল্পের একটি ফোটা 

[kodex_post_like_buttons]

সৌগত রায়বর্মন 

‘জেন’ জাপানের একটি প্রাচীন ধর্ম। কেউ কেউ মনে করেন, জেনরা বুদ্ধদেবের আদর্শ অনুসারী। আবার অনেকেই বলেন, জেনরা চিণের কনফুসিয়াস দর্শনের সঙ্গে বুদ্ধের মনোন মিশিয়ে একটা নতূন পথ সন্ধান করেছিলেন। জেনরা কিন্তু ঈশ্বরপ্রসঙ্গে বুদ্ধদেবের মতোই নিশ্চুপ ছিল। সুতরাং তারা আস্তিক না নাস্তিক তা নিয়ে স্পস্ট করে কিছু বলা সম্ভব নয়। তাদেরকে মতবাদকে ঠিক ধর্ম না বলে জীবনধারাও বলা যেতে পারে। আশ্চর্য এটাই যে তাদের কোনো ধর্ম পুস্তকও নেই। তাদের যা কিছু বক্তব্য সবই গল্পের আকারে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ত। আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে লেখা এই চার ছ’ লাইনের কাহিনিগুলি ক্রমশ ক্রমশ হারিয়ে যাওয়ার আগে যেটুকু এখনও পাওয়া যায় তার কিছু নিদর্শন….

