April 28, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular শিল্প ও সাহিত্য

নোবেল ও গরু 

[kodex_post_like_buttons]

ভাবুক বাবুর ভাবনা 

আমি ভাল প্রেমে পড়তে পারি। না, ভাল কথাটা লেখা ভাল হল কি না, জানি না। তবে সেই ছোটবেলা থেকে যৌবন প্রাপ্তির আগেই বত্রিশটা ল্যাং খাওয়া একটা বিশ্ব রেকর্ড হতে পারে। পিঠে জুতোর বাড়ি, গালে চড়-থাপ্পড় খাওয়ার ব্যাপারটা আমার মোটামুটি অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। দেবী “সরস্বতী” আমায় তেমন বিদ্যে-বুদ্ধি দেননি। দোষের মধ্যে বানানে আমি একটু কাঁচা ছিলাম। “সরস্বতী” বানানটা নিয়ে চিরকাল বড় দোটানায় থেকেছি, তাই বোধহয় বাগেশ্বরী আমাকে মুখ্যু করে রেখে দিলেন। তবে এমন একটা কুবিদ্যা মাথায় ঢুকিয়ে দিলেন যার খেসারত আমাকে এখনো দিতে হচ্ছে। একটু খুলে বলি।

তখন আমার কৈশোর। যখন-তখন প্রেমে পড়ে যাওয়াটা তখন আমার কাছে জলভাত। দেবী “সরস্বতী” একে তো অমন ডাকসাইটে সুন্দরী, তার মধ্যে আবার ভাল বাজনা বাজান- যদি প্রেমে পড়ে যাই, এই ভয়ে ওঁর মুখের দিকে তাকাতে পারতাম না। কিন্তু “সরস্বতী” পুজোর দিন আমি গার্লস স্কুলের আশপাশে ঘুরঘুর করি। খোলা চুলে মেয়েরা অকারণ হেসে স্কুলে ঢুকে পড়ছে। আহা! যেন সাক্ষাৎ “সরস্বতী”। অহো, কী রূপ, কী রূপ! কিন্তু স্কুলের দরজায় দিদিমনিরা ডান্ডা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আমার মতো কোনো মাছি গলতে দেবেন না। সেই দুঃখ আমার আজও যায়নি। ক্লাস এইটে পড়ার সময় দেবী আমাকে বানান ভুল করার শাস্তি দিলেন, আমাকে কালিদাস বানানোর চেষ্টা করলেন, আমার মাথায় পদ্য লেখার ভূত ঢুকিয়ে দিলেন। “সরস্বতী” পুজোর সকালে এক অপরূপার হাতে গুঁজে দিলাম এক চিরকুট। তাতে লেখা- প্রিয়তমা ঊর্মি/ আমি তব ঘূর্ণি। এর পরে কী কী ঘটেছিল তা আর নিজের হাতে লেখা যাবে না, খুব লজ্জা করবে। তবে মাথায় ঢালা ঘোলটা বেশ চেটে চেটে খেয়ে ছিলাম।

রাজামশাইকে গান শুনিয়ে গুপীর যা অবস্থা হয়েছিল, আমার অবস্থা তার থেকেও খারাপ হল। কোনও এক মাস্টারমশাইয়ের পরামর্শে এক বছর আমাকে তুলসি আর বেলপাতা বাটা খাইয়েছিলেন আমার গর্ভধারিণী। কিন্তু তাতে কি আর প্রেমরোগ সারে? বয়স যত বেড়েছে, সেই রোগও তত বৃদ্ধি পেয়েছে। সে কি আর আমার দোষ? ও তো বানান ভুলের খেসারত দিয়ে দেবীর অভিশাপ কুড়নো। কলেজে পড়ার সময় অপরাজিতাকে দেখেই লিখে ফেললাম- অপরাজিতা অপরাজিতা/ তুমিই আমার প্রথম মিতা। ব্যাস। মেয়েদের নিয়ে ছড়া লেখার সেখানেই ইতি। কেন? তা বলা যাবে না। সেই দুঃসময়ে আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল আমার পরম বন্ধু অশেষ ওরফে রণ। ও বলল, মানুষকে নিয়ে ছড়া লিখিস কেন? ওতে রিস্ক আছে। গরু, মোষ, ছাগল, ভেড়াদের নিয়ে লেখ, ওরা তো আর কাউকে নালিশ করতে যাবে না। আর করলেই বা, শুনছে কে?

