May 3, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular খেলা

ব্যাট কেনার জন্য অভাবে চুরিও করেছিলেন এই বিখ্যাত তারকা 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

ভালো পরিবেশ, ভালো ব্যবস্থার মধ্যে তো সবাই বড় হতে চায়। কিন্তু যারা সমস্ত প্রতিকূলতা কাটিয়ে নিজের স্বপ্নকে সফল করে তারাই আকাশের সব থেকে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে স্থান পে যেমন ভারতের ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র এই ১০ ক্রিকেটার! যারা জীবনে আজ খ্যাতি,অর্থ সব রোজগার করেছেন এমন পরিস্থিতিতে থেকে যেখানে অনেকেরই স্বপ্ন ভেঙে খান-খান হয়ে যায়। কিন্তু এরা না থিম এগিয়ে গেছেন তাই তারা আজ বিশ্বে সমাদৃত। যেমন –

১) পাঠান ব্রাদার্স: ভারতীয় ক্রিকেটে পাঠান ভাইদের ছোটবেলা কেটেছে মসজিদে৷ যে মসজিদে মাত্র মাসিক ২৫০ টাকায় ঝাঁট দেওয়ার কাজ করতে ইরফান ও ইউসুফের বাবা৷ পরে একটি ঘর নিলেও সেখানেই থাকতেন পরিবারের পাঁচজন৷ নতুন জুতো কেনার পয়সা না-থাকায় পুরনো জুতো কিনে তা নিজেই সেলাই করতেন ইরফান৷

বাকিটা ইতিহাস৷ মাত্র ১৯ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক হয় ইরফানের৷ ২০০৬-এ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টের প্রথম ওভারে হ্যাটট্রিক করে নজির গড়েন ভারতের বাঁ-হাতি সুইং বোলার৷ ২৯টি টেস্ট, ১২০টি ওয়ান ডে এবং ২৪টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন ইরফান৷ দাদা ইউসুফ দেশের হয়ে ৫৭টি ওয়ানডে এবং ২২টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন৷ পরে ভদোদরায় বাংলো বানান পাঠান ব্রাদার্স৷

২) মুনাফ প্যাটেল: গুজরাতের ইকহারে জন্ম মুনাফ মুসা প্যাটেলের ছোটবেলা কেটেছে অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে৷ বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর৷ শিশুশ্রমিক হিসেবে ভারতীয় দলের প্রাক্তন পেসার দৈনিক ৩৫ টাকা বেতনে কাজ করতেন টাইলস ফ্যাক্টরিতে৷তিন বেলা পেট ভরে খেতে না-পাওয়া মুনাফের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন অবাস্তব৷ জুতো কেনার পয়সা না-থাকায় চপ্পল পরেই টেনিস বলে খেলতেন তিনি৷

গ্রামের এক ব্যক্তি এ দেখে মুনাফকে জুতো কিনে দেন এবং বরোদার এক ক্রিকেট ক্লাবে ওকে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেন৷ পরে এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে ট্রায়ালে সুযোগ পান মুনাফ৷ সেখানে কিংবদন্তি অজি পেসার ডেনিস লিলির তত্ত্বাবধানে প্র্যাকটিস করেন বরোদার ডানহাতি৷ পের স্টিভ ওয়া মুনাফের জন্য সচিনের কাছে দরবার করেন৷ ২০০৬-এ টেস্ট অভিষেক হয় মুনাফের৷ দেশের হয়ে ১৩টি টেস্ট ও ৭০টি ওয়ান ডে খেলেছেন তিনি৷

৩) জাহির খান: কপিল দেবের পর একমাত্র ভারতীয় পেসার যাঁর দখলে তিনশোর বেশি টেস্ট উইকেট রয়েছে৷ কিন্তু জাহিরের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার রাস্তা ছিল অমসৃণ৷ মুম্বই ন্যাশানাল ক্রিকেট ক্লাবে সুযোগ পাওয়ায় জাহিরকে আন্টির সঙ্গে মুম্বইয়ে এক হাসপাতালের একটি বেডের মধ্য দিন কাটাতে হয়৷ কারণ তাঁর আন্টি হাসপাতালে হেল্পারের কাজ করতেন৷দু-বেলা খাবারের পয়সাও ছিল জাহিরের কাছে৷ না-খেয়ে সকালে প্র্যাকটিসে যেতেন জাহির৷ মেন্টর সুধীর নায়েক জাহিরকে মাসে পাঁচ হাজার টাকার কাজ দেন৷ তা দিয়েই সমস্ত খরচ চালাতেন ভারতীয় বোলিংয়ের ‘জ্যাক’৷ ২০০০ সালে কেনিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় ভারতীয় ক্রিকেটে সেরা বাঁ-হাতি পেসারের৷ ভারতের হয়ে ৯২টি টেস্ট এবং ২০০টি ওয়ান ডে খেলেছেন জাহির৷

৪) রবীন্দ্র জাদেজা: সৌরাষ্ট্রে জন্ম রবীন্দ্র অনিরুদ্ধ জাদেজার বাবা একটি বেসরকারি সংস্থায় সিকিউরিট গার্ডের কাজ করতেন৷ দ্ররিতার সঙ্গে লড়াই করা জাদেজার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল অলীক৷ তবুও চেষ্টা চালিয়ে যান৷ কিন্তু ২০০৫-এ দুর্ঘটনায় মায়ের মৃত্যুর পর ক্রিকেট ছেড়ে দিতে চেয়েছিল জাদেজা৷ কিন্তু বোন পার্টটাইম কাজ করে তাঁর খেলার খরচ চালাতেন৷ ২০০৮-এ বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন জাদেজা৷ পরের বছরই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে অভিষেক হয় বাঁ-হাতি অল-রাউন্ডারের৷ এক সময় টিম ইন্ডিয়ার বিরাটের দলে অন্যতম সদস্য জাড্ডু৷

