May 5, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular রোজনামচা

ট্রাম্পের কপাল পুড়ল, ১৭৫ বছরের প্রথা ভেঙে ‘সায়েন্টিফিক আমেরিকান’এনার সমর্থনে 

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান দুই দলের প্রার্থীর মধ্যেকার আক্রমণাত্মক বক্তব্য/মন্তব্যে তৃতীয় বিশ্বের রাজনৈতিক উত্তেজনাকেও ছাড়িয়ে যেতে বসেছে। উদ্ভট সব বক্তব্য বিশ্বে আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করোনা ভাইরাসের ভয়ংকর প্রকোপকে আমলে না নেয়ার খেসারত দিচ্ছেন সাধারণ আমেরিকানরা।

ঠিক একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তণের ভয়াবহতাকেও তামাশা হিসেবে দেখছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সর্বশেষ তিনি মন্তব্য করলেন যে, বিজ্ঞান বলতে কিছু নেই। বিজ্ঞানীরা নিজ মতলবে যা খুশী তাই বলছেন। বিজ্ঞানীদের কোন পূর্বাভাসকেও তিনি বাস্তবসম্মত মনে করেন না।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দাবানলে ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন এবং ওরেগণের বিস্তীর্ণ জনপদ পুড়ে ছাই হয়ে যাবার সাথেও পরিবেশ-দুষন অথবা জলবায়ু পরিবর্তনের যে আশংকা করা হচ্ছে তার সাথে কোনই সম্পর্ক নেই বলেও জোর গলায় বলেছেন ট্রাম্প। এ অবস্থায় বিবেকসম্পন্ন আমেরিকানরাও নিজেদের অসহায় ভাবছেন। বিজ্ঞানীরা অবাক বিস্ময়ে ট্রাম্পের এমন মন্তব্য/মতামত হজম করতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে এ ধরনের উদ্ভট অভিমতের বিপক্ষে শক্ত অবস্থানের ঘোষণা দিল ‘সায়েন্টিফিক আমেরিকান’ ম্যাগাজিন।আমেরিকার বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন, আবিষ্কার সম্পর্কিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশের অন্যতম অবলম্বন হচ্ছে এই ম্যাগাজিন। ১৭৫ বছর যাবত এটি আমেরিকাসহ সারাবিশ্বের মেধাবি বিজ্ঞানীদের ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু বলেও মনে করা হয়। সেই ম্যাগাজিন তার ১৭৫ বছরের রীতি ভেঙ্গে এই প্রথম একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিতে যাচ্ছে।

আসছে অক্টোবর সংখ্যায় ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী যো বাইডেনকে সমর্থন জানিয়ে তারা প্রচ্ছদ কাহিনী করছেন বলে এর সম্পাদকমন্ডীল প্রধান লোরা হেলমুথ ১৫ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, মঙ্গলবার তারা অনলাইনেও বাইডেনকে কেন সমর্থন দিচ্ছেন, সে ব্যাখ্যা প্রদান করে সম্পাদকীয় লিখেছে।

২০১৬ সালের নির্বাচনের সমাবেশেও ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজ্ঞানীদের অবদমন করে নানা উদ্ভট মন্তব্য করেছেন। বিজ্ঞানীরা গবেষণার নামে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থের অপচয় ঘটাচ্ছেন বলেও সে সময় মন্তব্য করেছিলেন। তবে ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিপক্ষের প্রার্থী হিলারীকে সমর্থন দেয়নি মাগাজিনটি। তবে বিজ্ঞানীরা সে সময় ট্রাম্পের মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে রাস্তায় বিক্ষোভ করেছিলেন। এবার তারা আমেরিকা তথা সারাবিশ্বের মানুষের স্বার্থে সুস্পষ্ট একটি অবস্থান নিতে বাধ্য হলেন বলে উল্লেখ করেছেন লোরা হেলমুথ।

‘মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, অর্থনীতি চাঙ্গা এবং পরিবেশ বিপর্যয় রোধে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন যো বাইডেন। এজন্যে বিজ্ঞানীরা মানবতার স্বার্থে বাইডেনকে জয়ী করতে কাজের অঙ্গিকার করেছেন’-বলেছেন লোরা হেলমুথ। ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট হলে মানবতা বিপন্ন হতে বাধ্য। পরিবেশ দুষণের ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ তিনি নেবেন না।

