May 3, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular

রহস্যময় কালো কুকুর, ৬০০ বছরে তার কীর্তি শুনলে হাড় হিম হয়ে যাবে !

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

কালো বিড়াল নিয়ে পশ্চিমি জগতের বিশাল বিশাল কুসংস্কারের গল্প সবারই জানা আছে। কিন্তু কালো কুকুর? শুনে আতঙ্কিত হবেন না। হিসেব মতো ষোড়শ শতক থেকে চলে আসছে কালো কুকুর-সংক্রান্ত এই মিথ। তবে এই মিথ যে কোনো কালো কুকুর নিয়ে নয়। একটি বিশেষ কালো কুকুরকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে কিংবদন্তি।

– ১৫৫২ খ্রিস্টাব্দে, লন্ডনের এক কার্ডিনাল, পোপকে চিঠি লিখতে লিখতে প্রথম প্রত্যক্ষ করেন এই কুকুরটিকে। কার্ডিনাল ক্রেসেন্টিয়াস দেখতে পান, এক বিশালাকার কালো কুকুর, তার জ্বলন্ত চোখ নিয়ে তার ঘরে উপস্থিত। তিনি আতঙ্কিত হয়ে লোক ডাকেন। কিন্তু লোকজন ঘরে ঢুকে দেখে কেউই কোথাও নেই। এর অব্যবহিত পরে কার্ডিনাল অসুস্থ হয়ে পড়েন। এবং কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান। মৃত্যুশয্যায় তিনি বার বার ‘কালো কুকুরটাকে বের করে দাও’ বলে আর্তনাদ করে উঠতেন।

– এর পরের গল্পটি ১৫৭৭ সালের। সাফোকের বাঙ্গে শহরের এক বৃষ্টিমুখর সকাল। ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে হঠাৎই ঝড়-বৃষ্টির দাপট বেড়ে যায়। শহরের গির্জার ভিতরে হঠাৎই অন্ধকার নেমে আসে। কেবল বিদ্যুতের চমকে মাঝে মাঝে চোখে পড়তে থাকে প্রার্থনাকক্ষের অভ্যন্তর। এমন সময়ে বিশালাকৃতির এক কালো কুকুর সেখানে দৃশ্যমান হয়। প্রার্থনারত দুই ব্যক্তির মাঝখান দিয়ে ছুটে যায় কুকুরটি। সঙ্গে সঙ্গে দু’জনেরই মৃত্যু হয়। দেখা যায়, তাদের ঘাড় মটকে গিয়েছে। কুকুরটি এক ব্যক্তিকে কামড়েও দেয়। কিন্তু সেই লোকটি প্রাণে বেঁচে যায়। একই দিনে কালো কুকুরটিকে ব্লিথবার্গের গির্জাতেও দেখা যায়। সেখানে দুই ব্যক্তি আর একটি বালকের মৃত্যু হয়। একজনের হাত পুড়ে যায়।

– ১৮৯০ সালে আইলেসবেরির এক দুধ-ব্যবসায়ী তার গোশালার দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখতে পান, এক জায়গায় এক বিশাল কালো কুকুর পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার জ্বলন্ত চোখ দেখে তিনি ভয় পান এবং অন্য রাস্তা ধরেন। পরের দিন রাত্রে তিনি আবার কুকুরটিকে দেখতে পান। এর পরে বেশ কয়েকবার কুকরটি তাকে দেখা দেয়। একটা সময় পরে দুধ-ব্যবসায়ীর বাকরোধ হয় এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে তিনি মারা যান।

– ইংল্যান্ডের আইল অফ ম্যান-এর এক দুর্গে এমনই এক কালো কুকুরের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। স্থানীয় মানুষ তাকে ভৌতিক কুকুর বলেই জানেন। সে নাকি আগুনের উপরে ঘুমোতে পারে। তাকে ধরতে গিয়ে বেশ কিছু সাহসী মানুষ মারা যান।

– উনিশ শতকে বার বার উত্থিত হয় এই কালো কুকুরের প্রসঙ্গ। লেখা হতে থাকে ‘ব্ল্যাক ডগ’-সংক্রান্ত অসংখ্য কাহিনি। ক্রমশ বিপুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘ব্ল্যাক ডগ’।

– বিংশ শতকের প্রথম থেকে প্যারানর্মালবাদীরা বিভিন্ন গবেষণা প্রকাশ করতে শুরু করেন ব্ল্যাক ডগ নিয়ে। ১৯৩৮-এ এথেল রুডকিন নামের জনৈক কিংবদন্তি-গবেষিকা সংহতভাবে এই রহস্যময় কুকুর-সংক্রান্ত তথ্যগুলিকে একত্র করতে শুরু করেন এবং দেখেন, লিঙ্কনশায়ার শহরের আশপাশের এলাকাতেই বার বার দেখা গিয়েছে এই কুকুরটিকে। রুডকিনের এই গ্রন্থের পরেও বার বার দেখা যায় কুকুরটিকে। ২০০১ সালেও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয় ব্ল্যাক ডগ-সংক্রান্ত সংবাদ। কিন্তু এতদিনে খেলা ঘুরে যায়। শয়তানের দোসর বা ভুতুড়ে কুকুর হিসেবে পরিচিত ব্ল্যাক ডগ দেখা দেয় ত্রাণকর্তা হিসেবে। তার কৃপায় নাকি অনেকের প্রাণ রক্ষা হয় বলে জানা যেতে থাকে। তাকে ‘গার্ডিয়ান এঞ্জেল’ বলেও অভিহিত করতে শুরু করেন অনেকে। তবে এটা কেউই অস্বীকার করেননি যে, মৃত্যুর সঙ্গেই এই কালো কুকুরের বেশি সম্পর্ক।

এই রহস্যময় কালো কুকুরটির দু’টি রূপকেই দেখিয়েছেন হ্যারি পটার-স্রষ্টা জে কে রাওলিং। ‘হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য প্রিজনার অফ আজকাবান’ উপন্যাসে এক বিচিত্র পরিস্থিতিতে হ্যারির সামনে উদয় হয় এক রহস্যময় কালো কুকুর। হ্যারি তাকে মৃত্যুর দোসর বলেই মনে করে। কিন্তু পরে জানা যায়, কুকুরটি আসলে হ্যারির গডফাদার সিরিয়াস ব্ল্যাকের ছদ্মবেশ। আজকাবানের জেলখানা থেকে পলাতক সিরিয়াস আইনের চোখে ভয়ঙ্কর অপরাধী, সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত। আসলে সে ষড়যন্ত্রের শিকার এক ভালমানুষ। হ্যারির কাছে সে সত্যিই গার্ডিয়ান এঞ্জেল। ব্রিটিশ লেখিকা রাওলিং তার দেশের এক ডার্ক মিথকে যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, তাতে বিস্মিত হতে হয়।

আমাদের দেশে অবশ্য কালো কুকুর নিয়ে তেমন রহস্য নেই। কেবল এটা মনে রাখা দরকার, এ দেশে কালো কুকুর কালভৈরবের বাহন। কাল ভৈরব কাল বা সময়ের শাসক। তিনি শিবের প্রতিনিধি। সেভাবে দেখলে তিনিও এক রহস্যময় সত্তা। কিন্তু কালো কুকুরের সাহেবি রহস্যময়তা থেকে তিনি ও তার বাহন বহুদূরে।

Related Posts

Leave a Reply