May 2, 2024     Select Language
Editor Choice Bengali KT Popular সফর

সময় যেখানে আজও থমকে

[kodex_post_like_buttons]

কলকাতা টাইমস :

বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ কতৃক প্রতিষ্ঠিত তাঁরই নাম অনুযায়ী স্বীকৃত মুর্শিদাবাদে থমকে গিয়েছে সময়। হবে নাই বা কেন! ব্রিটিশ শাসনের আগে পর্যন্ত বাংলা, বিহার ও ওড়িশার রাজধানী হিসেবে পরিচিত এই জেলা প্রাচীন পদচিহ্নের ধারক ও বাহক। তাই এই স্থান পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সেরা পর্যটন কেন্দ্র।

ইতিহাস

ভাগীরথী নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই সভ্যতার কাহিনী বহুল প্রচলিত। ১৭১৭ সালে বাংলার রাজধানী হয় মুর্শিদাবাদ। যার অন্যতম নবাব ছিলেন সিরাজউদ্দৌলা। এমন এক নবাব, যিনি লর্ড ক্লাইভের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে বশ্য়তা স্বীকারের থেকে মৃত্যু বরণ শ্রেয় বলে মনে করেন।

পলাশীর প্রান্তরে সিরাজউদ্দৌলা ফৌজের সঙ্গে ব্রিটিশ ব্রিগেডের মরণপণ যুদ্ধ শুধু বাংলা নয়, গোটা ভারতের ভবিষ্যত রচনা করেছিল। ১৭৫৭-র ওই যুদ্ধ হেরেছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ। ২০০ বছরের পরাধীনতার নাগপাশে শৃঙ্খলিত হয়েছিল ভারত। ঠিক ছ-বছর পর অর্থাৎ ১৭৭৩ সালে মুর্শিদাবাদের পরিবর্তে কলকাতাকে বাংলার রাজধানী ঘোষণা করে প্রবল ইংরেজ। প্রাচীন বাংলার অন্যতম প্রাচীন এই স্থান নিজ ঐশ্বর্য্যে ভাস্বর ছিল তখনও। রয়েছে এখনও।

কীভাবে পৌঁছবেন

সড়ক ও রেলপথে কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদের দূরত্ব যথাক্রমে ২৩০ ও ১৯৩ কিলোমিটার। সরকারি বাতানকুল কিংবা বেসরকারি বাসে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে জেলার সদর শহর বহরমপুর পৌঁছতে সময় লাগার কথা সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। অন্যদিকে ট্রেনে কলকাতা থেকে বহরমপুর পৌঁছতে সময় লাগে সাড়ে তিন থেকে পৌনে চার ঘণ্টা।

মুর্শিদাবাদ ঘুরতে হলে বহরমপুরকে বেস পয়েন্ট বানাতেই হবে। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় মিশ্র সংস্কৃতির এই শহর থেকে সিরাজ-ক্লাইভের স্মৃতি বিজড়িত দালানে পৌঁছতে গাড়ি বুক করতেই হবে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক মুর্শিদাবাদের সেসব প্রাচীন ঐতিহ্য।

হাজারদুয়ারি প্যালেস

১০০০টি দরজা (৯০০টি আসল)। তাই এই প্রাসাদের নাম হাজারদুয়ারি। সাল ১৮৩৭। নবাব সিরাজউদৌল্লার এক সময়ের আজ্ঞাবহ (বিশ্বাসঘাতক ঘাতক রূপে বহুল প্রচলিত) মীর জাফরের বংশধর নবাব নাজিম হুমায়ুন জাহের নির্দেশে ১১৪টি ঘর ও ৮টি গ্যালারি সম্বলিত এই প্রাসাদটি তৈরি করেন ডানকান ম্যাকলিওড। হাজারদুয়ারি প্যালেসের ভিতর তৈরি করা মিউজিয়ামে বাংলার প্রাচীন নবাবদের নিদর্শন রাখা হয়েছে। চিন থেকে আমদানি করা হাতির দাঁত দিয়ে এই প্রাসাদের কারুকার্য তৈরি করা হয়েছে।

হাজারদুয়ারি প্যালেসের উল্টো দিকে ১৮৪৭ সালে নির্মিত নিজামাত ইমামবাড়া বাংলা তথা ভারতের অন্যতম বৃহৎ। নবাব নাজিম মনসুর আলি খান ফেরাদুন জাহ কতৃক নির্মিত এই ইমামবাড়ার আশাপাশের বাছছাওয়ালি তোপ, দক্ষিণ দরওজা, ছক দরওয়াজা, ঘড়ি ঘর এই স্থানের অন্যতম আকর্ষণ।

মদিনা মসজিদ

নিজামাত ইমামবারার ঠিক সামনে ক্ষুদ্রকায় এই মসজিদ মায়ের ইচ্ছায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা কারবালা থেকে মাটি এনে তৈরি করেছিলেন বলে কথিত আছে। সাদা এই মসজিদ চার গম্বুজ বিশিষ্ট।