৫) বিনোদ কাম্বলি: মুম্বইয়ের বস্তি থেকে ক্রিকেটের রাজপথে আগমন ঘটে কাম্বলির৷ বাবা ছিলেন এক সামান্য মেকানিক৷ মাসে যাঁর আয় ছিল মাত্র ৫০০ টাকা৷ একটি ঘরের ১৮জন থাকত৷ শোনা যায় ব্যাট কেনার জন্য চুরিও করেছিলেন কাম্বলি৷ কিন্তু চমক ঘটে স্কুল ক্রিকেটে সারদাশ্রম বিদ্যামন্দিরের হয়ে সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে তাঁর ৬৬৪ রানের পার্টনারশিপ শুধু ভারতেই নয়, ক্রিকেটবিশ্বেও নজর কাড়ে৷ এর পর মাসে ২০০ টাকা পেতেন কাম্বলি৷ যা দিয়ে ক্রিকেটের খরচ চালাতেন সচিনের বন্ধু৷ ১৯৯১-এ শারজায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথমবার ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপান কাম্বলি৷ দু’ বছর পর কলকাতায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক মুম্বইয়ের প্রতিশ্রুতিময় এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানের৷ দেশের হয়ে ১৭টি টেস্ট এবং ১০৪টি ওয়ান ডে খেলেন তিনি৷

৬) মহম্মদ শামি: উত্তরপ্রদেশের আমরোহা জেলার সাহসপুর নামে এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম শামির বাবা ছিলেন এক দরিদ্র কৃষক৷ ক্রিকেটের প্রতি ছেলের আগ্রহ দেখে গ্রাম থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে মোরাদাবাদে এক ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে তাঁকে ভর্তি করেন বাবা৷ উত্তরপ্রদেশে অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ না পাওয়ায় শামিকে কলকাতায় পাঠান কোচ বদরুদ্দিন সিদ্দিকি৷ এখান থেকেই প্রথমে বাংলা এবং ২০১৬ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে ভারতীয় দলে ডাক পান শামি৷ যিনি এখন টিম ইন্ডিয়ার পেস বোলিংয়ের মূল সম্পদ৷

৭) হরভজন সিং: ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট প্রাপক ভাজ্জি বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের আর্থিক হাল ধরতে কানাডায় ট্রাক ড্রাইভার হওয়ার কথা ভেবেছিলেন৷ ১৯৯৮-এ দেশের হয়ে টেস্ট অভিষেক হলেও প্রথম আটটি টেস্টের পর দল থেকে বাদ পড়েছিলেন৷ কিন্তু ২০০১-এ অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ফের ভারতীয় দলে ডাক পান হরভজন৷ বাকিটা ইতিহাস৷ কলকাতা টেস্টে তাঁর হ্যটট্রিক-সহ ১৩টি উইকেট নেন ভাজ্জি৷ চেন্নাইয়ে পরের টেস্টে ২০টি অজি উইকেটের মধ্যে ১৫টিই নেন টার্বুনেটর৷

৮) বীরেন্দ্র সেহওয়াগ: নজফগড়ের নবাব বলে পরিচিত সেহওয়াগ একান্নবর্তী পরিবারে বড় হয়েছেন৷ ৫০ জনের বেশি লোক এক সঙ্গে থাকতেন৷ সেহওয়াগের বাবার গমের ব্যবসা ছিল৷ বাবা চাইতেন সেহওয়াগ বড় হয়ে এই ব্যবসা দেখুক৷ কিন্তু বীরুর তা না-পসন্দ ছিল৷ প্রায় ৮৪ কিলোমিটার দূরে ক্রিকেট খেলতে যেতেন৷ সচিন তেন্ডুলকরের ব্যাটিং টিভিতে দেখে প্র্যাকটিস করতেন বীরু৷ বকিটা ইতিহাস৷ দেশের হয়ে ১০৪টি টেস্ট এবং ২৫১টি ওয়ান ডে খেলেছেন সেহওয়াগ৷ ১৯৯৯-এ মোহালিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে প্রথমবার ভারতীয় দলের জার্সি পড়েন বীরু৷

৯) উমেশ যাদব: ভারতীয় দলের পেসার উমেশের বাবা ছিলেন একজন খনি শ্রমিক৷ ক্রিকেট খেলার মতো অর্থ ছিল না৷ছোটবেলায় টেনিস বলেই খেলতেন উমেশ৷ কিন্তু বড় হয়ে পুলিশের চাকরি করার ইচ্ছে ছিল বিদর্ভের এই ডানহাতি পেসারের৷ কিন্তু ট্রায়ালে সুযোগ পাওয়ার পর ধীরে ধীরে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন তিনি৷ ২০১০-এ ভারতের জিম্বাবোয়ে সফরের দলে সুযোগ পান উমেশ৷ পরের বছর ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয় ভারতীয় দলের এই স্পিডস্টারের৷

১০) রমেশ পওয়ার: দেশের হয়ে ২টি টেস্ট ও ৩১টি ওয়ান ডে খেলা মুম্বইয়ের এই অফ-স্পিনার জীবন সংগ্রাম অন্যদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার মত৷ ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ায় পর রমেশের বোন তাঁকে সাহায্য করেন৷ মোটা থাকার জন্য কেরিয়ারের শুরুতে অনেক কটুক্তি শুনতে হয়েছিল রমেশকে৷ কিন্তু ২০০৪-এ ভারতের পাকিস্তান সফরে জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর নিঃশব্দে সবকিছুর জবাব দেন মুম্বইয়ের এই অফ-স্পিনার৷

Related Posts

Leave a Reply