রণের এই কথায় খুবই অসম্মানিত বোধ করেছিলাম। একজন উঠতি কবি, যে ভবিষ্যতে নোবেল পুরস্কারও পেতে পারে, তার প্রতি এই উপদেশ যে আসলে শ্লেষোক্তি তা বোঝার মতো বুদ্ধিটুকু তখনও আমার মাথায় ছিল। অভিমানের বশে পদ্য লেখা ছেড়ে দিলাম। রণের কথাটা কিন্তু মাথায় ঢুকে গিয়েছিল। আসা যাওয়ার পথে নয়াগ্রামের খাটালটায় গরুটরু দেখতাম। কিন্তু দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে এমন কোনও চতুষ্পদ খুঁজে পাইনি যাকে নিয়ে পদ্য লেখা যায়। অবশেষে তাকে পাওয়া গেছে। কারণ তিনি চতুষ্পদ থেকে দ্বীপদ হয়েছেন। শুধু তাই নয়, গরুদের নিয়ে একটা রাজনৈতিক দলও খুলে ফেলেছেন, নাম রেখেছেন “ভারতীয় জানোয়ার পার্টি”। মানুষকে জানোয়ার বানানোই এদের কাজ। দ্বীপদদের চতুষ্পদে পরিত করাই এদের মহান ব্রত। নইলে অসুখ তাড়াতে কেউ ঘন্টা বাজায়? চাষির পেটে লাথি মারে? নকল মুদ্রা সঙ্কট তৈরি করে? একের পর দলিতকে হত্যা কওরে, যারা প্রকৃত দ্বীপদ, যারা চতুষ্পদ হতে অস্বীকার করেছে! পুরুতকে মুখ্যমন্ত্রী বানায়? বাপের মেয়েকে পরের ধন বানায়? দেশটাকে বিক্রি করে দেয়?

যাইহোক, দ্বীপদটা গরু না মোষ, বুঝতে না পেরে নামটাই মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায়। হতে পারে অমল, কমল, বিমল বা দিলীপ, প্রদিপ, সুদীপ অথবা গোবর, গণেশ, ধনেস ইত্যাদি ইত্যাদি। যাই হোক, গরুর সঙ্গে গোবর নামটা যায় ভাল তাই দ্বীপদটাকে গোবর নামে ডাকাই ভয়াল।

এতদিন জানা ছিল বাঁদরামি করতে করতে বাঁদর থেকে মানুষ তৈরি হয়েছে। কিন্তু গরু ব্যা ব্যা করতে করতে দু পায়া দৌড়চ্ছে, সেটা কেউ দেখে না দেখলেও আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। কেননা প্রাণীটি নাকি একজন বিজ্ঞানী। এলকেমিস্ট।

সুখের কথা, এতদিন পরে একটা গরুর সন্ধান পাওয়া গেছে যে পদ্য লেখার অনুপ্রেরনা দেয়। রাতে নিশ্চয়ই সেটা কোনও খাটালে থাকে, তবে দিনে মাঝে মাঝেই টেলিভিশনের পর্দায়, খবরের কাগজে মুখ দেখায়। সত্যি বলতে কি, প্রাণীটি গরু না মোষ, সেটা এখনো বুঝে ওঠা যায়নি। বোধহয় গরু আর মোষের মাঝামাঝি কোনও বকচ্ছপ। ইনি রসায়নবিদ হতে পারেন, হতে পারেন জীব বিজ্ঞানী। আর কী কী হতে পারেন সে ব্যাপারে নানা মুনির নানা মত। তিনি বলেছেন গরুর দুধে বিশেষ পরিস্থিতিতে সোনা পাওয়া যায়। তারপর থেকে নাকি সোনার দোকানে গোয়ালাদের লম্বা লাইন পড়তে শুরু করেছে। সত্যিই গোদুগ্ধে সোনা মেলে কি না সেটা গরুরা জানে নিশ্চয়ই। আর কোনো গরু যদি নিজ মুখে সে কথা বলে তবে তো আর অবিশ্বাস করার কিছু থাকে না।

এই গোবরবাবু এখন একটু বিপদে আছেন। জানোয়ার পার্টিতে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে এত শুভেন্দু এসে গেছে যে তিনি নাকি খুঁটি উপড়ে পালাতেই পারেন! তাকে দোষ দেওয়া যায় না। পালে বাঘ পড়লে গরুর যে কী দশা হয় তা আমরা জানি।

স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের কপালে গোবরবাবু জুতো ছোড়ার ব্যাবস্থা করেছিলেন। সিঙুরে মেঘ দেখা যাচ্ছে, আবার। এদিকে শোভন আবার অশোভন হওয়াতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন প্রাণীটি! কিন্তু খড়গপুরের খর্গ কার পিছনে ঢুকবে, তা প্রাণীটি না জানলেও, আমরা জানি।

তো, আমি আবার পদ্য লেখা শুরু করেছি। বন্ধু রণের কথা মাথায় রেখে আবার আমি পদ্য লেখা শুরু করেছি। শরৎবাবুকে স্মরণ করে চতুষ্পদদের নিয়েই আজকাল লিখছি। আমার তো গোবরবাবু আছেই, তবে? যে গরু আমাকে পদ্য লেখার উৎসাহিত করেছে,

এবার নাকি বঙ্গদেশে

রাজ করবে মোষ?

পদ্ম ডাটা চিবিয়ে কথা

বলছে গোবর ঘোষ!

  আর একটি পদ্য-

গোবর ঘোষ, গোবর ঘোষ

গোমুত খেয়ে হলেন মোষ!

 নোবেল পুরস্কার পাওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

Related Posts

Leave a Reply