জাফরাগঞ্জ সমাধিস্থল

হাজারদুয়ারি থেকে দেড় কিলোমিটার উত্তরে দেউরির উল্টো দিকের এই সমাধি ক্ষেত্রে ১০০০ জনকে কবর দেওয়া হয়েছে। নবাব সিরাজউদৌল্লার এক সময়ের আজ্ঞাবহ (বিশ্বাসঘাতক ঘাতক রূপে বহুল প্রচলিত) মীর জাফর ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদেরও এখানেই কবরস্থ করা হয় বলে শোনা যায়।

মতি ঝিল

হাজারদুয়ারি থেকে তিন কিমি উত্তর এবং লালবাগ থেকে এক কিমি দক্ষিণে অবস্থিত এই স্থান ১৭৫০-৫১ খ্রিস্টাব্দে নবাব আলিবর্দি খাঁয়ের বড় জামাই তথা ঘসেটি বেগমের (মেহেরুন্নেসা) স্বামী নবাব নওয়াজেস মহম্মদ খাঁ তৈরি করেন। ঝিলের পাড়ে সাংহী বা শাহী দালান ওই স্থানের শোভা বাড়িয়েছে। বর্তমানে দালানটি নদীবক্ষে চলে গেলেও রয়ে গেছে তার কিছু ভগ্নাবশেষ। কথিত আছে, ওই দালানেই নাকি নবাব সিরাজ বিরোধী ঘসেটি বেগম, মীর জাফর, জগৎ শেঠের সঙ্গে পলাশী যুদ্ধ জয়ের নকশা তৈরি করেছিলেন লর্ড ক্লাইভ। নবাব সিরোজউদ্দৌলার একটি সাত ফুটের মূর্তি এই স্থানের আকর্ষণ বাড়ায়। ৪৬ একর জমির উপর তৈরি মতি ঝিল দেখভালের দায়িত্ব মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের।

কাঠগোলা প্যালেস

ইতিহাস অনুযায়ী বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা সাম্রাজ্যের অন্যতম বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পরিচিত জগৎ শেঠের এই প্রাসাদ মহিমপুরে অবস্থিত। পেশায় ব্যবসায়ী মাওয়ারি সম্প্রদায়ের জগৎ শেঠের নাকি আমোদের স্থান ছিল কাঠগোলা প্যালেস। কথিত আছে, নবাব সিরাজের মৃত্য়ুর জন্য দায়ী এই ব্যবসায়ীর আনুগত্যে খুশি হয়ে তাঁকে নাকি এই প্রসাদ উপহার দিয়েছিল ইংরেজ। প্রসাদের পাশে সুবিশাল পুকুর এবং সেটিকে ঘিরে রাখা সুদীর্ঘ বাগান মুর্শিদাবাদের অন্যতম আকর্ষণ। জগৎ শেঠের কুঠিবাড়ির অদূরে অধিরথ মন্দিরও পুরনো সময়ের ধারক ও বাহক। ১৮৭৩ সালে জিয়াগঞ্জের কোটিপতি ধনপত সিং দুগার এবং লক্ষ্মীপত সিং দুগার মন্দিরটি তৈরি করেন।

জাহানকোষা

জাহানকোষা বা পৃথিবী ধ্বংসকারী। কাটরার দক্ষিণ-পূর্বে তোপখানায় রয়েছে এই ঐতিহাসিক কামান। ১৭ ফুট দৈর্ঘ্য, ৫ ফুট পরিধি ও ২১২ মণের এই কামানে বিস্ফোরণের জন্য ১৭ কিলো বারুদের প্রয়োজন হয়। কামানের গায়ে পিতল ফলকে ইরানি ভাষায় লেখা থেকে জানা যায়, ১৬৩৭ সালে মোঘল বাদশাহ শাহজাহানের রাজত্বে তৈরি হয় এই কামান। বাংলার রাজধানী স্থানান্তরের সময় নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে জাহানকোষা নিয়ে আসেন বলে শোনা যায়।

পলাশির প্রান্তর

২৩ জুন ১৭৫৭। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে যুদ্ধে হারিয়ে বাংলার দখল নিয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। সেই যুদ্ধক্ষেত্র এবং শহিদ স্মারক মুর্শিদাবাদের সেরা আকর্ষণ।

এছাড়াও ভাগীরথী নদীর তীরে নবাব আলিবর্দি খাঁ কতৃক নির্মিত খোশ বাগ, রোশনি বাগ, মহারাজা চন্দ্র নন্দীর কাশেম বাজার মুর্শিদাবাদকে আরও ঐতিহাসিক বানিয়েছে। সবমিলিয়ে প্রাচীন ইতিহাস বহনকারী এই স্থান বাংলা তথা ভারতের গর্ব বললে ভুল হবে না।

Related Posts

Leave a Reply