করোনায় যেভাবে দু’লাখের বেশী আমেরিকানের প্রাণ যাচ্ছে, ঠিক একইভাবে লাখ লাখ মানুষকে নিশ্চিত মৃত্যুবরণ করতে হবে। ভিটেমাটি ছাড়া হতে হবে কোটি আমেরিকানকে। সচেতন নাগরিক হিসেবে এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিকে স্বাগত জানানো সমীচিন হবে না বলেই যো বাইডেনকে বিজ্ঞানীরা অকুন্ঠ সমর্থন দিচ্ছেন। ‘জেনে-শুনে বিষ পান করতে পারেন না বিজ্ঞানীরা’, শুধু তাই নয়, সচেতন নাগরিকের প্রতিও তারা উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন ট্রাম্পকে ভোট না দিতে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করলেও সচেতন বিশ্ব তা মনে করে না। ১৩টি দেশে পরিচালিত এক সমীক্ষায় ফলাফল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে আসার পর দেখা যায়, মাত্র ১৩% মানুষ ট্রাম্পের এই দাবিকে সত্য বলে মনে করে। ৮৫% বলেছেন যে, ট্রাম্পের পদক্ষেপ ছিল খুবই দুর্বল এবং এর খেসারত দিচ্ছে গোটা জাতি। পিউ রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত এই সমীক্ষায় আরো উদঘাটিত হয়েছে যে, করোনা রোধে ট্রাম্পের অগোছালো পদক্ষেপ আমেরিকার আন্তর্জাতিক নেতৃত্বকেও আস্থাহীন করেছে।

বিদেশীরা এখন আমেরিকার কোন কাজেই আস্থা রাখতে সক্ষম হচ্ছেন না। ভরসা পাচ্ছে না মানবতার কল্যাণকর কোন কাজেই। এমন অবস্থা কাটিয়ে উঠা আদৌ সম্ভব হবে কিনা-সে সংশয়ও রয়েছে জনমনে। দুই দশক আগে থেকেই পিউ রিসার্চ সেন্টার বিশ্বব্যাপী এমন সমীক্ষা চালিয়ে আসছে। তবে এবারের সমীক্ষায় আমেরিকার নেতৃত্বে সবচেয়ে বেশি নাখোশ জার্মানীরা। বার্লিনে জার্মান মার্শাল ফান্ড নামক থিঙ্কট্যাংকের সিনিয়র ফেলো সুধা ডেভিড-উইলপ বলেছেন, ‘আমি এখনও আশাবাদি যে, আমেরিকা এমন অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। তবে পুনরায় যদি ট্রাম্প বিজয়ী হন, তাহলে সে প্রত্যাশা কখনোই পূরণ হবে না।’

এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি লংঘন করে ১৩ সেপ্টেম্বর নেভাদার হেন্ডারসন সিটির একটি অডিটরিয়ামে ৫০ জনের স্থলে ৫৬০০ জন নিয়ে নির্বাচনী সমাবেশ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এজন্যে ঐ অডিটরিয়াম কর্তৃপক্ষকে সিটি প্রশাসক ৩ হাজার ডলার জরিমানা করেছে।

উল্লেখ্য, করোনার কারণে নেভাদা স্টেটেও স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর রয়েছে। অর্থাৎ ৫০ জনের বেশী লোক জড়ো করা যাবে না। মাস্ক পরতে হবে সকলকেই। বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব। কিন্তু ট্রাম্পের ঐ নির্বাচনী সমাবেশে কোনটিই মান্য করা হয়নি। ট্রাম্প নিজেও মাস্ক পরেননি। কাউকে পড়তে নির্দেশও দেননি। ট্রাম্পের এমন আচরণে ক্ষোভ জানিয়ে নেভাদা স্টেট গভর্ণরর স্টিভ সিসোলক ঐদিনই বলেছেন যে, নিজের স্বার্থে ট্রাম্প যা করছেন তা শুধু আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনই নয়, মানুষের জীবনকে বিপন্ন করারও সামিল। এমন আচরণকে বরদাশত করা উচিত নয়।

Related Posts

Leave a Reply