May 4, 2024     Select Language
৭কাহন Editor Choice Bengali KT Popular শারীরিক

করোনা-র মত ইতিহাসের কুখ্যাত সব ভাইরাস

[kodex_post_like_buttons]
কলকাতা টাইমস :
রোনাভাইরাস পৃথিবীকে নিজের আতঙ্কে অতিষ্ঠ করে রেখেছে। তবে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। নিয়মিতই মানুষকে নিত্যনতুন প্রাণঘাতী ভাইরাসের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক কয়েকটির কথা জানান হল এখানে –

ইবোলা ভাইরাস
প্রথম ধরা পড়ে ১৯৭৬ সালে। কঙ্গোর ইবোলা নদীতীরবর্তী অঞ্চলে। সে কারণেই এমন নাম। এতে আক্রান্ত হলে প্রথম উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয় মাথা ব্যথা ও গলা ব্যথা। তারপর জ্বরের সঙ্গে শুরু হয় শরীর থেকে রক্তপাত; এমনকি চোখ থেকেও ঝরতে পারে রক্ত। অকেজো হতে থাকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। অলৌকিক কিছু না ঘটলে মৃত্যু নিশ্চিত। এখনো এর কোনো চিকিত্সা আবিষ্কার করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। সাব সাহারান আফ্রিকায় হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে এর প্রকোপে। পাঁচ রকমের ইবোলা ভাইরাস আছে। নামকরণ হয়েছে অঞ্চল অনুযায়ী—জায়ার, সুদান, তাই ফরেস্ট, বান্দিবাইগো ও রেস্টন। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর জায়ারেরটা। তাতে মৃত্যুর আশঙ্কা ৯০ শতাংশ। আশার কথা হলো, ইদানীং আর কারো ইবোলায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায় না। সর্বশেষ কেউ আক্রান্ত হয়েছিল ২০১২ সালে, উগান্ডায়।

সার্স ভাইরাস
এই ভাইরাসের আক্রমণ হয় ২০০২ সালের নভেম্বরে, চীনের দক্ষিণের গুয়াংদং প্রদেশে। ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত, বিশেষ করে হংকং, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম ও কানাডায়। পুরো নাম ‘সিভিয়ার অ্যাকুইট রেসপিরেটরি সিনড্রোম’। সংক্ষেপে ‘সার্স’। প্রাথমিক উপসর্গ অনেকটা আর দশটা ফ্লুর মতোই। জ্বর, গা ও গলা ব্যথা, ভয়ানক ক্লান্তি। আক্রান্ত অনেকেরই হতো আমাশয়। পরের দিকে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া। তা থেকে হতে পারে মৃত্যু। এই ভাইরাস দাপট চালিয়েছিল ২০০৩ সালের জুলাই পর্যন্ত। আক্রান্ত হয় ১৭টি দেশের আট হাজারেরও বেশি মানুষ। মারা যায় প্রায় আট শ। অবশ্য দ্রুতই এই ভাইরাস মোকাবেলা করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সাল থেকে সার্সে আক্রান্ত হওয়ার আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ২০১৭ সালে এক দল চীনা গবেষক এই ভাইরাসের উত্পত্তির রহস্য ভেদ করেন। জানান এটি এসেছে ইউনান প্রদেশের এক প্রজাতির বাদুড় থেকে।

মার্স ভাইরাস
প্রথম কারো শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত করা হয় ২০১২ সালে। সৌদি আরবে। সে বছরেরই সেপ্টেম্বরে কাতারে আরেকজনের শরীরে পাওয়া যায় একই ভাইরাসের অস্তিত্ব। নভেম্বরে দুই দেশেই পাওয়া যায় আরো অনেকের দেহে। নতুন ধরনের এই ভাইরাসের নাম দেওয়া হয় ‘মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম’। সংক্ষেপে ‘মার্স’। পরের কয়েক বছরে এই ভাইরাস ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে ২০টিরও বেশি দেশে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছাড়াও আছে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, অস্ট্রিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে চিহ্নিত করে ‘ভবিষ্যতে মহামারি ঘটাতে সক্ষম’ ভাইরাস হিসেবে। শুরু করে এটি নিয়ে গবেষণা। তবে এতে কতজন আক্রান্ত হয়েছে আর কতজন মারা গেছে তা জানা যায় না। কারণ নিজের দেশে এই ভাইরাসের আক্রমণ হয়েছে তা প্রায় কোনো আক্রান্ত দেশই স্বীকার করতে চায় না। তাই বেশির ভাগ দেশই চেপে গেছে সঠিক তথ্য।

স্মলপক্স
কয়েক হাজার বছর ধরে মানুষের মৃত্যু ঘটানোর আরেক ভাইরাস এটি। এটি ছড়িয়েছে মূলত ইউরোপ থেকে। হাজার বছর ধরে সেখানকার মানুষ ভাগ্যের অন্বেষণে, বাণিজ্যের প্রসার কিংবা উপনিবেশ স্থাপন করতে পৃথিবীর নানা প্রান্তে গেছে। সঙ্গে নিয়ে গেছে এই ভাইরাস। এর সঙ্গে পরিচিত নয় বলে এতে আক্রান্ত হয়ে ইউরোপের তুলনায় বাইরের মানুষই মারা গেছে বেশি। অনেকে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ শতাংশ আদিবাসীই এতে মারা গিয়েছিল! বিশ্বজুড়ে সব মিলিয়ে মারা গেছে অন্তত ৩০ কোটি! বেঁচে গেলেও বাকি জীবন কাটাতে হতো পক্সের অভিশাপ নিয়ে। গাভর্তি দগদগে ক্ষত নিয়ে। কেউ বা হারাত দৃষ্টিশক্তি। এখন অবশ্য আধুনিক চিকিত্সার কাছে আর পাত্তা পায় না পক্স। সামান্য ফুসকুড়ি ওঠা ও শরীর ব্যথা ছাড়া আর কিছুই হয় না।

লাসা ভাইরাস
১৯৬৯ সালে নাইজেরিয়ার বোর্নো প্রদেশে এক নার্স প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। মারা যান অল্প কিছুদিনের মধ্যেই। এর মধ্যে আরো দুজন একই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন চিহ্নিত হয় ভাইরাসটি। পরে এর নাম দেওয়া হয় লাসা। এক ধরনের ইঁদুর এই ভাইরাস বহন করে। ছড়ায় তাদের বিষ্ঠার আশপাশের বাতাসে। পশ্চিম আফ্রিকায় এই ইঁদুরের বাস, বিশেষ করে সিয়েরা লিওন, গিনি, নাইজেরিয়া ও লাইবেরিয়ায়। এ অঞ্চলে প্রতিবছরই তিন থেকে পাঁচ লাখ মানুষ লাসা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। মারা যাচ্ছে গড়ে পাঁচ হাজার। এতে আক্রান্ত হলে শুরুতে জ্বর ও বুকে ব্যথা হয়। পরে মুখ ফুলে যায়, মস্তিষ্ক প্রদাহ হয়, শ্লেষ্মায় রক্তক্ষরণ হয়। অনেক সময় শ্রবণশক্তিও নষ্ট হয়ে যায়। চিকিত্সা শুরু করতে হয় প্রাথমিক পর্যায়ে; নইলে বিপদ এড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে।

Related Posts

Leave a Reply