May 3, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular ব্যবসা ও প্রযুক্তি রোজনামচা

‘হারানোর’ বিশাল ঢেউ-এ মুখ থুবড়ে পড়েছে গোটা চীন 

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

রোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপে চীনে প্রায় দুই মাসের অধিক সময় শাটডাউন ছিল। ফলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। সংকুচিত হয়েছে চাকরির বাজার। এ সময় অনেক শ্রমিক এবং তরুণ গ্রাজুয়েটরা তাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে। বেকারত্বের বোঝা মাথার চাপবে এমনটাই আশঙ্কা তাদের।

অর্ধেক বন্ধ এবং অন্ধকার একটি বিল্ডিংয়ের সামনে বসে অপেক্ষা করছেন হুয়াং জিউফেং। তিনি বলছিলেন, ‘এটি একটি ধাতব পাত তৈরির কারখানা। করোনা পরিস্থিতির কারণে এখন কারখানায় হাতে গোনা কয়েকজন কর্মচারী রয়েছে। বস ইউরোপে আটকে আছেন। কয়েক মাস ধরে তাদের আমেরিকান গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো নতুন ক্রয় আদেশ নেই।’

কারখানাটির মালিক ইউলিয়া ইয়াকুবোভা ইতালি থেকে বলেন, ‘এখন অবধি আমরা কারখানাটি চালিয়ে যেতে এবং কর্মীদের বেতন প্রদান করতে সক্ষম হওয়ার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদনের কোনো অর্ডার পাইনি। এখন আমি শেষ যে কাজটি করতে পারি তা হল কারখানাটিতে আগুন লাগানো বা কর্মচারীদের ছাঁটাই করা।’

চীনের পূর্ব উপকূলের নিকট জিয়াংসুতে একটি শিল্প পার্কে অবস্থিত রেলপাত এবং দোকানের র‌্যাক তৈরির কারখানাটির নাম ‘লোটাস ইউনাইটেড’। বর্তমানে কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দুটি উৎপাদন ফ্লোরে ১০০ জন শ্রমিক কাজ করতো। এখন হাতে গোনা কয়েকজনকে রেখে বাকি সবাইকে ছাঁটাই করা হয়েছে।

ভাইরাসজনিত শাটডাউন কারখানাটিকে মুষ্টিমেয় কিছু দক্ষ শ্রমিক রেখে বাকিদের ছাঁটাই করতে বাধ্য করেছে। যে শ্রমিকেরা এখনো চাকরি হারাননি তাদেরও বেতন কমানো হয়েছে ৫০ শতাংশ।

এখনো চাকরিতে বহাল থাকা সৌভাগ্যবান শ্রমিক হুয়াং এর ৫০ শতাংশ বেতন কাটা হয়েছে। তিনি এখন মাসে মাত্র ২০০ ডলার এর সমতুল্য বেতন পাচ্ছেন। হুয়াং বলছিলেন, ‘এখন যে অর্থ উপার্জন করতে পারি তা কেবলমাত্র প্রাথমিক জীবনধারণের নিশ্চয়তা দিতে পারে।’ তার পরিবারও বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন কারণ তার স্ত্রীও কারখানায় কাজ করেন।

এটা চীনে শ্রমিকদের চাকরি হারানোর বিশাল তরঙ্গের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ মাত্র। লোটাসের মতো ব্যক্তি মালিকানাধীন সংস্থাগুলো চীনে সর্বাধিক নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করে। তবে তারা এই শাটডাউনে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

চীনা নেতাদের জন্য, আসন্ন বেকার সঙ্কট মোকাবেলা হবে দুঃস্বপ্নের মতো। এরই মধ্যে ছোট কিন্তু দৃশ্যমান বিক্ষোভ এপ্রিলে উহান শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল। একটি শপিং সেন্টারের শ্রমিকরা বাসা ভাড়া দিতে অসমর্থ হওয়ায় প্রতিবাদ করতে জড়ো হয়েছিল।

চীনের শহরগুলোতে সরকারী হিসাবে মোট বেকারের সংখ্যা এরই মধ্যে সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। আগামী দিনগুলোতে এটি আরো অনেক বেশি বাড়বে বলে পূর্বাভাস আছে।

বেইজিংয়ের সরকারি হিসাব বলছে, শহরাঞ্চলে এ বছর পাঁচ শতাংশেরও বেশি মানুষ নতুন করে বেকার হয়েছেন। গত মার্চ মাসে বেকারত্বের হার ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এক মাস পর এপ্রিলে তা বেড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। শহরাঞ্চলে প্রায় দুই কোটি ২৭ লাখেরও বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন।

চীনের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং গত মাসে সমস্যার মাত্রা স্বীকার করে বলেছিলেন, ‘সত্য যে এপ্রিল মাসে এই সংখ্যাটি এরই মধ্যে ৬ শতাংশ অতিক্রম করে গেছে। কর্মজীবনই এখন মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ। এটি সকল পরিবারের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।’

সামনের দিনগুলোতে চীনকে আরো বড় বিপদের মুখোমুখি হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই বছরই দেশটিতে রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শেষ করবেন। প্রায় ৮৭ লাখ শিক্ষার্থী চাকরি জীবনে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হবেন। ফলে শিগগিরই চীনের চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা আরো বাড়বে, বেকার হয়ে পড়বেন আরো অনেক মানুষ।

Related Posts

Leave a Reply