সাধু ও সামুরাই ( গল্প ) 
সৌগত রায়বর্মন 
 
এক দুর্ধর্ষ সামুরাই, যাকে আজ পর্যন কেউ পরাজিত করতে পারেনি, সে জাপানের সম্রাটের কাছে এসে প্রনাম জানিয়ে বলে, সম্রাট আপনি নিশ্চয় জানেন, আমি অপরাজেয়। কত যে সামুরাই যোদ্ধা আমার সঙ্গে লড়াই করতে এসেছে! কিন্রু তাদের আমি কচু কাটা করেছি। সম্রাট মাথা নেড়ে বলল, জানি, তা আমাকে কি করতে হবে? সামুরাই তার পদতলে পড়ে বলল, সম্রাট আমাকে শেষ্ঠ যোদ্ধার সম্মান প্রদান করুন।
সম্রাট হেসে বলল, তা আমি জানি। কিন্তু সবাইকে তুমি হারাতে পারনি। সামুরাই অবাক। কে সে যোদ্ধা যাকে আমি হারাতে পারিনি? সম্রাট বলল, সে এক সাধু।পাহাড়ের মাথায় থাকে। তাকে যদি তুমি পরাজিত করতে পারো, তবে বুঝবো তুমি শ্রেষ্ঠ বীর। যাও তাকে গিয়ে পরাজিত করে এসো।
সামুরাই সারাদিন ধরে পাহাড়ের চরাই-উৎরাই পেড়িয়ে প্রায় সন্ধের দিকে এক সাধুর পর্ণকুটিরে গিয়ে হাজির হল। সাধুকে দেখে সে খুব দু:খিত হল। রোগা লিকপিকে চেহারা। বয়েস প্রায় ৯০ এর কাছাকাছি। তার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে? সম্রাট কি তার সঙ্গে ঠাট্টা করলো? কিন্তু রাজার আদেশ! সে অস্বীকার করে কিভাবে? 
সে সাধুর সামনে এসে বলল, সাধু দেখো আমার কোনো উপায় নেই। রাজার আদেশে আমি তোমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে এসেছি। তোমাকে পরাজিত করতে পারলেই আমি দেশের শ্রেষ্ঠ বীরের সম্মান পাবো।
সাধু হেসে বলল, বেশ তো! তুমি যখন চাইছো তখন যুদ্ধ করো। তবে এখন তো রাত হয়ে গেছে, যুদ্ধ করার আদর্শ সময় এটা নয়। কাল সূর্য ওঠার আগেই আমরা এখানে চলে আসবো। তারপর শুরু হবে আমাদের যুদ্ধ। রাজি?
সামুরাই রাজি হয়ে গেল। কিন্তু কিছুতেই বুঝে উঠতে পারল না, সম্রাট এরকম একজন বৃদ্ধ সাধুর কাছে তাকে কেনো পাঠিয়েছেন। এর রহস্যটাই বা কী? সামুরাই রাতে কিছু খেলনা, ঘুমালও না। কী জানি সাধুরা অনেক মন্ত্র টন্ত্র জানে, কি করতে কি করে দেবে, কে জানে।  সারারাত এ সব ভাবতে ভাবতেই ভোর হয়ে গেল।
অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে সে নির্দিস্ট স্থানে পৌঁছে গেল।
গিয়ে দেখে সাধু পাহারের মাথায় দাঁড়িয়ে আছেন। পিছন ফিরে। কিন্তু হাতে কোনো অস্ত্র নেই। সামুরাই তাকে সেখানেই আঘাত করতে পারত। কিন্তু সে যোদ্ধা। পিছন থেকে আঘাত করা অন্যায়। তাই সে সাধুর কাছে গিয়ে বলল, আমি এসে গেছি, এবার যুদ্ধ শুরু হোক। সাধু বলল, হোক। কিন্তু আমায় কি করতে হবে তা একটু বুঝিয়ে দাও। সামুরাই অবাক হয়ে বলল, কি করতে হবে মানে? যুদ্ধ করতে হবে। তুমি কখনো যুদ্ধ করনি? সাধু উত্তর দিল। হ্যা বহুবার করেছি। কিন্তু তুমি কি ভাবে যুদ্ধ শুরু করবে বল, আমি তাহলে সেভাবেই প্রস্তুত হব। সামুরাই ভাবল, ব্যাটা সাধু নিশ্চয় কোনো মতলব করছে। এ কথা ভেবেই সে বুঝল, আর সময় নষ্ট করা যাবে না। সে ইয়া হু করে ক্যারাটের ভংগীতে সাধুর দিকে ছুটে গেল। কিন্তু সাধু নড়েও না সড়েও না। এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ বন্ধ করে। সামুরাই ছুটে এসে ক্যারাটের পাঞ্চ মারতে গিয়ে দেখে সাধু সে রকম ভাবেই চোখ বুজে আছে। সাধুর শরীরের কাছে এসে সামুরাই থেমে গেল। অসম্ভব। নট নড়ন চড়ন একটা লোক কে সে কিভাবে আঘাত করবে? সামুরাই সাধুর কাছে এসে চিৎকার করে বলল, ইয়ার্কি হচ্ছে? বলি যুদ্ধ করবে, না করবে না? সাধু স্মিত হাসি হেসে বলল, আমি তো যুদ্ধই করছি! তুমি তোমার মতো, আমি আমার মতো।
সামুরাই বলল না, তা হবে না, তোমাকে আমার মতো করে যুদ্ধ করতে হবে। সাধু বলল। তাহলে কি করতে হবে বলে দাও। সামুরাই সাধুর হাতে একটা তরোয়াল দিয়ে বলল, এটা ধর। শক্ত করে। আমি তোমাকে আঘাত করতে যাবো, তুমি তা প্রতিহত কর। সাধু বলল, তথাস্তু। সাধু হাতে তরোয়াল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সামুরাই উদ্দত তরোয়াল নিয়ে সাধুর দিকে তেড়ে গেল। সাধু ঠায় দাঁড়িয়ে। সামুরাই সাধুকে ওই ভাবে দেখে তেলেবেগুনে জলে উঠল। বলল, তরোয়লটা ওঠাও। আমার দিকে তেড়ে এসো। সাধু তার কথা মতো আস্তে আস্তে তরোয়াল হাতে সামুরাইয়ের দিকে এগিয়্র এসে আবার দাঁড়িয়ে গেল। সামুরাই মুখ খেচিয়ে সাধুকে বলল, তরোয়াল ওপরে তোলো। সাধু তাই করল। কিন্তু তরোয়াল নিচে নামালো না। একই ভাবে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকল। 
সামুরাই এতক্ষনে হাঁপিয়ে পড়েছে। সত্যিই তো সকাল গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল, সে তো সাধুকে দিয়ে যুদ্ধই শুরু করাতে পারল না! সে এবার সাধুকে বলল, তুমি তরোয়াল নিয়ে আমার পিছনে পিছনে ঘুরতে থাকো। আঘাত করার চেষ্টা কর।সাধু তাই করল। সামুরাইয়ের তরোয়াল নিয়ে ঘুরতেই থাকল, সামুরাইও সাধুকে প্রচুর সুযোগ করে দিল যাতে সে তাকে আঘাত করার চেস্টা অন্তত করতে পারে। কিন্তু বেলা গড়িয়ে যায়, কিছুতেই সামুরাই সাধুকে আঘাতই করতে পারল না, জয় করা তো দুরের কথা। 
সূর্য অস্তে চলে যাচ্ছে। যুদ্ধ আর শুরুই হল না। সামুরাই এবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। সাধুর পায়ে নতজানু হয়ে বলল, সত্যিই আমি আপনার কাছে পরাজিত হলাম। আপনি আমার চাইতেও বড় যোদ্ধা।
সাধু সামুরাইকে হাত ধরে উঠিয়ে বলল, তুমি তো আমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসনি। এসেছিলে নিজের সঙ্গে লড়াই করতে।  

Related Posts

Leave a Reply